আকারে দৈত্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। পেটের খিদেও তার দৈত্যেরই মতো। ঠিক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘কুম্ভীর বিভ্রাট’-এর মতো। পেটের ভিতর বসে ‘বেগুন’ বিক্রি করা যাবে অনায়াসে। মনে করা হয়, ৩০০ মানুষকে আস্ত গিলে খেয়েছে সে। তার পর অনায়াসে পালিয়ে বেঁচেও গিয়েছে। আজ পর্যন্ত ধরা যায়নি গুস্তাভকে।
গুস্তাভের বাস মিশরের নীল নদে। বলা হয়, গুস্তাভ নাকি আফ্রিকার সব থেকে বড় সরীসৃপ। লম্বায় সে প্রায় ছ’মিটার। ওজন প্রায় এক টনের কাছাকাছি। কিছু গবেষকের দাবি, গুস্তাভের ওজন ২০০০ পাউন্ড। অর্থাৎ প্রায় ৯০৭ কেজি।
কুমির বিশেষজ্ঞ মার্ক গানসুয়ানা জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সাল নাগাদ প্রথম গুস্তাভের উৎপাত ধরা পড়ে। বেশ কিছু মানুষকে খেয়ে ফেলে সে। তার পর ক্রমেই উৎপাত বাড়তে থাকে। ২০০১ সালে তার নামকরণ করেন কুমির বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিস ফায়ে।
বুরুন্ডির টাঙ্গানিকা হ্রদের ধারে ছোট্ট একটি নদী দ্বীপে ঘাপটি মেরে বসে থাকে গুস্তাভ। সময়-সুযোগ পেলেই ধরে শিকার। মাঝেমধ্যে রুজিজি নদীতে সাঁতার দেয়। তার জ্বালায় অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা।
বছরের পর বছর ধরে প্যাট্রিস পর্যবেক্ষণ করেছিলেন গুস্তাভকে। তিনি জানিয়েছেন, টাঙ্গানিকার বাকি কুমিরেরা মাছ, ছাগল, বাছুরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী খেয়ে পেট ভরায়। গুস্তাভ ও সবের ধার ধারে না। তার নিশানা মানুষ।
কুমির বিশেষজ্ঞদের মতে, পশু বা মাছ নয়, শুধুই মানুষ খায় বলে গুস্তাভের ওজন অন্য কুমিরের থেকে বেশি।
রুমঙ্গ এবং মিনাগো এলাকায় ঘোরাঘুরি করে সে। নদীর তীর ঘেঁষে সাঁতার দেওয়ার সময় গিলে নেয় মৎস্যজীবী, নদীতে স্নান করতে আসা লোকজনকে। প্যাট্রিসের দাবি, ওই এলাকায় ঘোরাঘুরির সময় কয়েক দিনের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জনকে খেয়ে ফেলে।
ফায়ে জানিয়েছেন, সব সময় গোটা শিকার খায় না গুস্তাভ। কিছু অংশ ফেলে রাখে। গ্রামবাসীদের দাবি, খিদের জন্য শিকার ধরে না সে। আসলে মজা পায়। তাই মানুষ ধরে খায়। পেটে জায়গা থাকে না বলে কিছু অংশ মুখ দিয়ে উগরে দেয়।
যদিও সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ গানসুয়ানা এই দাবি মানেননি। তাঁর মতে, কুমির কখনওই মজার জন্য মানুষকে গিলে ফেলে না। আসলে কুমির খুব বেশি খেতে পারে না। প্রয়োজনের বেশি পরিমাণ খাবার সে উগরে দেয়।
গত এক দশক ধরে বহু বার গুস্তাভকে ধরার চেষ্টা হয়েছে। শিকারির দল হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এক বার তাকে ধরা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। সে বারও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েনি গুস্তাভ।
কুমির শিকারি প্যাট্রিস ফায়েও হার মেনেছেন। এক বার টাঙ্গানিকা হ্রদের ধারে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। বিরাট এক খাঁচার মধ্যে বাঁধা ছিল একটি ছাগল। হ্রদের ধারে অপেক্ষা করছিল শিকারির দল। আশায় ছিলেন, যে কোনও সময় টোপ গিলতে আসবে গুস্তাভ।
সে কিন্তু বোকা নয়। তার ধৈর্যও নেহাত কম নয়। বেশ কয়েক দিন কেটে গিয়েছে। গুস্তাভ আর টোপ গেলে না। শেষে এক রাতে ঝড় এল। পরের দিন সকালে দেখা গেল, খাঁচাও নেই, টোপও নেই। আর গুস্তাভের কোনও চিহ্নও নেই।
অনেক খুঁজেও টাঙ্গানিকায় সেই ফাঁদ মেলেনি। শিকারিরা মনে করেন, ওই ফাঁদ থেকে কোনও ক্রমে পালিয়ে গিয়েছিল গুস্তাভ। বা হয়তো ফাঁদই ভেঙে ফেলেছিল। মোট কথা, অনেক খুঁজেও ফাঁদ, টোপ বা গুস্তাভের হদিস মেলেনি। কোথাও তাকে বন্দি অবস্থাতেও পাওয়া যায়নি।
প্যাট্রিসের মতে, বাকি কুমিরের থেকে গুস্তাভ প্রায় তিন গুণ বড়। আর তার প্রকৃতিও ভয়ঙ্কর। শিকারকে কোনও ভাবে রেয়াত করে না সে।
প্যাট্রিসের দাবি, গুস্তাভের শরীরে তিনটি বুলেটের ক্ষত রয়েছে। তিন বার শিকারির বুলেট খেয়েও বেঁচে রয়েছে। তাই তাঁর মতে, গুস্তাভকে মারার ক্ষমতা কারও নেই। ২০১৬ সালের পর তাকে সে ভাবে দেখা যায়নি। তা বলে সে মরে গিয়েছে, তা মানতে চাননি বিশেষজ্ঞ গানসুয়ানা। তার মতে, এখনও হয়তো ঘাপটি মেরে ডেরায় বসে রয়েছে সে। খেয়ে চলেছে মানুষ। প্রমাণ মিলছে না।