World Dictators

নরমাংস খাওয়া থেকে দাঁত না মাজা! হিটলার-মুসোলিনি-মাওয়ের অদ্ভুত স্বভাব জানলে চমকে যাবেন

হিটলার-মুসোলিনি-মাওয়ের মতো তাবড় স্বৈরাচারীর ছিল অদ্ভুত ধরনের স্বভাব। কারও বিরুদ্ধে উঠেছে নরমাংস খাওয়ার অভিযোগ। কেউ আবার আজীবন দাঁতে ছোঁয়াননি টুথব্রাশ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১০:১৩
Share:
০১ ২৫

অ্যাডল্‌ফ হিটলার থেকে শুরু করে জোসেফ স্ট্যালিন বা মাও জে দং। বিশ্বের তাবড় স্বৈরাচারীর মধ্যে লক্ষ করা গিয়েছে অদ্ভুত কিছু আচরণ। যা তাঁদের কুখ্যাতিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।

০২ ২৫

ইতিহাসবিদেরা স্বৈরাচারীদের ভীরু ও কাপুরুষ প্রবৃত্তির মানুষ বলেন। কারণ, শক্তিশালী হলে ক্ষমতায় আসার জন্য তাঁরা বলপ্রয়োগ করতেন না। আমজনতার একটা বড় অংশকে প্রাণ দিয়ে যার খেসারত দিতে হয়েছে।

Advertisement
০৩ ২৫

তথ্য বলছে, বিদেশি হামলাকারীদের চেয়ে স্বৈরাচারীদের হাতে নিজের দেশের নাগরিকদের মৃত্যু হয়েছে অনেক বেশি। তাঁদের সকলের মধ্যে দু’টি বিষয়ে সাযুজ্য রয়েছে। একটি হল অবিশ্বাস আর দ্বিতীয়টি হল নির্ধারিত একটি সময়ের পর পতন।

০৪ ২৫

ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের রাজদূত থাকা রাজীব ডোগরা স্বৈরাচারীদের জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন। সেখানে তাঁদের বেশ কিছু অদ্ভুত আচরণের উল্লেখ করেছেন প্রাক্তন এই আইএফএস অফিসার।

০৫ ২৫

রাজীব তাঁর লেখা ‘অটোক্র্যাটস— ক্যারিশ্মা, পাওয়ার অ্যান্ড দেয়ার লাইভস’ বইতে রোমানিয়ার শাসক নিকোলাই চশেস্কুর উদাহরণ দিয়েছেন। মৃত্যুর এক দশক পরও যাঁর আতঙ্ক থেকে বেরোতে পারেনি পূর্ব ইউরোপের ওই দেশ।

০৬ ২৫

রাজীবের দাবি, রোমানিয়ার আমজনতার মধ্যে সর্ব ক্ষণ একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করত। তাঁদের বেশির ভাগই মনে করতেন, চশেস্কুর লোকজন কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। যার জেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথাও যেতে ভয় পেতেন তাঁরা।

০৭ ২৫

‘‘রাস্তায় হাঁটার সময়ে অনেকেই হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেন, কেউ তাঁদের অনুসরণ করছেন কি না। পার্কে বসে কেউ সংবাদপত্র পড়লে, আশপাশের সকলেই তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। খবরের কাগজ ফুটো করে কেউ নজর রাখছেন কি না, তা খোঁজা হত।’’ বইতে লিখেছেন রাজীব।

০৮ ২৫

বিষয়টি নিয়ে রোমানিয়ার জনপ্রিয় থিয়েটার অভিনেতা ইয়ন কারামিত্রের সঙ্গে কথা বলেন প্রাক্তন ভারতীয় রাজদূত। কারামিত্র তাঁকে বলেন, ‘‘আমরা কী খাব, কোন জিনিসটা কিনব, কার সঙ্গে কথা বলব আর কতটা বলব— সবটাই রাষ্ট্র ঠিক করত।’’

০৯ ২৫

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, স্বৈরাচারীদের নিষ্ঠুর স্বভাবের নেপথ্যে তাঁদের শৈশবের বড় ভূমিকা রয়েছে। লেভিন রেড্ডি ও অ্যাডাম জেমস তাঁদের ‘থার্টিন ফ্যাক্টস অ্যাবাউট বেনিটো মুসোলিনি’ বইয়ে এর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

১০ ২৫

রেড্ডি-জেমস লিখেছেন, ছোট থেকেই আর পাঁচটা শিশুর থেকে একেবারে আলাদা ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ইটালির ‘ইলে ডুচে’। অনুশাসনে আনতে মা-বাবা তাঁকে একটি ক্যাথলিক বোর্ড স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন।

১১ ২৫

কিন্তু, সেখানকার শিক্ষক বা অন্য কর্মীরা যে মুসোলিনিকে বাগে আনতে পেরেছিলেন, এমনটা নয়। মাত্র ১০ বছর বয়সে এক সহপাঠীর উপর ছুরি নিয়ে চড়াও হন তিনি। ফলে তৎক্ষণাৎ স্কুল থেকে বিতড়িত হন এক সময়ের ইটালির সর্বময় কর্তা।

১২ ২৫

২০ বছরে পা দিতে না দিতে মুসোলিনির বিরুদ্ধে এই ধরনের একাধিক হামলার অভিযোগ উঠেছিল। নিজের এক প্রেমিকাকেও ছুরি দিয়ে কোপাতে হাত কাঁপেনি তাঁর। কুর্সিতে বসার পর নিজের ‘ঐশ্বরিক’ ইমেজ তৈরি করতে ব্যাপক মিথ্যা প্রচার শুরু করেছিলেন ইলে ডুচে।

১৩ ২৫

২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ‘দ্য নিউ স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় ইতিহাসবিদ সিয়ো প্রোডোর একটা উত্তর সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। যার নাম ছিল, ‘ডিক্টেটরস: দ্য গ্রেট পারফরমার্স’। সেখানে তিনি লিখেছেন, ১৯২৫ সালে তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য স্কুলে স্কুলে বিনামূল্যে ৪০ হাজার রেডিও বিলি করেছিলেন মুসোলিনি।

১৪ ২৫

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আট লক্ষ। ওই সময়ে মুসোলিনির ভাষণ শোনার জন্য রাস্তার চৌমাথায় বড় বড় লাউডস্পিকার লাগানো হয়েছিল। সাবানের উপর ছিল তাঁর ছবি। যাতে স্নানের সময়েও দেশের সর্বাধিনায়কের ছবি আমজনতার চোখে ভেসে ওঠে।

১৫ ২৫

এ ছাড়া নিজের দফতরের আলো সারা রাত জ্বালিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুসোলিনি। তিনি যে সর্ব ক্ষণ দেশের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, তা বোঝাতে চেয়েছিলেন ইটালির প্রাক্তন স্বৈরাচারী শাসক। সোভিয়েত শাসক (বর্তমান রাশিয়া) স্ট্যালিনও যৌবনে একাধিক দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন।

১৬ ২৫

বলশেভিক পার্টির সাম্যবাদী আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল টাকার। যা জোগাড় করতে রুশ ধনী ব্যবসায়ীদের অপহরণের অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল, ইয়োসেব বেসারিয়নিস ডিজে জুগাশভিলি। পরবর্তী কালে যা বদল করে ‘স্ট্যালিন’ করে নেন তিনি। যার অর্থ লোহার তৈরি।

১৭ ২৫

লাখো লাখো ইহুদি হত্যার কুচক্রী জার্মান ‘ফ্যুয়েরার’ হিটলার আবার ছিলেন পুরোপুরি নিরামিশাষী। জীবনের শেষ দিকে শুধুমাত্র সুপ ও পেষাই করা আলু খেতেন তিনি। তবে ফুড টেস্টারেরা পরখ না করলে খাবার মুখে তুলতেন না হিটলার। সর্ব ক্ষণ বিষ প্রয়োগে খুনের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াত তাঁকে।

১৮ ২৫

হিটলারের ফুড টেস্টার মার্গোভ ভয়েলভ পরবর্তী কালে লিখেছিলেন, ‘‘ফ্যুয়েরারকে তাজা সব্জি খেতে দেওয়া হত। ইটালিয়ান পাস্তা পছন্দ করতেন তিনি। কিন্তু, খাবার এলেই মনে হত, আজই আমাদের শেষ দিন। ফলে ফুড টেস্টিংয়ের সময়ে খাবারের স্বাদ বুঝতে পারতাম না। শুধু যন্ত্রের মতো কাজ করে যেতাম।’’

১৯ ২৫

উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার কিম জং ইল হাঙর আর কুকুরের মাংসের সুপ খেতেন চেটেপুটে। ডেমিক বার বার লিখেছেন, খাবার পরিবেশনের আগে তাঁর প্রমীলা বাহিনী তা চেখে দেখত। প্রতিটা ভাতের কণা সমান ও একই রঙের রয়েছে কি না, তা ভাল করে পরীক্ষা করতেন তাঁরা।

২০ ২৫

কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পল পটের আবার পছন্দ ছিল গোখরো সাপের মাংস। তাঁর রাঁধুনি রাজীব ডোগরাকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা সাপ মেরে তা বাগানে ঝুলিয়ে রাখতাম। পরে মাথা কেটে সরীসৃপগুলির রক্ত হোয়াইট ওয়াইনের সঙ্গে মিশিয়ে খেতাম। শেষে সাপটাকে কুচি কুচি করে কেটে সেই মাংস রান্না করে প্রধানমন্ত্রীকে পরিবেশন করা হত।’’

২১ ২৫

উগান্ডার সেনাশাসক ইদি আমিনের বিরুদ্ধে নরমাংস খাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর খাদ্যাভাসের বিষয়টি ‘ডিক্টেটরস উইথ স্ট্রেঞ্জ ইটিং হ্যাবিটস’ শীর্ষক একটি লেখায় তুলে ধরেন সাংবাদিক অনিতা সুরিউইচ। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে আমিন বলেছিলেন, ‘‘আমি নরমাংস খুব একটা পছন্দ করি না। কারণ, ওটা নোনতা। স্বাদে আহামরি কিছু নয়।’’

২২ ২৫

চিনের চেয়ারম্যান মাও আবার আজীবন দাঁত ব্রাশ করেননি। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জিসুই লি-র লেখা ‘প্রাইভেট লাইফ অফ চেয়ারম্যান’ মাও থেকে জানা যায়, এর জন্য তাঁর মাড়িতে পাথর জমে গিয়েছিল। এই নিয়ে কথা উঠলেই মাও বলতেন, ‘‘বাঘ-সিংহ কখনওই তাদের দাঁত পরিষ্কার করে না।’’

২৩ ২৫

মায়ানমারের সেনাশাসক জেনারেল নে উইনের আবার ছিল জুয়ো ও গল্‌ফের নেশা। খুব দ্রুত রেগে যেতেন তিনি। রাজীব ডোগরার লেখা বই অনুযায়ী, এক বার স্ত্রীর গলায় ছাইদান ছুড়ে মারেন তিনি। আর তাতে উইনের স্ত্রী গুরুতর জখম হয়েছিলেন।

২৪ ২৫

ডোগরা আরও জানিয়েছেন, জ্যোতিষে মারাত্মক বিশ্বাস ছিল উইনের। একবার এক গণক তাঁকে বলেন, ৯ সংখ্যাটি তাঁর জন্য শুভ। সঙ্গে সঙ্গে ১০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জেনারেল নে। বদলে ৯০ টাকার নোট চালু করতে জারি হয় বিজ্ঞপ্তি। ফলস্বরূপ মায়ানমারের আর্থিক অবস্থা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।

২৫ ২৫

১৯৮৯ সালে ইরাকের ক্ষমতা দখলের পর সাদ্দাম হুসেন তাঁর ‘বাথ সোশ্যালিস্ট পার্টি’র গণকনভেনশনের আয়োজন করেন। যার ভি়ডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়েছিল। বৈঠকে পৌঁছে ৮৬ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে বলে ঘোষণা করেন সাদ্দাম। তাঁদের মধ্যে ২২ জনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে ইরানি সেনা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement