হিন্দি ভাষায় একেবারেই দড় নন কনে। তবে কুছ পরোয়া নেই! বর রয়েছেন যে! কনের সঙ্গে কেউ হিন্দিতে কথাবার্তা শুরু করলে উদ্ধারকর্তা হয়ে ওঠেন বর। তর্জমা করে বুঝিয়ে দেন সারমর্ম।
জার্মান পাত্রীর সঙ্গে বিহারি পাত্রের বোধ হয় আরও অনেক অমিল রয়েছে। তবে তাতে তাঁদের একসঙ্গে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
চলতি মাসের গোড়ায় সাতপাকে বাঁধা পড়লেন এই যুগল। তা নিয়ে বিস্তর হইচই হচ্ছে নেটপাড়ায়। অনেকে বলছেন, হবে না-ই বা কেন? এমন প্রেমকাহিনি তো একমাত্র সিনেমাতেই দেখা যায়!
গুগ্লে খোঁজ করে দেখুন, জার্মানি থেকে বিহারের দূরত্ব প্রায় ৬ হাজার ৮৫৬ কিলোমিটার। তবে সে ভৌগোলিক দূরত্বকে অনায়াসে উড়িয়ে দিয়েছেন বিহারের নবাদা জেলার বাসিন্দা সত্যেন্দ্র কুমার এবং জার্মানির ল্যারিসা বেল্চ।
ল্যারিসার সঙ্গে সত্যেন্দ্রর দেখা হওয়ার কথা ছিল না। তবে তা-ই হয়েছিল। তবে বিহার বা জার্মানিতে নয়— সুইডেনে। সেটা ছিল ২০১৯।
দুই ভিন্ জগতের বাসিন্দাই উচ্চশিক্ষার জন্য সুইডেনে গিয়েছিলেন। ত্বকের ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছিলেন সত্যেন্দ্র। ল্যারিসা মন দিয়েছিলেন প্রস্টেট ক্যানসারের গবেষণায়।
গবেষণার ফাঁকে কখন যেন তাঁদের দু’জনের দেখা হয়ে গিয়েছিল। আলাপের পর এক সময় পরিচিতিও বেড়েছে। তার পর থেকে যেন চিত্রনাট্যের দাবি মেনেই এগিয়েছে ল্যারিসা এবং সত্যেন্দ্রর প্রেমকাহিনি। তফাৎ শুধু এ চিত্রনাট্যে এখনও পর্যন্ত খলনায়কের দাপাদাপি নেই। শুধু নায়ক-নায়িকা!
এ হেন প্রেমের গল্পে মজে জনতা। সংবাদমাধ্যমগুলিও হামলে পড়েছে এ যুগলের কাহিনি শুনতে। সেই সূত্রেই খবর, তিন বছর ধরে পরস্পরের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন ল্যারিসা এবং সত্যেন্দ্র। গোড়ায় বন্ধুত্ব থাকলেও তা গাঢ় হয়ে প্রেমে বাঁক নিয়েছে।
বছর তিনেকের প্রেমের পর সারা জীবন একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন ল্যারিসা এবং সত্যেন্দ্র। তবে দু’জনেরই ইচ্ছে ছিল, বিয়ে হবে ভারতে এবং অবশ্যই হিন্দু রীতিনীতি মেনে।
হবু দম্পতি তো রাজি! তবে দু’জনের পরিবারের মতামত কী? সত্যেন্দ্রর মা-বাবা শ্যামা দেবী এবং বিষ্ণুদেব মাহাতো সানন্দে এ বন্ধনে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। রাজি ছিল ল্যারিসার পরিবারও।
বাধাবিপত্তিই যখন নেই, তবে আর দেরি কিসের? ফলে ঝটপট শুভকাজ সেরে নিয়েছেন ল্যারিসা এবং সত্যেন্দ্র।
৫ মার্চ বিয়ের ভোজের জন্য বিহারের রাজগীরের একটি হোটেল ভাড়া নিয়েছিলেন সত্যেন্দ্রর পরিবার। সেখানেই জমায়েত হয়েছিলেন আমন্ত্রিতরা।
যদিও ইচ্ছে থাকলেও বিয়ের দিনে হাজির থাকতে পারেননি ল্যারিসার মা-বাবা। ভিসা সংক্রান্ত সমস্যায় এ দেশে আসতে পারেননি তাঁরা। তবে সত্যেন্দ্রর গোটা পরিবারই বিয়েতে বেজায় মাতামাতি করেছেন।
বিয়ের দিনে পুরোদস্তুর ভারতীয় পোশাকে হাজির ল্যারিসাও। গাঢ় নীল ও উজ্জ্বল লাল রঙের লেহঙ্গা-চোলিতে সত্যেন্দ্রর হাতে হাত রেখেছেন তিনি। সত্যেন্দ্রর পরনে ছিল ফিকে ঘিয়ে রঙের শেরওয়ানি ও লালচে উড়নি। সঙ্গে মানানসই পাগড়ি। ভোজের দিন আবার অন্য পোশাকে ধরা পড়েছেন দু’জনে।
নবদম্পতিকে আশীর্বাদে-ভালবাসায় ভরিয়ে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সত্যেন্দ্রর পরিজনেরা। স্বাভাবিক ভাবেই এতে অভিভূত ল্যারিসা। তিনি জানিয়েছেন, সংস্কৃতিগত দিকে সত্যেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর ফারাক রয়েছে বটে। তবে বরাবরই ভারতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। এ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও তাঁকে টানে। তিনি বলেন, ‘‘আমার জীবনকে উপভোগ করার জন্য ভারতে এসেছি। এখানকার মানুষজনও খুব ভাল।’’
যদিও এত কিছুর মধ্যে একটা খেদ রয়েছে ল্যারিসার। তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দির কিছুই বুঝতে পারি না।’’ তবে ল্যারিসার সে খেদ দূর করতে চেষ্টার কসুর করেননি সত্যেন্দ্র। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘আমাকে হিন্দি তর্জমা করে বুঝিয়ে দেয় সত্যেন্দ্র।’’