ভারতীয় সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ’ এক বার বলেছিলেন, ‘‘যদি কেউ বলেন যে তিনি মরতে ভয় পান না, তা হলে হয় তিনি মিথ্যা বলছেন, নয়তো তিনি এক জন গোর্খা।’’ প্রিন্স চার্লস বলেছিলেন, ‘‘পৃথিবীতে শুধুমাত্র গোর্খাদের কাছে থাকলেই জানবেন যে আপনি নিরাপদ আছেন।’’
গোর্খারা ঠিক কতটা নির্ভীক হতে পারেন তা বোঝানোর জন্য একটা উদাহরণই মনে হয় যথেষ্ট। সেই গল্প জানলে গোর্খাদের বীরত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাবেন আপনিও।
এক বার এক জন গোর্খা চলন্ত ট্রেনে একাই ৪০ জন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে লড়ে তাদের কুপোকাত করেছিলেন।
২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্টের সদস্য বিষ্ণুপ্রসাদ শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
রাঁচী থেকে গোরখপুরগামী মৌর্য এক্সপ্রেসে চাপেন তিনি।
মধ্যরাতে ৪০ জন সশস্ত্র ডাকাত ট্রেনে উঠে লুটপাট শুরু করে। বন্দুক এবং ছুরি দেখিয়ে যাত্রীদের ছিনতাই করতে শুরু করে তারা।
প্রথম দিকে সব কিছু দেখেও চুপ করে ছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ। কিন্তু দুষ্কৃতীরা ১৮ বছর বয়সি একটি মেয়েকে উত্যক্ত করতে শুরু করলে বিষ্ণুপ্রসাদ নিজের মাথা আর ঠিক রাখতে পারেননি।
ব্যাগ থেকে নিজের খুখরি বের করে ওই ৪০ দুষ্কৃতীর উপর একাই ঝাঁপিয়ে পড়েন বিষ্ণুপ্রসাদ। দুষ্কৃতীরা তাঁর উপর পাল্টা হামলা চালালেও তাঁর তেজের কাছে টিকতে পারেনি।
বিষ্ণুপ্রসাদের খুখরির আঘাতে মৃত্যু হয় তিন ডাকাতের। আহত হয় আট জন। মারমুখী বিষ্ণুপ্রসাদকে দেখে চম্পট দেয় বাকি ডাকাতরা।
ছিনতাই করা ২০০টি মোবাইল ফোন, ৪০টি ল্যাপটপ, প্রচুর পরিমাণে গয়না এবং প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ নগদ টাকাও তারা ফেলে পালিয়ে যায়।
দুষ্কৃতীদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় বিষ্ণুপ্রসাদের বাঁ হাত গুরুতর ভাবে জখম হয়। নির্যাতিতা ওই যুবতীরও ঘাড়ের একটি অংশ কেটে যায়।
নির্যাতিতার পরিবার উপকারের বদলে টাকা দিতে চাইলে বিষ্ণুপ্রসাদ তা নিতে অস্বীকার করে বলেন, ‘‘যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করি আমরা। এটা আমার কর্তব্য। ট্রেনের মধ্যেও দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমার কর্তব্য ছিল।”
নির্ভীক হওয়ার পাশাপাশি গোর্খারা শক্তি এবং সাহসেরও পরিচায়ক।
ওসামা বিন লাদেনও এক বার বলেছিলেন, গোর্খারা পাশে থাকলে তিনি আমেরিকাকেও হারিয়ে দিতে পারতেন।
হিটলারও গোর্খাদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমার কাছে যদি গোর্খা বাহিনী থাকত, তা হলে পৃথিবীর কোনও সেনাবাহিনীই আমাকে পরাস্ত করতে পারত না।’’