অদম্য জেদ আর অধ্যবসায় এক জন মানুষকে কত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তার অনেক দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই। কেউ আর্থিক, কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন। সেই দৃষ্টান্তের তালিকায় নতুন সংযোজন হিমাংশু গুপ্ত।
উত্তরাখণ্ডের সীতারগঞ্জের বাসিন্দা হিমাংশু। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় যথেষ্ট ভাল ছিলেন তিনি।
হিমাংশুর বাবার ছোট একটি চায়ের দোকান ছিল। সেই দোকান থেকে যা আয় হত, তা দিয়েই সংসার চলত। ফলে আর্থিক অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী।
আয় বাড়াতে হিমাংশুও বাবার চায়ের দোকানে কাজ করা শুরু করেন। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে চায়ের দোকানে চলে যেতেন। পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইংরেজি শেখার জন্য প্রতি দিন ৭০ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হত হিমাংশুকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনা চালানোর জন্য নিজে পড়ানো শুরু করেন। শুধু তাই-ই নয়, অর্থ উপার্জনের জন্য ব্লগও লিখতেন।
এক সাক্ষাৎকারে হিমাংশু বলেন, “পরিবারের উপর অসম্ভব আর্থিক বোঝা ছিল। বাড়িতে বাবাকে খুব একটা বেশি দেখতে পেতাম না। কারণ কাজের খোঁজে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন।”
হিমাংশু আরও বলেন, “পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে মামারবাড়িতে চলে যেতে হয়। সেখানেই একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি হই।”
পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন হিমাংশু। শুধু তাই-ই নয়, তাঁর ব্যাচের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। হিমাংশু বলেন, “বিদেশে পিএইচডি করতে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু দেশে থেকেই সিভিল সার্ভিস পড়ার সিদ্ধান্ত নিই।”
হিমাংশু বলেন, “পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য সরকারি কলেজে গবেষক হিসাবে যোগ দিই। তাতে স্কলারশিপের টাকায় সংসারের অভাবও মিটেছে, আবার সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নেওয়াও সম্ভব হয়েছে।”
হিমাংশু জানিয়েছেন, বাবার চায়ের দোকানে কাজ করার ফাঁকে পুরনো সংবাদপত্র পড়তেন। আর সেই অভ্যাস তাঁকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অনেক সাহায্য করেছে।
ইউপিএসসি পরীক্ষায় তিন বার বসেছিলেন হিমাংশু। প্রথম চেষ্টায় তিনি পাশ করেন এবং আইআরটিএসের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না হিমাংশু।
২০১৯ সালে আবার ইউপিএসসিতে বসেন। এ বার তিনি আইপিএস হন।
আইএএস হওয়ার জন্য তৃতীয় বার ইউপিএসসিতে বসেন হিমাংশু। এ বার তাঁর লক্ষ্যভেদ হয়। আইএএস নির্বাচিত হন তিনি। র্যাঙ্ক হয় ৩০৪।
অদম্য জেদ আর সদিচ্ছা থাকলে যে কোনও বাধা সরিয়ে লক্ষ্যভেদ করা যায়, হিমাংশুর সংঘর্ষের কাহিনি তেমনই একটি উদাহরণ।