বান্ধবীর মা বুকে ঘুষি মেরেছে, ব্যথা করছে, খুন হওয়ার আগে বন্ধুকে ফোন করে কাঁদো কাঁদো গলায় জানিয়েছিলেন অয়ন। এমনটাই দাবি নিহত অয়ন মণ্ডলের বন্ধু রাজু প্রামাণিক ওরফে টাবলুর। রাজু আরও দাবি করেছেন যে, বান্ধবীর মা-ই ডেকে পাঠিয়েছিলেন অয়নকে।
রাজুর কথায়, ‘‘বান্ধবীর মা ডেকে পাঠানোয় দশমীর দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ অয়ন বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছয়। যাওয়ার আগে আমাকে দায়িত্ব দিয়ে যায় বান্ধবীর বাবা বাড়ির দিকে আসছে কি না, তা দেখে জানানোর। এর পর বান্ধবীর বাড়ি থেকে বার বার আমাকে ফোন করেছিল অয়ন।’’
রাজু বলেন, ‘‘আমাকে পাহারা দিতে বলে অয়ন ওর বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিল। মাঝেমাঝেই আমাকে ফোন করে জানছিল, বান্ধবীর বাবা বাড়ির দিকে আসছে কি না। রাত দেড়টা নাগাদ ফোন করে অয়ন বলে, ‘ওর (বান্ধবীর) মা বুকে ঘুষি মেরেছে। বুকে ব্যথা করছে।’ এর মধ্যেই অয়নের বান্ধবীর বাবা বাড়ি ফিরে এলে ও বাড়িতেই আটকে যায়। বাড়ির ছাদে উঠে যায়। বান্ধবীর বাড়ির ছাদ থেকে ও আমাকে হাতও নাড়ে। ৩টের পর আমার সঙ্গে ওর শেষ বার ফোনে কথা হয়।’’
রাজু জানিয়েছেন, এর পর সব বন্ধু মিলে বান্ধবীর বাড়ি থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার কথা বললে অয়ন আসতে বারণ করেন। এর পর রাজু ঘুমিয়ে যান।
পরের দিন সকালে অয়নের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে তিনি অয়নের বাড়িতে পৌঁছন। গিয়ে দেখেন অয়নের বান্ধবীও সেখানে উপস্থিত।
অয়নের বান্ধবী তখন দাবি করেছিলেন যে, রাত আড়াইটে নাগাদ অয়ন তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাজুর দাবি, তিনি তখনই বুঝেছিলেন যে, অয়নের খারাপ কিছু হয়েছে।
রাজুর আফসোস, ‘‘ওই সময় বন্ধুদের নিয়ে সদলবলে অয়নকে উদ্ধার করতে গেলে এমন ঘটনা ঘটত না।’’
রাজুর দাবির পর এই প্রশ্নও উঠছে যে, এত ক্ষণ বান্ধবীর বাড়িতে কী করছিলেন অয়ন?
প্রসঙ্গত, ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরেই ছেলে খুন হয়েছে বলে অয়নের বাবা দাবি করেছেন। একই দাবি রাজুরও।
পাশাপাশি, দশমীর দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ অয়ন বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছেছিলেন দাবি করলেও পুলিশের দাবি, অয়ন সেখানে পৌঁছন রাত ১১টা নাগাদ।
পুলিশ সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, দশমীর রাতে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান অয়ন। মত্ত অবস্থায় তিনি বান্ধবীর হরিদেবপুরের নতুনপল্লির বাড়িতে পৌঁছে বান্ধবী এবং তাঁর মা রুমাকে হেনস্থা করেন, এমনই উল্লেখ রয়েছে পুলিশি রিপোর্টে।
দিদি এবং মাকে হেনস্থা হতে দেখে বান্ধবীরই কিশোর ভাই ইট জাতীয় কোনও ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে অয়নকে খুন করে বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে বান্ধবীর বাবা দীপক ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
অয়নের বান্ধবীর ভাইদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অয়নের মৃতদেহ পাচার করার জন্য ভাড়া করা হয় একটি পণ্যবাহী গাড়ি। এর পরই মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে মগরাহাটের করিমাবাদে ফেলে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকেই পুলিশ অয়নের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতেই নিহত অয়নের বান্ধবী, তাঁর মা রুমা জানা এবং ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় বান্ধবীর বাবা দীপক জানা, বান্ধবীর ভাইয়ের এক বন্ধু এবং পণ্যবাহী গাড়ির চালককে।
শনিবার বেলায় অয়নের বান্ধবীর ভাইয়ের আরও এক বন্ধুকে ওড়িশার জাজপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের পাশাপাশি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এর মধ্যে অয়নের মা দাবি করেন, তাঁদের বাড়ি এসে অয়নের বান্ধবী দাবি করেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা।
অয়নের বান্ধবীর ব্যবহারে কিছু অস্বাভাবিকতাও লক্ষ্য করেছিলেন বলে দাবি করেন অয়নের মা।
পুলিশ সূত্রে খবর, অয়নের মা যে দাবি করেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
সব মিলিয়ে, অয়ন-মৃত্যু রহস্য ক্রমেই জটিল হচ্ছে। পরতে পরতে উঠে আসছে দাবি-পাল্টা দাবি।