সুপ্রিম কোর্টে অন্তর্বর্তী জামিন পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ১ জুন, লোকসভা ভোটের শেষ দফা পর্যন্ত জেলের বাইরে থাকবেন তিনি। ২ জুন তাঁকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। দিল্লির ‘আবগারি দুর্নীতিকাণ্ডে’ গত ২১ মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই থেকে তিহাড়ে বন্দি আপ প্রধান। গ্রেফতারির ৫০ দিন পর জামিন পেলেন কেজরী। কেমন ছিল এই ৫০ দিন?
আবগারি দুর্নীতি মামলায় ২১ মার্চ রাতে ইডির হাতে গ্রেফতার হন কেজরীওয়াল। তার আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ন’বার তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। ২১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে পৌঁছয় ইডি। ঘণ্টা দুয়েকের তল্লাশি অভিযান শেষে বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর মোবাইল ফোন। এর পরেই রাত ৯টা নাগাদ কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
২২ মার্চ কেজরীওয়ালকে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করানো হয়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় ইডি। আদালতে ঢোকার পথে সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে কেজরীওয়াল বলেছিলেন, “আমার জীবন দেশের প্রতি নিবেদিত।” সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানান, জেলের ভিতর থেকেও তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন।
যদিও ইডি আদালতে দাবি করে, কেজরীওয়াল ‘আবগারি দুর্নীতির কিংপিন’। ইডি আদালতে জানিয়েছিল, অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনেই গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। আপ প্রধানের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি আরও জানিয়েছিল, অপরাধে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কেজরীওয়াল। কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার জন্যই তিনি আবগারি নীতি প্রণয়ন করেছিল বলে দাবি করা হয়। ইডি এ-ও দাবি করে, আবগারি ‘দুর্নীতি’র টাকা গোয়ার নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছিল আপ।
কেজরীওয়ালকে সাত দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। ২৮ মার্চ পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। অন্য দিকে, ইডির গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা করেছিলেন কেজরীওয়াল। সেই মামলার শুনানি ঠিক হয় বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চে। তবে শুনানির আগেই মামলা প্রত্যাহার করে নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
আবগারি নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার পর কেজরীওয়ালকে নিয়ে মুখ খোলেন তাঁর এক সময়ের বন্ধু অণ্ণা হজারে। তিনি জানান, কেজরী কর্মের ফলই ভুগছেন! তবে একদা তাঁর ‘ভাবশিষ্য’ কেজরীর জন্য ‘কষ্ট’ও পাচ্ছেন বলে জানান অণ্ণা।
উল্লেখ্য, গ্রেফতার হলেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি আপ প্রধান। বরং কেজরীর দলের তরফে জানানো হয়েছিল, কেজরীই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। দেশের ইতিহাসে কেজরীওয়ালই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু জেলের ভিতর থেকে প্রশাসন চালানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে বাইরে তো বটেই, আপের একাংশের ভিতরেও সংশয় ছিল।
কিন্তু কেজরীওয়ালকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর আবেদন করে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় দিল্লি হাই কোর্টে। দায়ের হওয়া ওই মামলায় কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে কোন আইন বলে গ্রেফতারির পর কেজরীকে মুখ্যমন্ত্রী রাখা হবে। হলফনামায় মামলাকারী এ-ও দাবি করেন, আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এমন এক জনকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা সমীচীন নয়। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকে কেজরীওয়াল যে বেতন নিতেন, তার পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মামলাকারী।
এর পর ২৩ মার্চ নিম্ন আদালতের সাত দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেন আপ প্রধান। সেই সঙ্গে দ্রুত শুনানির আর্জিও জানানো হয়। কিন্তু কেজরীওয়ালের আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ করে দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। ২৪ মার্চ ইডি হেফাজতে বসেই সরকারি কাজ সারেন কেজরীওয়াল। ইডি হেফাজতে বসে জল দফতরকে একটি আদেশ জারি করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। ভারতের ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথম।
এর মধ্যেই কেজরীর গ্রেফতারির প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন আপ-এর কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনাও ছড়ায় দিল্লিতে। রাজধানীর নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়েছিল ২৬ মার্চ। আপ সমর্থকেরা জমায়েত করার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের। বেশ কয়েক জনকে আটক করে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ।
২৭ মার্চও দিল্লি হাই কোর্টে স্বস্তি পাননি কেজরীওয়াল। এক সপ্তাহের জন্য ইডি হেফাজতেই রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। ২ এপ্রিলের মধ্যে ইডির থেকে জবাব তলব করে আদালত। এর পর দিন, অর্থাৎ ২৮ মার্চ কেজরীওয়ালকে আবার দিল্লির রাউস অ্যাভেনিউ কোর্টে হাজির করানো হয়। আদালতে যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমে কেজরী জানান, তাঁর গ্রেফতারি আসলে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’। সে দিন তাঁর ইডি হেফাজতের মেয়াদ আরও চার দিনের জন্য বৃদ্ধি করা হয়।
হেফাজতে কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলে ইডি। এর পর ১ এপ্রিল দিল্লির আবগারি মামলায় কেজরীওয়ালকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। ১ এপ্রিল বিকেলেই কেজরী তিহাড়ে প্রবেশ করেন। তিহাড়ের জেলে দু’নম্বর সেলে ১৪ বাই ৮ ফুটের একটি কক্ষে ঠাঁই হয় তাঁর। তিহাড় জেলের এই অংশেই রয়েছেন বেশ কয়েক জন কুখ্যাত দুষ্কৃতী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবেশীদের মধ্যে ছিলেন ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন’ দাউদ ইব্রাহিমের এক সময়ের সঙ্গী ছোটা রাজনও। কিন্তু কেজরীওয়ালকে ওই ওয়ার্ডে রাখা হয়নি। তাঁকে ওই ওয়ার্ড থেকে বেশ কিছুটা দূরে সাধারণ ব্যারাকে রাখা হয়েছিল।
এক দশকেরও বেশি সময় পর তিহাড় জেলে ঢুকতে হয় আপ প্রধানকে। ২০১১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় অণ্ণা হাজারের সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিছু সময় তিহাড়ে কেটেছিল তাঁর। ১ এপ্রিল তিহাড়ে প্রবেশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর শরীরে শর্করার মাত্রা ৫০-এর নীচে নেমে গিয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়। এর পর ৩ এপ্রিল আদালতে কেজরীর দলের কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চেয়ে আদালতে সওয়াল করে ইডি।
কেজরীওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের আর্জি জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। ৪ এপ্রিল সেই মামলা খারিজ করে দেন দিল্লি হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মনমোহনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এই মামলা খারিজ করে দিয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কি না, সেটা তাঁর বিষয়। গণতন্ত্রকে নিজের পথে চলতে দিন।’’ মামলাটি দায়ের করেছিলেন হিন্দু সেনা নামে একটি সংগঠনের সভাপতি বিষ্ণু গুপ্ত। এর আগেও দু’বার ওই মামলা খারিজ করেছিল আদালত। এর মধ্যেই কেজরীর দলের আরও কয়েক জন শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে তলব করে ইডি। জেরাও করা হয় তাঁদের।
৯ এপ্রিল দিল্লি হাই কোর্ট জানায় আবগারি মামলায় অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি বেআইনি নয়। গ্রেফতারি চ্যালেঞ্জ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আদালতে যে আবেদন করেছিলেন, তা-ও খারিজ করে দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। দিল্লি হাই কোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আপ প্রধান।
এর পর আদালতে আবার ধাক্কা খান কেজরী। জেলে আইনজীবীদের সঙ্গে আইনি বৈঠকের সময়সীমা বৃদ্ধি করার জন্য দিল্লির অন্য এক আদালতে আবেদন করেছিলেন কেজরী। তাঁর আইনজীবী আদালতকে জানান, কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে ৩৫ থেকে ৪০টি মামলা চলছে। সেই সব মামলা নিয়ে জেলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। তিনি মামলাগুলি বুঝে যথাযথ নির্দেশ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না। কিন্তু কেজরীর সেই আবেদন খারিজ করে দেয় ওই আদালত।
কেজরীওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে আবার একটি মামলা দায়ের হয় দিল্লি হাই কোর্টে। কিন্তু তার জন্য ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় মামলাকারী তথা প্রাক্তন সাংসদ সন্দীপ কুমারকে। পাশাপাশি তাঁকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করে আদালত।
এর মধ্যেই চাকরি খোয়ান কেজরীওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বিভব কুমার। ২০০৭ সালের একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে ছাঁটাই করে দিল্লির ভিজিল্যান্স দফতরের বিশেষ সচিব ওয়াইভিভিজে রাজাশেখর। এর পরেই কেন্দ্রে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে আপ। দিল্লির মন্ত্রী তথা আপ নেত্রী অতিশী মারলেনার দাবি করেন, ‘‘কোনও প্রমাণ ছাড়াই ভুয়ো মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ, দিল্লির নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা অতীতের কিছু ঘটনা থেকে বুঝতে পারছি যে, একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে।”
আবগারি মামলায় ইডির গ্রেফতারি বেআইনি, এমন দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আপ প্রধান। ১৫ এপ্রিল সেই মামলার শুনানিতে কেজরীর আবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রিপোর্ট তলব করে সুপ্রিম কোর্ট। ২৭ এপ্রিল ইডিকে তাদের রিপোর্ট জমা করতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। তবে জামিন পাননি কেজরী।
সুপ্রিম কোর্টের পর দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতেও স্বস্তি পাননি কেজরীওয়াল। ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে ১৫ এপ্রিল আপ প্রধানকে আদালতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির করানো হয়। শুনানি শেষে বিচারক কেজরীওয়ালের জেল হেফাজতের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন।
এর পর জেলের মধ্যে যেন তাঁকে ইনসুলিন নিতে দেওয়া হয়, এমন দাবি তুলে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে মামলা করেন কেজরীওয়াল। অন্য দিকে আপ দাবি করে, জেলে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে কেজরীওয়ালকে। একই অভিযোগ করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী সুনীতা কেজরীওয়ালও।
পরামর্শের জন্য ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁর পারিবারিক চিকিৎসকের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলতে দেওয়া হোক— দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন কেজরী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর সেই আবেদনও ২২ এপ্রিল খারিজ করে দেয় আদালত। তবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখার জন্য এমস-কে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার নির্দেশও দেওয়া হয়। কেজরীর রক্তে শর্করার মাত্রা ৩০০ পার হবার পর জেলেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইনসুলিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিহাড় কর্তৃপক্ষ।
২৩ এপ্রিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বৃদ্ধি করে দিল্লির আদালত। জানানো হয়, ৭ মে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করানো হবে।
২৯ এপ্রিল জেলে বসে মুখ্যমন্ত্রিত্ব চালানো নিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েন কেজরীওয়াল। আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধানের কাছে আদালত জানতে চায়, জেলে বসে থেকে কী ভাবে তিনি এমন একটি পদের দায়িত্ব সামলাতে পারেন যেখানে সর্ব ক্ষণের জন্য দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন? কেজরীওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে একটি আবেদনের পর্যবেক্ষণে দিল্লি হাই কোর্ট বলেছিল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পদ শুধু আসন অলঙ্কৃত করার জন্য নয়। এই পদে থাকতে হলে দায়িত্ব পালন করতে সর্ব ক্ষণের জন্য হাজিরা অপরিহার্য।’’
অন্য দিকে, ৩০ এপ্রিল লোকসভা ভোটের ঠিক আগে কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ে ইডি। মামলার শুনানির সময় বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ ইডির কৌঁসুলি, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজুর কাছে প্রশ্নের উত্তর চায়। সেই সঙ্গে রাজুর উদ্দেশে দুই বিচারপতির বেঞ্চের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ছিল, ‘‘জীবন এবং স্বাধীনতা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আপনি তা অস্বীকার করতে পারেন না।’’
কেজরী মামলার শুনানি চলাকালীন ৮ মে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিল, কেজরীওয়ালের দায়ের করা মামলা কোনও সাধারণ মামলা নয়। বিচারপতি খন্নার বেঞ্চ জানায়, তারা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর অন্তর্বর্তিকালীন জামিনের আবেদন শুনবে। কারণ, কেজরীওয়াল এক জন জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনে জিতেছেন। নির্বাচনে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে তাঁর। কেজরীওয়ালের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি আদালতে জানায়, ফৌজদারি মামলায় ধৃত সকলের অধিকার সমান। কেজরীওয়ালকে জামিন দিলে ভুল বার্তা যাবে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার কোনও নির্দেশ দেয়নি বিচারপতি খন্না এবং বিচারপতি দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
নির্দেশ এল শুক্রবার। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে অন্তর্বর্তী জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। চলতি লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রচার করতে দেওয়ার জন্য জামিন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, জেল থেকে বেরিয়ে লোকসভার প্রচার করতে পারবেন কেজরী। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে যেতে পারবেন না বা কোনও ফাইল সই করতে পারবেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।