সম্প্রতি প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভমেলায় গিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন মমতা কুলকার্নি। এ কথা বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। জানা গিয়েছে, পূর্বাশ্রমের যাবতীয় স্মৃতি বিসর্জন দিয়ে পিণ্ডদান করেছেন মমতা। কিন্নর আখড়ার অধীনে ‘মাই মমতা নন্দগিরি’ নাম গ্রহণ করেছেন তিনি। আখড়ার তরফ থেকে তাঁর ‘পট্টাভিষেক’ও হয়েছে।
মহাকুম্ভের মেলা প্রতি ১২ বছর অন্তর বসে ভারতের চারটি স্থানে— হরিদ্বার, নাসিক, উজ্জয়িনী এবং প্রয়াগরাজে (পূর্বতন ইলাহাবাদ)। এর আগে ২০১৩ সালে প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় গিয়েছিলেন মমতা। তার আগের বছর গঙ্গাস্নান সেরেছিলেন হরিদ্বারে, জানিয়েছিলেন নিজেই। চলতি মাসে প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন তিনি।
গেরুয়া বস্ত্র, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, এলোচুল, কপালে তিলক। এই ভাবেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন মমতা। মন্ত্রপাঠের সঙ্গে চলছিল সন্ন্যাসধারণের প্রক্রিয়া। এমনই এক মুহূর্তে কেঁদে ফেলেন মমতা। তাঁর গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় এক নতুন মালা। উপস্থিত সন্ন্যাসিনীরা তাঁর মাথায় ঢেলে দেন দুধ। দুধস্নানের পরে আরও এক গেরুয়া বস্ত্রে মুড়ে দেওয়া হয় মমতাকে। একে একে সবাই ফুলের মালা পরিয়ে দেন তাঁকে। এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে।
মমতার এমন রূপ দেখে সমালোচনা করেছেন যোগগুরু রামদেব। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের যাবতীয় কিছু ভোগ করে আচমকা সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা। ভাবছেন এক দিনেই মহামণ্ডলেশ্বর তকমা পেয়ে যাবেন। নিজেকে ‘বাবা’ তকমা দিয়ে মহাকুম্ভে প্রচার পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। সেটাও মেনে নেব না। কুম্ভের সারমর্ম হল মানবতা, দেবত্ব, সাধুত্ব তুলে ধরা। সনাতন ধর্ম একটা অনুভূতি, চিরন্তন সত্য, যা অস্বীকার করা যায় না। তাকে নিয়ে হেলাফেলাও করা যায় না।’’
‘করণ অর্জুন’, ‘ঘাতক’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। হিন্দি ভাষার পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছিলেন তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, বাংলা এবং কন্নড় ভাষার ছবিতেও।
শুধুমাত্র মমতা নন, আলোর রোশনাই ছেড়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন আরও বহু তারকা। তাঁরা কেউ ছিলেন টেলিভিশনের পরিচিত মুখ। কেউ আবার বড় পর্দায় অভিনয় করতেন। তালিকায় রয়েছে বিনোদ খন্না, তনুশ্রী দত্তের পাশাপাশি আরও অনেকের নাম।
যাটের দশকের শেষ দিকে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন বলি অভিনেতা বিনোদ খন্না। কেরিয়ারের চূড়ায় থাকাকালীন ওশোর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি। আধ্যাত্মিক চিন্তায় তিনি এতটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে, কেরিয়ার এবং সংসার ছে়ড়ে তিনি ওশোর আশ্রমে চলে যান। পাঁচ বছর সন্ন্যাসজীবন কাটানোর পর তিনি অবশ্য আবার অভিনয়জীবনে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেন।
২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর অভিনয় করে কেরিয়ারের ঝুলিতে ‘আশিক বনায়া আপনে’, ‘ভাগম ভাগ’, ‘ঢোল’, ‘গুড বয়, ব্যাড বয়’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন বলি নায়িকা তনুশ্রী দত্ত।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অ্যাপার্টমেন্ট’ ছবিতে শেষ অভিনয় দেখা যায় তনুশ্রীর। তার পর হঠাৎ করে বলিপাড়া থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। জানা যায়, অভিনয় থেকে দূরে সরে আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দে়ড় বছর আশ্রমে কাটিয়েছেন তনুশ্রী। এমনকি, লাদাখে গিয়ে বৌদ্ধ দর্শন সম্পর্কেও জ্ঞানলাভ করেছেন। এখনও অভিনয় থেকে দূরেই রয়েছেন নায়িকা।
ছোট পর্দার পরিচিত মুখ ছিলেন অনঘা ভোসলে। ‘অনুপমা’ নামের জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করে খ্যাতি পান তিনি। কিন্তু তাঁর মন চলে যায় আধ্যাত্মিকতার দিকে।
টেলিপা়ড়ায় জনশ্রুতি, কোভিড অতিমারি চলাকালীন অনঘা আধ্যাত্মিকতার দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়েন। কৃষ্ণের ভক্তে পরিণত হন নায়িকা। অভিনয়জীবন ছেড়ে তাই আধ্যাত্মিকতা নিয়েই রয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালে টেলিভিশনের নামকরা রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস্’-এর সপ্তম সিজ়নে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন সোফিয়া হায়াত। সেখান থেকেই পরিচিতি পান তিনি। কিন্তু বেশি দিন আলোর রোশনাইয়ে থাকেননি সোফিয়া।
২০১৬ সালে বিনোদনজগৎকে বিদায় জানান সোফিয়া। ২০১৬ সালের জুন মাসে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন তিনি।
১৯৯৬ সালে অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন বরখা মদন। হিন্দি এবং পঞ্জাবি ভাষার ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন তিনি।
২০১২ সালে অভিনয়জগৎ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বরখা। নাম পরিবর্তন করে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছেন তিনি।
স্কুলজীবন থেকে নাটকের মঞ্চ থেকে অভিনয়ে হাতেখড়ি অণু আগরওয়ালের। তার পর মডেলিংজগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন তিনি। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি ‘আশিকি’তে নায়িকার ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু বলিপাড়ার জাঁকজমক-ব্যস্ততা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেলেন নায়িকা।
১৯৯৯ সালে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অণু। চিকিৎসা চলাকালীন প্রায় এক মাস কোমায় ছিলেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, দুর্ঘটনার পর আগেকার জীবনের স্মৃতি আবছা হয়ে যায় তাঁর।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর উত্তরাখণ্ডের একটি আশ্রমে চলে যান অণু। সেখানে গিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে মুম্বইয়ে থাকেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিজস্ব একটি সংস্থা চালান অণু।