লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তবে সম্পত্তির নিরিখে বিচার করলে নবনির্বাচিত সাংসদদের তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে আট জন সাংসদই বিজেপির সদস্য। তালিকায় অমিত শাহের পাশাপাশি রয়েছে অশ্বিনী বৈষ্ণবের নাম।
এনডিএ জাদুসংখ্যা ২৭২ পার করলেও বিজেপি আটকে গিয়েছে ২৪০-এ। তাই নতুন সরকার গড়তে মোদী, শাহদের নির্ভর করতে হয়েছে এনডিএ-র শরিকদের উপর। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় মোদী-সহ ৭২ জন সাংসদ রাষ্ট্রপতি ভবনে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। তাঁদের মধ্যে ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী। বাকিরা কেউ প্রতিমন্ত্রী, কেউ আবার স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তার পর থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে সংসদের ধনী সদস্যদের নিয়ে।
ভোটাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর তরফে ধনী সাংসদদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে আট জন সাংসদই বিজেপি দলের সদস্য।
ধনী সাংসদের প্রথম দশের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছেন পঙ্কজ চৌধরি। অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের মহারাজগঞ্জ থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন পঙ্কজ। এডিআর-এর তথ্যানুযায়ী, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪১ কোটি টাকা।
তালিকায় নবম স্থানে নাম রয়েছে ভি সোমান্নার। পূর্বে কর্নাটকের আবাসন ও পরিকাঠামো উন্নয়ন মন্ত্রী পদে ছিলেন তিনি।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটকের গোবিন্দরাজনগর কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন ভি সোমান্না। বর্তমানে জলশক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি রেল মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন তিনি। এডিআর সূত্রে খবর, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা।
প্রথম দশ জন ধনী সাংসদের তালিকায় অষ্টম স্থানে বিজেপির আরও এক সদস্যের নাম। যদিও ভি সোমান্নার তুলনায় সম্পত্তির নিরিখে সামান্যই এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম স্থানে রয়েছে কৃষণপাল গুর্জরের নাম।
২০১৪ সাল থেকে পর পর তিন বার লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে হরিয়ানার ফরিদাবাদ কেন্দ্র থেকে জিতেছেন গুর্জর। সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের পাশাপাশি বিদ্যুৎ এবং ভারী শিল্প মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভায় সমবায় মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন গুর্জর। এডিআর সূত্রে জানা যায়, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৬২ কোটি টাকা।
মোদী ২.০-এর মতো ২০২৪ সালে মোদী ৩.০ মন্ত্রিসভায়ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে অমিত শাহকে। গুজরাতের গান্ধীনগরের বিজেপি প্রার্থী শাহের নাম নতুন মন্ত্রিসভার ধনী সদস্যদের তালিকায় রয়েছে সপ্তম স্থানে। এডিআর-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শাহের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৬৫ কোটি টাকা।
ধনী সাংসদদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে নাম রয়েছে মুম্বই উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির জয়ী প্রার্থী পীযূষ গয়ালের। বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্বভার পেয়েছেন তিনি। এডিআর সূত্রে জানা যায়, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১১০ কোটি টাকা।
মোদী ৩.০ ক্যাবিনেটে পরিকল্পনা মন্ত্রকের এবং পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন বিজেপির রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ।
হরিয়ানার গুরগাঁও কেন্দ্র থেকে পর পর তিন বার ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন ইন্দ্রজিৎ। এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১২১ কোটি টাকা। সংসদের ধনী সদস্যদের প্রথম দশের তালিকায় তাঁর নাম পঞ্চম স্থানে।
তথ্য সম্প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক এবং রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে রবিবার নতুন মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণ করেছেন অশ্বিনী বৈষ্ণব। ওড়িশা থেকে রাজ্যসভার সদস্য তিনি।
এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভার ধনী সাংসদদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন অশ্বিনী। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৪৪ কোটি টাকা।
কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৪ সালের লোকসভার ভোটে জেডিএস দলের প্রার্থী হিসোবে কর্নাটকের চন্নাপটনা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
মোদী ৩.০ মন্ত্রিসভায় ইস্পাত মন্ত্রক এবং ভারী শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্বভার পেয়েছেন কুমারস্বামী। এডিআর সূত্রে খবর, তৃতীয় মন্ত্রিসভার তৃতীয় ধনী সদস্য তিনি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২১৭ কোটি টাকা।
গোয়ালিয়রের রাজপরিবারের সদস্য। ২০২০ সালে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগদান। মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন মধ্যপ্রদেশের গুণার বিজয়ী বিজেপি প্রার্থী এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে।
এডিআর সূত্রে খবর, মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় ধনী সদস্য জ্যোতিরাদিত্য। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪২৫ কোটি টাকা।
এনডিএ ২৭২ জাদুসংখ্যা পার করলেও বিজেপি আটকে গিয়েছে ২৪০-এ। তাই নতুন সরকার গড়তে মোদী, শাহদের নির্ভর করতে হয়েছে এনডিএ-র শরিকদের উপর। এনডিএ-র অন্যতম শরিক দল অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)।
টিডিপি দলের সদস্য চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি। পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এবং যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন তিনি। চন্দ্রশেখরই নতুন মন্ত্রিসভার ধনীতম সদস্য বলে এডিআর সূত্রে জানা যায়।
অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টু লোকসভা কেন্দ্র থেকে এ বার টিডিপি-র টিকিটে লড়েছিলেন চন্দ্রশেখর। প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটে জগন্মোহন রেড্ডির দল ওয়াইএসআরসিপি-র প্রার্থী কিলারি ভেঙ্কটা রোয়াইয়াকে হারিয়েছেন তিনি।
এডিআর-এর তথ্যানুযায়ী, চন্দ্রশেখরের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫,৭০৫ কোটি টাকা। নিজের সম্পত্তির পাশাপাশি পারিবারিক সম্পত্তিও রয়েছে চন্দ্রশেখরের। সেই কারণেই অন্য সাংসদদের তুলনায় আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে চন্দ্রশেখর।
এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই কোটিপতি। যা ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের থেকেও বেশি। সে বার কোটিপতি সাংসদদের হার ছিল ৪৪ শতাংশ।