কখনও বলেছেন বিপক্ষের ‘কবজি কেটে নেবেন’। কখনও পুলিশের গাড়িতে ‘বোম’ মারার নিদান দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তৃণমূলের সেই দুঁদে নেতাকে বৃহস্পতিবার গরুপাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সিপিএম থেকে বিজেপি— বীরভূমে তাঁর নামে ‘সোজা’ হয়ে বসে বিরোধীরা। সাধারণ এক মাছ ব্যবসায়ী থেকে কী ভাবে এই জায়গায় পৌঁছেছিলেন কেষ্ট?
অনুব্রত থাকেন বোলপুরের ১৫ নম্বর ব্লকে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বীরভূমের নানুরের হাট সেরান্দি গ্রামে।
কেষ্টরা তিন ভাই। তিনি মেজো। বাবার ছিল মণিহারি দোকান। স্থানীয়দের দাবি, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। তার পর বসতেন বাবার মণিহারি দোকানে।
বাবার মণিহারি দোকান ছেড়ে মাছের ব্যবসা শুরু করেন অনুব্রত। তাঁর সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এক সময় যিনি হাটে বসে মাগুর মাছ বিক্রি করতেন, আজ তিনি হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।’’
মাছ ব্যবসা থেকে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ। প্রথমে যোগ দেন কংগ্রেসে। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেসে ছিলেন। তখন থেকেই নেত্রীর নজর কেড়েছিলেন কেষ্ট।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল গড়েন মমতা। তৃণমূলে যোগ দেন কেষ্টও।
সে সময় বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি ছিলেন চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন অনুব্রত ছিলেন জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি।
দলের একাংশের দাবি, কয়েক মাস পর বিবাদের জেরে তৃণমূল ছেড়ে দিয়েছিলেন সুশোভন। সেই সময় বীরভূমে তৃণমূল জেলা সভাপতি পদে বসেন অনুব্রত। তখন থেকে তিনি ওই পদে।
পঞ্চায়েত ভোট থেকে বিধানসভা ভোট, বীরভূমে কে প্রার্থী হবেন, অনুব্রতের সঙ্গে কথা না বলে ঠিক করত না দল। অথচ সেই অনুব্রত নিজে কখনও প্রার্থী হননি। এই নিয়ে আক্ষেপও নেই তাঁর। বলেছিলেন, ‘‘প্রার্থী হয়ে কী লাভ? এখানে মুখ্যমন্ত্রী একাই প্রার্থী। তিনি আমার সঙ্গে রয়েছেন। সেখানে কেন হঠাৎ প্রার্থী হতে যাব?’’
২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রয়াত হন অনুব্রতের মা পুষ্পরাণি মণ্ডল। দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রয়াত হন তাঁর স্ত্রী ছবি মণ্ডল। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসার পরেও লাভ হয়নি। একমাত্র মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে অনুব্রতের সংসার।
গরুপাচার-কাণ্ডে ১০ বার অনুব্রতকে তলব করেছিল সিবিআই। তার মধ্যে মাত্র এক বার হাজিরা দিয়েছিলেন। গত সোমবারও তাঁকে তলব করেছিল সিবিআই। রবিবারই তিনি জানিয়েছিলেন, হাজিরা দিতে পারবেন না। সোমবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসার পর ফিরে যান বোলপুরে। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে বোলপুরের বাড়িতে গিয়ে আটক করেছে সিবিআই। বিকেলে গ্রেফতারও করা হয়।