দশটি শুঁড়। ২০টি হাত। দেখতে খানিকটা স্ট্রবেরির মতো হলেও রং বেগুনি। সমুদ্রের নীচে এমনই এক ‘দানবের’ খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা।
এই নতুন সামুদ্রিক জীবটির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে আন্টার্কটিকার কাছে দক্ষিণ মহাসাগরের তলায়।
অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার বিজ্ঞানীদের একটি দল আন্টার্কটিকার কাছে গবেষণা চালানোর সময় এই সামুদ্রিক জীবের খোঁজ পেয়েছে।
বিজ্ঞানীদের চোখে ‘ভয়ঙ্কর’ এই প্রজাতির খোঁজ আগে কখনও পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, সামুদ্রিক এই প্রাণীটিকে দেখলে মনে হবে না যে, এটি পৃথিবীর।
বিজ্ঞানী এমিলি ম্যাকলাফলিন, নেরিডা উইলসন এবং গ্রেগ রাউস গত মাসে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকায় সামুদ্রিক এই প্রজাতি নিয়ে তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আন্টার্কটিকার কাছে ‘প্রমাচোক্রিনাস’ নামে এক সামুদ্রিক জীব দেখতে পাওয়া যায়। যা পরিচিত ‘আন্টার্কটিকার পালক’ হিসাবেও।
২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রমাচোক্রিনাস নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রমাচোক্রিনাসের নানা প্রজাতি খুঁজে বার করে পরীক্ষানিরীক্ষা করা ছিল গবেষণার লক্ষ্য।
সমুদ্রের নীচে প্রমাচোক্রিনাসের গতিবিধি নিয়ে কৌতূহল জন্মেছিল বিজ্ঞানীদের। বিজ্ঞানীদের একাংশের বর্ণনায় প্রমাচোক্রিনাসের গতিবিধি ‘ভিন্গ্রহীদের মতো’। আর তাই ওই সামুদ্রিক প্রাণীর আরও প্রজাতি খুঁজে পেতে অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয়েছিল।
বেশ কয়েক বছর ধরে সিপল কোস্ট, ডিয়েগো রামিরেজ এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ-সহ একাধিক দ্বীপের কাছে ঘুরে ঘুরে প্রমাচোক্রিনাসের নমুনা সংগ্রহ করে বিজ্ঞানীদের দল।
এই সময় বিজ্ঞানীরা প্রমাচোক্রিনাসের মোট সাতটি নতুন প্রজাতি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার আগে প্রমাচোক্রিনাসের একটি প্রজাতিরই খোঁজ ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে।
প্রমাচোক্রিনাসের নতুন আবিষ্কৃত সাতটি প্রজাতির মধ্যে একটি প্রজাতি ছিল, যা বিজ্ঞানীদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রজাতিটির নাম ‘প্রমাচোক্রিনাস ফ্র্যাগারিয়াস’। যাকে অ্যান্টার্কটিকার ‘স্ট্রবেরি পালক’ বলে অভিহিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
‘ফ্র্যাগারিয়াস’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ফ্রাগা’ থেকে। যার অর্থ স্ট্রবেরি। প্রমাচোক্রিনাসের এই প্রজাতির দেহ স্ট্রবেরির মতো দেখতে হওয়ার কারণেই এমন নাম দেওয়া হয়েছে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রমাচোক্রিনাস ফ্র্যাগারিয়াস সমুদ্রপৃষ্ঠের তলায় ৬৫ মিটার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
রং ‘বেগুনি’ থেকে ‘গাঢ় লালচে’ হতে পারে বলেও গবেষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
প্রথম নজরে দেখলে প্রমাচোক্রিনাসের এই প্রজাতিকে দেখলে সিনেমায় দেখা ভিন্গ্রহী দানবের মতো লাগবে। ভাল করে নীরিক্ষণ করলে সামুদ্রিক প্রাণীটির স্ট্রবেরির মতো আকৃতি লক্ষ্য করা যাবে। দেখতে পাওয়া যাবে ১০টি শুঁড় এবং ২০টি হাত।
গবেষকদের মতে, আণবিক গঠন দেখে এই সব সামুদ্রিক প্রাণীদের বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি চেনা যায়। তবে অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজাতির গঠন বেশ রহস্যজনক। যেমন প্রমাচোক্রিনাস ফ্র্যাগারিয়াসের।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা প্রমাচোক্রিনাস ফ্র্যাগারিয়াস নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রমাচোক্রিনাসের আর কোনও নতুন প্রজাতির খোঁজ পাওয়া যায় কি না, তা নিয়েও খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।