ছাঁদনাতলায় ভারতের প্রথম সারির শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর কন্যা ঈশা অম্বানী। ২০১৮ সালে আনন্দ পিরামলের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন ঈশা। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলি তারকারাও।
ঈশা এবং আনন্দের বিয়ে উপলক্ষে সেজে উঠেছিল মুম্বইয়ের আলটামাউন্ট টোড রেসিডেন্সের অ্যান্টিলিয়া। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, মুকেশ-কন্যার বিয়ে উপলক্ষে খরচ হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকা।
তবে বিয়ের খরচের তালিকায় মুকেশ ছাড়াও প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছেন ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত একাধিক শিল্পপতি। সন্তানদের বিয়ে উপলক্ষে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। মিত্তল থেকে রেড্ডি কোন কোন শিল্পপতি এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মী মিত্তল। লক্ষ্মীর কন্যা ভানিশা মিত্তলের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল নজরকাড়া। ২০০৪ সালে অমিত ভাটিয়াকে বিয়ে করেন ভানিশা। সেই সময় বিশ্বের ‘সবচেয়ে দামি বিয়ে’ হিসাবে নজির গড়েছিল মিত্তল-কন্যার বিয়ে।
২০০৪ সালে প্যারিসে বিয়ে করেন ভানিশা এবং অমিত। একাংশের দাবি, কন্যার বিয়ে উপলক্ষে ২৪০ কোটি টাকা খরচ করেন লক্ষ্মী। আবার অনেকের দাবি, ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে মেয়ের বিয়ে দেন লক্ষ্মী।
শুধুমাত্র মেয়ের বিয়েতেই নয়, নিজের ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতেও ঢেলে খরচ করেন লক্ষ্মী। সৃষ্টি মিত্তল সম্পর্কে লক্ষ্মী মিত্তলের ভাইঝি। ২৬ বছর বয়সি সৃষ্টি ২০১৩ সালে ৩৬ বছর বয়সি গুলরাজ বাহলকে বিয়ে করেন। পেশায় ইনভেসমেন্ট ব্যাঙ্কার গুলরাজ।
বার্সেলোনায় বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় সৃষ্টি এবং গুলরাজের। অস্ট্রেলিয়ার তারকা কাইলি মিনগের পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন বলি তারকা সইফ আলি খান এবং রানি মুখোপাধ্যায়। শোনা যায়, বিয়ে উপলক্ষে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়।
সাহারা গ্রুপের অধিকর্তা সুব্রত রায়ের দুই পুত্র সুশান্ত রায় এবং সীমান্ত রায়ের বিয়ে একই মণ্ডপে হয়। ২০০৪ সালে লখনউয়ের ব্যবসায়ী আমেশ আহুজার কন্যা রিচাকে বিয়ে করেন সুশান্ত।
অভিনেত্রী চাঁদনি তুরের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন সুশান্ত। শোনা যায়, দুই পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে ৫৫৪ কোটি টাকা খরচ করেন সুব্রত।
লখনউয়ের সাহারা স্টেডিয়ামে সুব্রত তাঁর দুই পুত্রের বিয়ের আয়োজন করেন। সারা সপ্তাহ জুড়ে নানা রকম অনুষ্ঠান হয়। অতিথি হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ১১ হাজার জন। খেলার জগৎ থেকে শুরু করে বলিপাড়ার বহু তারকা সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।
স্টালিয়ন গ্রুপের অধিকর্তা এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ব্যবসায়ী হিসাবে নাম করেছেন সুনীল ভাসওয়ানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীলের কন্যা সোনম ভাসওয়ানির বিয়ে উপলক্ষে ২১০ কোটি টাকা খরচ করেন সুনীল।
মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী কমল ফাবিয়ানির পুত্র নবীন ফাবিয়ানিকে বিয়ে করেন সোনম। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সোনম এবং নবীন সাতপাকে বাঁধা পড়েন। ভিয়েনার পালাইস লিয়েকটেনস্টাইন পার্কে মেহন্দির অনুষ্ঠান হয় সোনমের।
বেলভেডেয়ার প্যালেসে বিয়ের মূল অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় সোনম এবং নবীনের। ব্রুনো মার্স এবং সুখবীরের মতো তারকারা তাঁদের বিয়েতে পারফর্ম করেন।
প্রাক্তন নেতা এবং ভারতের শিল্পপতি গলি জনার্দন রেড্ডির কন্যার বিয়ের অনুষ্ঠানও দেখার মতো ছিল। ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর রেড্ডি-কন্যা ব্রাহ্মণী রেড্ডিকে বিয়ে করেন হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী বিক্রমদেব রেড্ডির পুত্র রাজীব রেড্ডি।
পাঁচ দিন ধরে বেঙ্গালুরু প্যালেসে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় ব্রাহ্মণী এবং রাজীবের। খ্যাতনামী রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বলি তারকারা এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
শোনা যায়, ব্রাহ্মণী এবং রাজীবের বিয়েতে ৫০ হাজার অতিথি নিমন্ত্রিত ছিলেন। নিমন্ত্রণ করার জন্য যে কার্ড দেওয়া হয়েছিল, তার জন্যই খরচ হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ব্রাহ্মণী-রাজীবের বিয়েতে ৫৫০ কোটি টাকা খরচ করা হয়।
অতিথিদের ব্রাহ্মণীর বিয়ে উপলক্ষে যে কার্ড বানানো হয় তাতে সোনার জল করা ‘এলসিডি স্ক্রিন’ ছিল। অতিথিরা কার্ড খুললে স্ক্রিনে একটি ভিডিয়ো চালু হত। গানের সঙ্গে ব্রাহ্মণী এবং রাজীবকে ঠোঁট মেলাতে দেখা যেত সেই ভিডিয়োয়।
ললিত তাওয়ার এবং যোগিতা জৌনপুরিয়া— দু’জনের পিতার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে বিয়ে হয় ললিত এবং যোগিতা। শোনা যায়, তাঁদের বিয়ে উপলক্ষে ২৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। তবে একাংশের দাবি, সব মিলিয়ে বিয়ের খরচ নাকি ৫০০ কোটি টাকার ঘরে ছুঁয়েছিল।
৩৩ কোটি টাকা খরচ করে ললিতকে একটি পাঁচ আসনযুক্ত হেলিকপ্টার উপহার দেওয়া হয়। নিজেদের ফার্মহাউসেই ললিতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন যোগিতা। এক হাজার জন কর্মী-সহ মোট ৩০ হাজার অতিথি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খাদ্যতালিকায় ছিল ১০০টির বেশি খাবার।
ললিত এবং যোগিতার বিয়ের অনুষ্ঠানে বলি অভিনেত্রী নেহা ধুপিয়া পারফর্ম করেন। ২ হাজার জন অতিথি নিয়ে প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিকে একটি করে রুপোর বিস্কুট, সাফারি স্যুট এবং নগদ ৪০ হাজার টাকা উপহার দেওয়া হয়।
দিল্লির একটি বিলাসবহুল হোটেলে ললিত এবং যোগিতার রিসেপশনের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে বলি তারকাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।