ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু উপার্জন করতে বিমানবন্দর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে রাস্তায় কাগজও বিক্রি করতে হয়েছে তাঁকে।
৩৩ বছর বয়সি এই যুবক উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর এলাকার বাসিন্দা। এখন অস্ট্রেলিয়ার নবীনতম ব্যবসায়ীদের মধ্যে আমির কুতুবের নাম থাকবে তালিকার একেবারে উপরের দিকে।
তবে তাঁর স্বপ্নপূরণের রাস্তা একেবারেই সুগম ছিল না। আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পড়বেন বলে ২০১২ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেন। এর জন্য তাঁর বাবাকে ঋণও করতে হয়।
জিলংয়ের ডিকলিং ইউনিভার্সিটি থেকে ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এমবিএ শুরু করেন আমির।
একই সঙ্গে নিজের স্টার্টআপ সংস্থার জন্য টাকা জমা করবেন বলেও ঠিক করেন। কিন্তু তাঁর কাছে টাকা ছিল না।
বাবার কাছেও আর্থিক সাহায্য চাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না আমিরের। ছেলেকে এমবিএ করাতে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল তাঁর।
কোনও উপায় না দেখে বিদেশে নিজেই উপার্জনের রাস্তা খোঁজা শুরু করলেন আমির। প্রায় দেড়শোর উপর সংস্থায় চাকরির জন্য আবেদন করেন তিনি।
কিন্তু তাতে কোনও লাভ হচ্ছিল না। বেশি দিন অপেক্ষা না করে তিনি জিলং বিমানবন্দরের সাফাইকর্মীর কাজে যোগ দেন।
তবে, সপ্তাহে চার দিন দৈনিক ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করার পর আমির আর পড়ার জন্য সময় পেতেন না। তাই তিনি অস্ট্রেলিয়ার রাস্তায় কাগজ বিক্রি করতে শুরু করেন।
রাত ৩টে থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কাগজ বিক্রি করে তিনি সারা দিন ধরে পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থায় আবেদনও করছিলেন আমির।
অবশেষে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় শিক্ষানবিশ হিসাবে যোগ দেন তিনি। এর পর অপারেশন ম্যানেজার পদে একটি সংস্থায় যোগ দেন আমির। তাঁর বেতন ছিল মাসে পাঁচ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী প্রায় তিন লক্ষ টাকার কাছাকাছি)।
কিন্তু আমিরের ভাগ্য ছিল সুপ্রসন্ন। টালমাটাল সংস্থা ছেড়ে চলে যান অন্যতম কর্তা। এই সময় আমিরকে কিছু সময়ের জন্য ওই সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার পদের দায়িত্বভার দেওয়া হয়।
এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাননি আমির। এই পদের স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য তিনি আরও পরিশ্রম করা শুরু করেন।
পরিশ্রমের ফলও পেলেন তিনি। ২৫ বছর বয়সেই আমির সেই সংস্থার নবীনতম জিএম হিসাবে উদাহরণ তৈরি করেন।
২০১৪ সালে তিনি একটি ডিজিটাল সংস্থা তৈরি করেন। এ ছাড়াও তিনি চারটি স্টার্টআপ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
অতিমারি চলাকালীন আমির একটি সংস্থা চালু করেছিলেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে কেউ তাঁর প্রতিবেশীকে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সাহায্য করতে পারতেন।
বর্তমানে পেশাদার এবং ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন আমির। তাঁর সংস্থার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ লক্ষ ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আট কোটি টাকা।