পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো ভারতের নিকটবর্তী দেশগুলির অর্থনৈতিক মন্দার ছবি প্রকট ভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার সেই মন্দার আঁচ ইউরোপেও। অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে জার্মানিতে।
আকারে ছোট হলেও জার্মানি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখলে দেখা যাচ্ছে, এই দেশের অর্থনীতি মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে জার্মানির জিডিপি পৌঁছে যায় ০.৩ শতাংশে। তার আগে গত বছরের শেষ দিকে জিডিপিতে ০.৫ শতাংশ পতন হয়েছিল এই দেশে। এর ফলে সে দেশে বহু মানুষ চাকরি হারাতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
জার্মানির অর্থনীতিতে এই ক্রম অবনতি কিন্তু ভারতের জন্য মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। কারণ ভারতের বহির্দেশীয় বাণিজ্য এই দেশের উপর বেশ খানিকটা নির্ভরশীল।
২০২২ সালে ভারত থেকে বিদেশে যত পণ্য রফতানি করা হয়েছে, তার মধ্যে বেশ খানিকটা গিয়েছে জার্মানিতে। সেই পরিমাণ হল মোট রফতানিকৃত পণ্যের ৪.৪ শতাংশ।
ভারত থেকে কী কী কেনে জার্মানি? তালিকায় মূলত রয়েছে যন্ত্রপাতি এবং জৈব রাসায়নিক পদার্থ। এ ছাড়া, বৈদ্যুতিক যন্ত্র, পোশাক, জুতো এবং লোহা ও ইস্পাতের নানা দ্রব্য ভারত থেকে জার্মানিতে যায়।
ভারতের শিল্প কনফেডারেশনের কর্তা সঞ্জয় বুধিয়া পিটিআইকে বলেন, ‘‘জার্মানির অর্থনৈতিক মন্দা একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এত দ্রুত সেই প্রভাব চোখে পড়বে না। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভারতের যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প, রাসায়নিক, বস্ত্র এবং বৈদ্যুতিন শিল্প।’’
কিন্তু জার্মানির অর্থনীতির এই দশা কেন? ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে অন্যতম শক্তিশালী এই দেশ। কেন সেখানেই পর পর দুই ধাপে জিডিপিতে এমন পতন?
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, শুধু জার্মানি নয়, সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নই ইদানীং মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সর্বত্র। আর সেখান থেকেই জার্মানির মন্দা।
জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৃহত্তম অর্থনীতি। তাই সেখানে মন্দার কালো মেঘ দেখা দেওয়ায় সার্বিক ভাবে চাপে ইইউ। জার্মানির মন্দার প্রভাব ইউনিয়নের সব ক'টি দেশের উপরেই পড়তে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে ভারত থেকে রফতানি করা পণ্যের মোট ১৪ শতাংশ যায়। জার্মানি ছাড়াও ভারতের পণ্য রফতানির তালিকায় আছে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এবং ইটালির মতো দেশ।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভারতীয় রফতানিতে ২০০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৬,৫৪৫ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
ভারত থেকে স্মার্টফোন, জুতো, পোশাক, চামড়াজাত নানা দ্রব্যের রফতানিতে প্রভাব ফেলতে পারে জার্মানির মন্দা।
শুধু পণ্য রফতানি এবং তৎসম্পর্কিত শিল্পে নয়, জার্মানির মন্দা প্রভাব ফেলতে পারে বিনিয়োগেও। জার্মানির বিনিয়োগকারীরা মন্দা পরিস্থিতিতে ভারতের চেয়েও সস্তার বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজতে চাইবেন।
২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের তালিকায় জার্মানি রয়েছে নবম স্থানে।
জার্মানি থেকে এই ২২ বছরে ভারতের পরিবহণ, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, বিমা, ধাতব ও রাসায়নিক শিল্প, নির্মাণ শিল্প এবং অটোমোবাইলের মতো বিবিধ ক্ষেত্রে মোট ১৩৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। সুতরাং জার্মানির মন্দা আগামী দিনে ভারতের অর্থনীতির জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে।