অ্যাপ ক্যাবগুলিতো বটেই, কোথাও যাওয়ার জন্য বাইক বুক করলেও হয়রানির মুখে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। হয় বাইক পাওয়া যায় না, না হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে ভাড়া দেখানো হয়, সেই ভাড়ায় যেতে চান না চালকেরা। বার বার ক্যাব সংস্থাগুলির কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয় না।
নতুন বছরে তাই এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী সরকার। ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপের পরে এ বার বাইকের জন্য নতুন অ্যাপ আনতে চায় পরিবহণ দফতর।
কম খরচে সরকারি বাইক অ্যাপ পরিষেবা চালু করতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি দফতর সূত্রে এমনটাই খবর মিলেছে। কয়েক মাস আগেই ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপ চালু করে সরকারি অ্যাপ ক্যাব ট্যাক্সি পরিষেবা শুরু করেছে দফতর।
তার পরেই বাইক অ্যাপ চালু করার বিষয়ে উদ্যোগ শুরু হয়েছে দফতরের কর্তাদের মধ্যে। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, তিন কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব গেলে তবেই এই অ্যাপে বাইক বুকিং করা যাবে।
প্রথমে শহর কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পরিষেবা শুরু করবে রাজ্য। তার পর ধীরে ধীরে প্রকল্পে সাফল্য এলে রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও সরকারি বাইক অ্যাপ পরিষেবা চালু করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে এই পরিষেবা চালু হবে কলকাতা, হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন এবং দমদম বিমানবন্দর এলাকাতে। যে হেতু এই সমস্ত এলাকায় যাত্রীসংখ্যা বেশি থাকে, তাই পরীক্ষামূলক ভাবে অ্যাপ পরিষেবা চালু করতে এই এলাকাগুলোকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, বেসরকারি অ্যাপ ক্যাব তো বটেই, বেসরকারি বাইক অ্যাপ নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ভাড়ার থেকে বেশি ভাড়া চান চালকরা। আবার বুকিং করেও বহু সময় বাইকের দেখা মেলে না। ফলে হয়রানির শিকার হতে হয় যাত্রী সাধারণকে।
পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে এই সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে কোনও সুরাহা মেলে না। এমন সব অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর নিজস্ব অ্যাপ বাইক পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবহণ দফতর।
রাজ্য সরকারের শুরু করা এই উদ্যোগে অনেক কম টাকায় অ্যাপ বাইক পাবেন যাত্রীরা। সঙ্গে ঠিক করা হয়েছে, যদি কোনও বাইকের চালক পর পর তিনটি বুকিং বাতিল করেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এই বাইকের ন্যূনতম ভাড়া কুড়ি টাকা করার ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে নতুন এই পরিষেবার ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা দ্বিধাও রয়েছে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের মনে।
একাংশ মনে করছেন, রাজ্য পরিবহণ দফতরের তৈরি ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপের সঙ্গেই নতুন এই বাইক পরিষেবাকে যুক্ত করে দেওয়া হোক। তা হলে ‘এক দিলে দুই পাখি মারা’ যাবে। কারণ, বেসরকারি অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির একটি অ্যাপ দিয়েই গাড়ি এবং বাইক— দুই-ই বুকিং করার সুবিধা পাওয়া যায়।
এ ক্ষেত্রে পৃথক অ্যাপে বাইক এবং গাড়ি বুকিংয়ের ব্যবস্থা হলে, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে যাত্রীদের মধ্যে। তাই তাঁদের মতে, নতুন কোনও অ্যাপের বদলে ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হোক এই নতুন বাইক পরিষেবা।
আর অন্য অংশের মতে, নতুন একটি অ্যাপ করে তাতে বাইক পরিষেবার জন্য পৃথক বন্দোবস্ত করা হোক। তাতে যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি কম থাকবে, পৃথক অ্যাপে ঢুকে তাঁরা নিজেরাই পছন্দমতো যান বুকিং করে নিতে পারবেন।
পরিবহণ দফতর চাইছে নতুন বছরেই এই অ্যাপ বাইক পরিষেবা শুরু করে দিতে। কারণ, যাত্রীদের কাছে বিকল্প সুবিধা পৌঁছে দিয়ে বেসরকারি অ্যাপ বাইক সংস্থাগুলিকেও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চায় পরিবহণ দফতর।