দু’জনেই ভারতের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের পুরোধা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাঁদের ঐশ্বর্য। সেই সঙ্গে মুকেশ অম্বানী এবং গৌতম আদানির মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে প্রতিযোগিতাও।
এই মুহূর্তে ভারতের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আদানি গ্রুপের মালিক গৌতম আদানির নাম। তাঁর ঠিক পরেই রয়েছেন রিলায়্যান্স কর্ণধার মুকেশ অম্বানী। দু’জনের সম্পত্তির পরিমাণের মধ্যে বেশ খানিকটা ফারাক তৈরি হয়ে গিয়েছে।
দেশের ধনীতম ব্যক্তিদের মধ্যে শীর্ষস্থানটি দীর্ঘ দিন নিজের দখলে রেখেছিলেন মুকেশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে ছাপিয়ে যান আদানি। প্রথমে এশিয়ার ধনীতম হিসাবে তাঁর নাম উঠে আসে। পরে এক লাফে বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় তিন নম্বরে উঠে আসেন আদানি।
বর্তমানে বিশ্ব-তালিকায় মুকেশ অম্বানী রয়েছেন ১১ নম্বরে। আদানির সঙ্গে তাঁর ফারাক চোখে পড়ার মতো। আদানি এবং অম্বানীর মাঝে রয়েছেন আরও ৮ ধনকুবের।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গৌতম আদানির মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ১০ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। মুকেশ তাঁর থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে। তাঁর মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ৭ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
১৯৯৮ সালে গৌতম আদানির হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় আদানি গ্রুপ। দেশের নানা প্রান্তে তাদের নানা শিল্প, বাণিজ্য বিস্তৃত রয়েছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে আচমকা উত্থান শুরু হয় আদানির।
আদানি গ্রুপের লাভের অঙ্ক বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালে অম্বানীকে ছাপিয়ে যায়। চলতি বছরের প্রথম দু’মাসেই বাজিমাত করেন গৌতম। এই গ্রুপের অর্থলাভের অন্যতম মূল উৎস গুজরাতের বন্দর ব্যবসা। ১৯৯৫ সালে গুজরাতে আদানি গ্রুপের প্রথম বন্দরটি তৈরি হয়।
বন্দর ছাড়াও বিদ্যুৎ, সৌর ও তাপ শক্তি, গ্যাস, রিয়েল এস্টেট, ডেটা সেন্টার, বিমানবন্দর, জল সরবরাহ প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে আদানি গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে। যার হাত ধরে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন গৌতম।
অম্বানীর রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রি দেশের টেলি-যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সংস্থা। মোবাইল কানেকশন ছাড়াও তেল, গ্যাস ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রিলায়্যান্সের বিনিয়োগ রয়েছে। সংস্থার বার্ষিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সাল থেকে রিলায়্যান্সের অগ্রগতি শুরু। সংস্থার সিংহভাগ আয় অপরিশোধিত তেলের ব্যবসা থেকে।
২০২০ সালে কোভিড অতিমারির সময় বিপুল লাভের মুখ দেখে অম্বানীর সংস্থা। এই সময় রিলায়্যান্স জিয়ো-র গ্রাহক সংখ্যা পৌঁছে যায় ১২ কোটিতে। দেশের প্রথম সংস্থা হিসাবে তাদের মার্কেট ভ্যালু ছাড়িয়ে যায় ২০ হাজার কোটি ডলার। গ্যাস উৎপাদন, মিডিয়া এবং বিনোদন, ডিজিটাল পরিষেবার উপর জোর দিয়ে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে রিলায়্যান্স।
বাণিজ্যিক সাফল্য সত্ত্বেও নিজের ব্যক্তিগত জীবন আড়ালেই রাখেন আদানি। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, আদানির মালিকানায় রয়েছে একটি হেলিকপ্টার (অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড এ-১৩৯) এবং অন্তত তিনটি প্রাইভেট জেট (কানাডিয়ান চ্যালেঞ্জার ৬০৫, এমব্রায়ের লিগাসি ৬৫০ এবং হকার বিচক্রাফ্ট ৮৫০এক্সপি)।
আদানির গুজরাতের বাড়িতে হেলিপ্যাড রয়েছে বলে দাবি করেন কেউ কেউ। তিনি নিজে কখনও নিজের বাড়িকে বিশেষ প্রচারের আলোয় আসতে দেননি। এ ক্ষেত্রে অম্বানী ঠিক তাঁর উল্টো।
মুকেশ অম্বানী থাকেন মুম্বইয়ের বিলাসবহুল অ্যান্টিলিয়ায়। তাঁর বাড়িতে তিনটি হেলিপ্যাড রয়েছে। তিনি নিজেই বাড়িটিকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন একাধিক বার। ভারতের সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং দামি বাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম এই অ্যান্টিলিয়া। এ ছাড়াও, মুকেশের মালিকানায় রয়েছে ১৭০টির বেশি বিলাসবহুল চার চাকা গাড়ি।
অ্যান্টিলিয়া ২৭ তলা বহুতল। ৪ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বড় অম্বানীর এই বাড়ি। তাতে রয়েছে মোট ৯টি লিফট।
অম্বানীর বাড়িতে একটি পৃথক তুষার-ঘর বা স্নো-রুম রয়েছে। মুম্বইয়ে তুষারপাত না হলেও অ্যান্টিলিয়ার এই ঘরে চাইলেই ঝরে পড়ে বরফের গুঁড়ো।
নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অম্বানীদের বিলাসিতা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। ২০১৮ সালে মেয়ে ইশা এবং ২০১৯ সালে ছেলে আকাশের বিয়ে দেন মুকেশ। জাঁকজমকপূর্ণ সেই বিয়ের আয়োজন ধনকুবের পরিবারটিকে নতুন করে চর্চায় নিয়ে এসেছিল।
সমাজমাধ্যমে মুকেশ এবং তাঁর পরিবারের সকলেই বেশ সক্রিয়। দৈনন্দিন যাপনের নানা ছবি তাঁরা পোস্ট করেন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে।
কিন্তু গৌতম আদানির সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখলে ব্যক্তিগত জীবন কিংবা পারিবারিক অবসরের তেমন কোনও ছবি চোখে পড়ে না। ২০২১ সালে এক বার সপরিবার একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালনের ছবি টুইট করেছিলেন গৌতম। তার পর আর কোনও পোস্টে তাঁর পরিবারকে দেখা যায়নি।
অম্বানী এবং আদানি, ভারতের এই প্রধান দুই ধনকুবেরকে নিয়ে নানা মহলে চর্চা চলে। আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে তাঁদের ক্ষমতাবৃদ্ধির ইঁদুরদৌড়।
কিন্তু অম্বানী বা আদানিকে প্রকাশ্যে কখনও তেমন কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। কোনও সাক্ষাৎকারেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ মেলেনি। বরং একে অপরের প্রশংসায় শামিল হয়েছেন দু’'জনেই।