কিশোর কুমার হোক বা দিলজিৎ দোশাঞ্জ, গায়ক হিসাবে বলিপাড়ায় জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি বড় পর্দার অভিনেতা হিসাবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এমন একাধিক সঙ্গীতশিল্পী রয়েছেন যাঁরা সঙ্গীতের পাশাপাশি অভিনয়জগতে পা রাখলেও অভিনেতা হিসাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তালিকায় রয়েছে সোনু নিগম, হিমেশ রেশমিয়া, লাকি আলি, হানি সিংহের মতো গায়কদের নাম।
১৯৫১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আন্দোলন’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়জগতে কেরিয়ার শুরু করেন কিশোর কুমার। যদিও তার আগে ১৯৪৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শিকারি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় কিশোরকে। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন কিশোরের দাদা অশোক কুমার।
১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ২২টি ছবিতে অভিনয় করেন কিশোর। কিন্তু তার মধ্যে ১৬টি ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তবুও হার মানেননি তিনি। ‘চলতি কা নাম গাড়ি’, ‘দূর গগন কি ছাও মে’, ‘ঝুমরু’, ‘লুকোচুরি’, ‘নকরি’, ‘লড়কি’, ‘চার পয়সে’, ‘বাপ রে বাপ’, ‘মুসাফির’, ‘নয়া আন্দাজ’-এর মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করেন কিশোর। গীতিকারের পাশাপাশি বড় পর্দায় সফল অভিনেতা ছিলেন তিনি।
সাম্প্রতিক কালে বলিউডের পরিচিত মুখ দিলজিৎ দোশাঞ্জ। ছবিতে তো গান গেয়েছেনই, তা ছাড়া গানের অ্যালবামও রয়েছে দিলজিতের। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় পারফর্মও করেন দিলজিৎ। কিন্তু গান গাওয়ার পাশাপাশি অভিনয়ও করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১১ সালে প্রথম পঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন দিলজিৎ। একাধিক পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। বলিপাড়াতেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘ফিলৌরি’, ‘ওয়েলকাম টু নিউ ইয়র্ক’, ‘গুড নিউজ়’, ‘সুরজ পে মঙ্গল ভারী’, ‘জোগী’ এবং ‘ক্রু’ ছবিতে অভিনয় করেছেন দিলজিৎ। চলতি মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া ‘অমর সিংহ চমকিলা’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অভিনেতা হিসাবে সফল তিনিও। কিন্তু বলিপাড়ার বেশির ভাগ সঙ্গীতশিল্পীর ভাগ্য অভিনেতা হিসাবে প্রসন্ন নয়।
একাধিক হিন্দি ছবিতে গান গেয়ে, নিজস্ব মিউজ়িক অ্যালবামের মাধ্যমে গায়ক হিসাবে খ্যাতি পান হিমেশ রেশমিয়া। এর পর অভিনয়ের ক্ষেত্রেও নিজের পরিচিতি তৈরি করতে চান তিনি।
‘কর্জ’, ‘রেডিয়ো কজরারে’, ‘দমাদম’, ‘দ্য এক্সপোস’, ‘তেরা সুরুর’ এবং ‘হ্যাপি হার্ডি অ্যান্ড হীর’ ছবিতে অভিনয় করেন হিমেশ। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে সাফল্য আনতে পারেনি।
আশির দশকে ‘প্যারা দুশমন’, ‘উস্তাদি উস্তাদ সে’, ‘কামচোর’ এবং ‘বেতাব’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করেন সোনু নিগম। তার পর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল সোনুর।
২০০২ সালে ‘জানি দুশমন: এক আনোখি কহানি’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখেন সোনু। তার পর ‘কাশ আপ হমারে হোতে’, ‘লভ ইন নেপাল’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। একাধিক ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসাবে গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় সোনুকে। কিন্তু গায়ক হিসাবে তিনি যতটা খ্যাতি পেয়েছেন, অভিনেতা হিসাবে তার এক শতাংশ পাননি বলা চলে।
নব্বইয়ের দশকে সঙ্গীতজগতে নাম করেছেন লাকি আলি। কিন্তু অভিনয়জগতে সেই পরিচিতি পাননি তিনি। ২০০২ সালে ‘সুর: দ্য মেলোডি অফ লাইফ’ এবং ‘কাঁটে’ ছবিতে অভিনয় করেন লাকি।
২০০২ সালে পর পর দু’টি ছবিতে অভিনয়ের তিন বছর পর আবার বড় পর্দায় হাজির হন লাকি। ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কসক’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু অভিনয়দক্ষতা নিয়ে তেমন কোনও প্রশংসা পাননি তিনি। ২০০৪ সালের পর আর কোনও ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
অধিকাংশ হিন্দি ছবিতে মিকা সিংহের গাওয়া ‘পার্টি সং’গুলি শ্রোতাদের প্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে। বলিপাড়ার জনপ্রিয় গায়ক মিকা বড় পর্দায় পা রাখেন ২০১০ সালে। ‘মিট্টি’ নামের একটি পঞ্জাবি ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু সে ছবি বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি।
২০১১ সালে হিন্দি ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান মিকা। ‘লুট’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখেন তিনি। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বলবিন্দর সিংহ ফেমাস হো গয়া’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন মিকা। দু’টি ছবিই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
চলতি বছরে মুক্তি পাওয়ার কথা ‘ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল’ নামের কমেডি ঘরানার ছবির। এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে মিকাকে।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মরাঠি, উর্দু ছবিতে গান গেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সুখবিন্দর সিংহ। হাতেগোনা দু’একটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি।
২০১০ সালে রামগোপাল বর্মার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রক্তচরিত্র’। এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন সুখবিন্দর। একই বছর ‘কুছ করিয়ে’ নামের হিন্দি ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় গায়ককে। কিন্তু বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে সে ছবি। তার পর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি সুখবিন্দরকে।
জনপ্রিয় বলি গায়ক উদিত নারায়ণের পুত্র আদিত্য নারায়ণ। হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন তিনিও। তবে গানের রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালক হিসাবে অধিক পরিচিত তিনি।
হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে আদিত্যকে। ২০১০ সালে বিক্রম ভট্টের পরিচালনায় ‘শাপিত’ নামের হরর ঘরানার ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় উদিত-পুত্রকে। কিন্তু ছবিটি ভাল ব্যবসা করেনি। তার পর আর কোনও ছবিতে অভিনয় করতেও দেখা যায়নি আদিত্যকে।
বলিউডের জনপ্রিয় র্যাপ সঙ্গীতশিল্পীদের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম রয়েছে হানি সিংহের। একাধিক হিন্দি ছবিতে গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০১২ সালে ‘মির্জা— দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ নামের একটি পঞ্জাবি ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন হানি। এক বছর পর ‘তু মেরা ২২ ম্যায় তেরা ২২’ নামের একটি পঞ্জাবি ছবিতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য এক্সপোস’ নামের একটি হিন্দি ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন হানি। এই ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু অভিনয়দক্ষতা নিয়ে কটাক্ষের শিকার হন গায়ক। তার পর আর হিন্দি ছবিতে অভিনয় দেখা যায়নি হানিকে।
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জোরাওয়ার’ নামের একটি পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন হানি। এর পর আর বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।