চিন আর ভারতের মাঝে আছে হিমালয়ের বিশাল দেওয়াল। সুদীর্ঘ চিনের প্রাচীরও কোথাও কোথাও ৪৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা। তাই প্রাচীরের ও পার থেকে সব খবর এ পারে এসে পৌঁছয় না। প্রাচীরের আড়ালেই যেন চিন গুপ্ত রাখে নিজেকে।
চিনের এই গোপনীয়তার কারণে তাকে ঘিরে রহস্যের জাল বিছিয়ে যায় সহজেই। যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা চিন সহজে অন্য দেশকে জানতে দেয় না। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে চিনা সংবাদ প্রচারিত হতেও অনেক দেরি হয়ে যায়।
সম্প্রতি জানা গিয়েছে, চিনের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের মৃত্যুসংবাদ। অথচ, তাঁর মৃত্যু হয়েছে মাস পাঁচেক আগে। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে বেজিংয়ের হাসপাতালে কিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
চিনের রাজনীতিতে বিতর্কিত এবং বর্ণময় চরিত্র এই কিন গ্যাং। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির দাপুটে রাজনীতিবিদ ছিলেন। মাস ছয়েক সামলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব।
গত জুলাই মাসে কিনকে বিদেশমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। অপসারণের পরেই কিনের মৃত্যু হয়।
কী করেছিলেন কিন? কেন দাপুটে মন্ত্রীর পদ কেড়ে নিলেন জিনপিং? দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি রিপোর্টে কিনের পরকীয়ার কথা উল্লেখ করেছিল। বিতর্কের সূত্রপাত সেখান থেকেই।
আমেরিকায় চিনের রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করেছিলেন কিন। সেই সুবাদে দীর্ঘ দিন আমেরিকায় ছিলেন তিনি। অভিযোগ, তখনই তাঁর সঙ্গে এক আমেরিকান তরুণীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ওয়াশিংটনে চিনের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রদূত ছিলেন কিন। তার পর তাঁকে বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আমেরিকা এবং চিনের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। ফলে কিনের পদের গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। তাঁর উপরেই নির্ভর করত শত্রু দেশে চিনের ভাবমূর্তি, দ্বিপাক্ষিক কৌশল।
চিনে সংসার রয়েছে কিনের। তা সত্ত্বেও তিনি আমেরিকান তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি, এই পরকীয়ার ফলশ্রুতিতে আমেরিকায় কিনের এক সন্তানও জন্ম নেয় বলে দাবি।
কিনের এই পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানাজানি হতেই জিনপিংয়ের সাম্রাজ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে। অভিযোগ, কিন তাঁর প্রেমিকার কাছে চিন সরকারের গোপনীয় তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছেন।
কিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছিল। শোনা যায়, কিন নিজেও সেই তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দাপুটে এই মন্ত্রীর পরিণতি একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়।
জুলাই মাসে কিনকে বিদেশ মন্ত্রক থেকে সরিয়ে দেন জিনপিং। তার পর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বেজিংয়ের একটি নামী হাসপাতালে জুলাইয়েরই শেষ দিকে কিনের মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা যায়।
কী ভাবে এই মৃত্যু, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ, অনেকেই দাবি করছেন, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন। অনেকে আবার মনে করছেন, অত্যাচার করে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে।
জুলাই মাসে কিনকে অপসারণ করার আগে এক মাস তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সংবাদমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি চোখে পড়েনি দীর্ঘ দিন। জুলাইতে জিনপিং ঘোষণা করেন, কিনের জায়গায় চিনের নতুন বিদেশমন্ত্রী হচ্ছেন ওয়াং ই।
কিনের বিরুদ্ধে বড়সড় কোনও প্রমাণ কি হাতে পেয়েছিলেন জিনপিং? সত্যিই কি আমেরিকার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তা চিনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল? নানা প্রশ্ন উঁকি মারছে। তবে চিনের সুদীর্ঘ প্রাচীরের আড়ালেই আবার তা ডুবে যাচ্ছে। মিলছে না উত্তর।