বলিপাড়ার প্রথম সারির অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। গুরুগম্ভীর চরিত্র থেকে শুরু করে কৌতুকে মোড়া চরিত্র নিপুণ ভাবে বড় পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, নাসিরুদ্দিন কিছুটা রাগী প্রকৃতির। তাঁকে বিকিনি পরতে রাজি করান ‘গদর’-এর পরিচালক অনিল শর্মা।
আশির দশক থেকে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন অনিল। কেরিয়ারের প্রথম ছবি তৈরির সময় তেমন অর্থ না থাকলেও মুক্তির পর তা মন্দ ব্যবসা করেনি। ৩৫ বছরে পা ফেলতে না ফেলতেই পর পর সাতটি ছবি সফল হয় অনিলের।
পরিচালক হিসাবে বলিপাড়ায় ভালই পরিচিতি গড়ে ওঠে অনিলের। বলি তারকারা তাঁর পরামর্শ নিতে শুরু করেন। বলি অভিনেতা নাসিরুদ্দিনকে এক বার বিকিনি পরার জন্য অনুরোধ করেন অনিল। অভিনেতাও নাকি কোনও আপত্তি ছাড়াই অনিলের নির্দেশ মেনে নেন।
নাসিরুদ্দিনের মতো অভিনেতাকে কী করে বিকিনি পরতে রাজি করালেন, তা নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয় পরিচালককে। অনিল জানান, নাসিরুদ্দিনকে বিকিনি পরা অবস্থায় দেখে অনেকেই নাকি চমকে গিয়েছিলেন।
১৯৯২ সালে অনিলের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘তেহলকা’ ছবিটি। এই ছবিতে অভিনয় করেন শম্মি কপূর, ধর্মেন্দ্র, মুকেশ খন্না, নাসিরুদ্দিন শাহ, আদিত্য পাঞ্চোলি, জাভেদ জাফ্রের মতো বলি তারকারা।
অনিল সাক্ষাৎকারে জানান, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে ‘তেহলকা’ ছবির শুটিং চলাকালীন নাসিরুদ্দিনকে বিকিনি পরতে বলেন তিনি। নাসিরুদ্দিন একা নন, তাঁর পাশাপাশি আদিত্য এবং জাভেদকেও বিকিনি পরতে হয়।
বিকিনি পরতে নাসিরুদ্দিনের কোনও রকম আপত্তি রয়েছে কিনা তা অভিনেতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন অনিল। পরিচালককে নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘তুমি আমায় যখন ফাটা কুর্তা পরতে বলেছিলে, আমি কি কোনও আপত্তি জানিয়েছিলাম? তা হলে যখন বিকিনি পরতে বলছ তখন কেন আপত্তি জানাব?’’
বিকিনি পরা প্রসঙ্গে নাসিরুদ্দিন জানান, বাস্তবে তো তাঁকে বিকিনি পরতে হচ্ছে না। অভিনয়ের জন্য তিনি পরছেন। পেশাগত কারণে অন্য ধরনের পোশাক পরতে যে তাঁর কোনও আপত্তি নেই সে কথা অনিলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন নাসিরুদ্দিন।
চলতি বছরের অগস্ট মাসে অনিলের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘গদর ২’। যে পরিচালকের নির্দেশে এক সময় বিকিনি পরেছিলেন সে পরিচালককেই কটাক্ষ করেন নাসিরুদ্দিন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘যাঁর দেশপ্রেম যত চরম আকার নেবে, তিনি তত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। দেশে এখন এই ধারাই চলছে।’’ এই কথা বলার পর অভিনেতা জানান, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’ এবং ‘গদর ২’-এর মধ্যে কোনও ছবিই দেখেননি তিনি।
‘গদর ২’-এর মতো ছবি যে ‘সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর’ তাও দাবি করেন নাসিরুদ্দিন। অভিনেতা বলেন, ‘‘মানুষকে কঠিন সত্য দেখানো প্রয়োজন। সুধীর মিশ্র, অনুভব সিংহ এবং হনসল মেহতার মতো পরিচালকের আরও বেশি করে ছবি বানানো উচিত।’’
২০২০ সালে কোভিড অতিমারির সময় দেশে কী রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার উপর নির্ভর করে ‘ভিড়’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেন অনুভব। নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘দর্শক আজ থেকে ১০০ বছর পর ‘ভিড়’ দেখবেন। পাশাপাশি তাঁরা ‘গদর ২’ও দেখবেন। দু’টি ছবির মধ্যে কোথায় সত্য ফুটে উঠেছে তা নিজেরাই বিচার করতে পারবেন দর্শক।’’
যদিও ‘গদর ২’ ছবি নিয়ে নাসিরুদ্দিনের মন্তব্যে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন অনিল। পরিচালকের মতে, নাসিরুদ্দিন এখনও ছবিটি দেখেননি বলে এই ধরনের মন্তব্য করছেন। ছবিটি দেখার পর তাঁর ধারণা বদলে যাবে, সে আস্থা রাখেন অনিল।
২০০১ সালে অনিল শর্মার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘গদর: এক প্রেম কথা’। দু’দশক কেটে যাওয়ার পর চলতি বছরের অগস্ট মাসে সেই ছবির দ্বিতীয় পর্ব ‘গদর ২’ নিয়ে হাজির হন অনিল।
বড় পর্দায় আগের মতোই সানি দেওল এবং অমিশা পটেলের পরিচিত মুখ। সঙ্গে দেখা যায় অনিল-পুত্র উৎকর্ষ শর্মাকেও। মুক্তি পাওয়ার ৫৩ দিনের মাথায় বিশ্বজোড়া বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ক্লাবে নাম লিখিয়ে ফেলেছে ‘গদর ২’।