ফুচকা, পাপড়ি চাট, আলু টিক্কি, দহি ভল্লা সাজিয়ে রোজ দাঁড়িয়ে থাকেন তরুণী। বিক্রিবাটাও নেহাত মন্দ হয় না। কোনও দিন ব্যবসা খারাপ হলেও মুখে স্মিত হাসি লেগেই থাকে। নিজেই এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন তরুণী। নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য। তাই কোনও কিছুতেই আক্ষেপ নেই তাঁর।
তরুণীর নাম পুনম। মোহালির বাসিন্দা। সেখানেই খুলেছেন ফুচকার দোকান। স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় তাঁর তৈরি দোকান।
এক বছর আগে এক ভ্লগার গিয়েছিলেন মোহালিতে পুনমের ফুচকার দোকানে। খেয়ে মুগ্ধ হয়ে যান। কথা বলে জানতে পারেন পুনমের গল্প। সেই গল্প প্রকাশ করেন সমাজমাধ্যমে। তার পরেই পরিচিত বাড়ে পুনমের।
সেই ভ্লগারের ভিডিয়োতে পুনমকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি কারও থেকে কিছু শিখিনি। যা করছি, তা নিজে করতে করতেই শিখেছি।’’
ভিডিয়োতে লেখা ছিল, ‘নিজের পড়াশোনা চালাতে ফুচকা বিক্রি করছেন মোহালির মেয়ে’। সেটি দেখেছিলেন প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ। পছন্দ করেছিলেন সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ। পুনমের কঠোর পরিশ্রম আর সততায় মুগ্ধ হয়েছিলেন বহু মানুষ।
উচ্চশিক্ষা লাভের ইচ্ছা ছিল পুনমের। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য যথেষ্ট অর্থ ছিল না। কিন্তু পুনম নাছোড়।
শেষে চাকরি নিয়েছিলেন দাঁতের চিকিৎসকের কাছে। এক বন্ধু পাইয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে এত ক্ষণ কাজ করতে হত যে, পড়াশোনার সময় পেতেন না। তাই ওই চাকরি ছেড়ে দেন পুনম।
স্থির করেন, অন্য কিছু করবেন। তখনই ফুচকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যাবেলায় মোহালির রাস্তায় ফুচকা বিক্রি করেন, দিনে পড়াশোনা করেন।
প্রথমে পরিবার বিষয়টি একেবারেই মেনে নেয়নি। আপত্তি জানিয়েছিল। বলেছিল, চাকরি খোঁজার কথা। পরে পুনম তাঁদের বোঝান যে, কোনও কাজই ছোট নয়।
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বুঝতে পারে পরিবার। বুঝতে পারে, সৎপথে থেকে অর্থ উপার্জনে কিছু খারাপ নেই। তা সে ফুচকা বিক্রি করেই হোক। এখন ফুচকা বিক্রি করেই পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন।
এর আগে আরও এক ফুচকা বিক্রেতার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। ২২ বছরের সেই যুবক হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে রাস্তায় ফুচকার দোকান খুলেছিলেন।
স্যুট, টাই পরে মোহালির রাস্তায় ফুচকা, চাট বিক্রি করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘হোটেলে ম্যানেজমেন্টে আমার ডিগ্রি রয়েছে। তা মানুষকে বোঝানোর জন্যই স্যুট-টাই পরি।’’
যুবককে সাহায্য করেন তাঁর ভাই। তিনি জানিয়েছেন, সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে রান্নার জোগাড় করেন। দোকান বন্ধ করে রাত ১২টায় ঘুমোতে যান তাঁর ভাই।
হোটেলে চাকরি না করে স্বাধীন ভাবে নিজের দোকান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যুবক। ইচ্ছা রয়েছে, ভবিষ্যতে একটি চাটের দোকান খোলার। চললে সংখ্যা বাড়াবেন। পুনম যদিও সে রকম কোনও ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেননি।