আট কোটি মূল্যের জমি। ভুয়ো বিয়ে। এক বিধায়ক এবং একটি খুন। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের এই হত্যাকাহিনি চমকে দিয়েছে পুলিশকেও।
সাল ২০২০। অক্টোবর। উত্তরপ্রদেশের অম্বেডকরনগরের নাসিরপুরের বাসিন্দা অজয় সিংহের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনাচক্রে দুর্ঘটনার দু’ঘণ্টা আগেই বিয়ে হয়েছিল অজয়ের। কিন্তু সেটি নাকি কোনও দুর্ঘটনাই ছিল না! অজয়কে খুন করা হয়েছিল। আর সেটিকে দুর্ঘটনা হিসাবে সাজানো হয়েছিল। অন্তত তেমনই দাবি করেছে পুলিশ।
অজয়কে খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক পবন পাণ্ডের। সেই ঘটনার তিন বছর পর শুক্রবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এসটিএফ গ্রেফতার করেছে প্রাক্তন বিধায়ককে।
অজয়ের মা চম্পা দেবী জানান, অজয়কে ফাঁসিয়ে বরাবাঁকির সফেদাবাদের আর্য মন্দিরে এক মহিলার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিয়ের ভুয়ো শংসাপত্রও বানানো হয়েছিল। বিয়ের ঠিক দু’ঘণ্টার মধ্যেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় অজয়ের।
অজয়ের রহস্যমৃত্যুর দু’বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৫ জুন একটি অভিযোগ দায়ের করেন চম্পাদেবী। শিবসেনার প্রাক্তন বিধায়ক পবন পাণ্ডে, মুকেশ তিওয়ারি, গোবিন্দ যাদব-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
আকবরপুরের বাসখারি জাতীয় সড়কের পাশে অজয়দের একটি জমি ছিল। যার বাজারদর আট কোটি টাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই জমির উপর চোখ পড়েছিল বিধায়ক পাণ্ডের। ওই জমি কী ভাবে হাতানো যায়, তার ছক কষতে থাকেন। কোন উপায়ে ওই জমি নিজের দখলে আনা যায়, তার নানা উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।
অজয়ের মা এফআইআরে জানিয়েছেন, জমি হাতানোর জন্য তাঁর ছেলেকে মাদকাসক্ত করে তোলেন বিধায়ক। তাঁকে ক্রমে নিজের বশে করে ফেলেন। শুধু তাই-ই নয়, অম্বেডকর নগরের মেয়র এবং সার্ভে আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে অজয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। আজমগড়ের বাসিন্দা নীতু সিংহের সঙ্গে অজয়ের বিয়ে দেন। কিন্তু সেই বিয়ে ছিল সম্পূর্ণ ভুয়ো। আট কোটি টাকার জমি হাতানোর একটা ছক।
অজয়ের মায়ের অভিযোগ, নীতু সিংহকে অজয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তাঁদের পরিবারের এক জন সদস্য হিসাবে সরকারি খাতায় নথিভুক্তও করানো হয়। তার পরই জমি হাতানোর পাকাপাকি বন্দোবস্ত করা হয়। অজয়ের স্ত্রী নীতুর নামে জমি লিখিয়ে নেওয়া হয় বিয়ের দিনই। এবং সেই জমি ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নীতুর কাছ থেকে কিনেও নিয়েছিলেন পাণ্ডে। তার পরই অজয়কে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হলেও বিধায়ক পাণ্ডে কিন্তু পুলিশের নাগাল ফস্কে বার বারই পালাচ্ছিলেন। বিষয়টি ইলাহাবাদ হাই কোর্টে উঠলে, চলতি বছরের ১৯ মে এই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসটিএফকে।
শুক্রবার বরাবাঁকি জেলার রাম সনেহীঘাট থেকে প্রাক্তন বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়। পাণ্ডের বিরুদ্ধে ৯৫টি মামলা দায়ের করেছে এসটিএফ। তাঁর বিরুদ্ধে শুধু অম্বেডকর নগরে নয়, অযোধ্যা, লখনউ, জৌনপুর, প্রয়াগরাজ এমনকি মুম্বইয়েও খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ-সহ বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে।
১৯৯১ সালে শিবসেনার টিকিটে আকবরপুর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েন পবন পাণ্ডে। উত্তরপ্রদেশের ‘বাহুবলী’ নেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। এর পর তিনি শিবসেনা ছেড়ে সমাজবাদী পার্টি এবং পরে বহুজন সমাজ পার্টিতেও যোগ দিয়েছিলেন।
২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পাণ্ডের বড় পুত্র প্রতীক কটেহরী বিধানসভা ক্ষেত্র থেকে বিএসপির টিকিটে নির্বাচনে লড়েন। কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন। পাণ্ডের দাদা রাকেশ পাণ্ডে জালালপুরের বিধায়ক এবং ভাইপো রীতেশ পাণ্ডে বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ।