তল্লাশি শেষে শেখ শাহজাহানের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন ইডি আধিকারিকেরা। যাওয়ার আগে সিল করে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতার বাড়ি। তাঁকে ইডি দফতরে হাজির হতে হবে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে। দেওয়ালে নোটিস সেঁটে দিয়ে গেছেন ইডি আধিকারিকেরা।
সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়ি থেকে একে বারে খালি হাতে ফিরল না ইডি। সরবেরিয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়িতে বুধবার সকাল থেকে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি।
ইডি সূত্রে খবর, শাহজাহানের বাড়িতে গহনার বিল পেয়েছে তারা। পেয়েছে প্রচুর দলিল, এর পাশাপাশি বেশ কিছু সূত্রও এসেছে ইডির হাতে।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে এর আগে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে এসেও ভিতরে ঢুকতে পারেনি ইডি। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
আর বাইরে ইডিকে রুখে দিয়েছিল শাহজাহানের অনুগামী গ্রামবাসীরা। ১৯ দিন পর আবার ইডি ফিরে আসে শাহজাহানের গ্রাম সরবেরিয়ায়।
এ বার পুরোদস্তুর তৈরি হয়েই আসেন ইডি আধিকারিকরা। তল্লাশির খবর আগাম দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশকে। শাহজাহানের বাড়ি ঘিরে রেখেছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। জওয়ানদের সঙ্গে ছিল কাঁদানে গ্যাস। ন্যাজাট থানা থেকে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। শাহজাহানের বাড়ির মূল দরজার সামনে পাহারায় ছিল রাজ্য পুলিশও। তাদের কাছেও মজুত ছিল কাঁদানে গ্যাস।
ইডি সূত্রে খবর, ২৫টি গাড়িতে ১২৫ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নিয়ে সাত জনের একটি দল বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ পৌঁছয় শাহজাহানের বাড়িতে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের মাথায় হেলমেট, হাতে গার্ড পরে সব রকম ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। জেলা পুলিশকে এ দিন আগাম খবর দিয়ে রাখা হয়েছিল ইডির তরফ থেকে। ইডি শাহাজাহানের বাড়িতে পৌঁছলে তাঁদের কাছে তল্লাশির পরোয়ানা দেখতে চায় পুলিশ। তা দেখানোর পরেই পুলিশের তরফে সহযোগিতার আশ্বাস মেলে।
সকাল পৌনে আটটা নাগাদ শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকেন ইডির ছ’জন আধিকারিক। ইডির তরফে পুরো বিষয়টি ভিডিয়ো করে রাখা হয়েছে। ছ’জন ইডি আধিকারিকের পাশাপাশি তাঁদের তরফে তিন জন সাক্ষীকেও আনা হয়েছে। সাক্ষী হিসাবে ছিলেন দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। সম্পূর্ণ তল্লাশি পর্ব তাঁদের উপস্থিতিতেই চলে।
শাহজাহানের বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজ্য পুলিশের জওয়ানরা। সঙ্গে ছিলেন সিআরপিএফ জওয়ানরাও। বাড়ি থেকে বড় রাস্তায় যাওয়ার জন্য রয়েছে এক চিলতে রাস্তা। সেই ১০০ মিটার রাস্তাও পুরোপুরি মোড়া খাকি, জলপাই পোশাক পরিহিত দীর্ঘদেহীদের দিয়ে। বড় রাস্তার দখলও পুরোপুরি নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ছিল।
এ বার ইডি ঢুকতে পারে ভিতরে। শাহজাহানের বাড়ির গেট এবং দরজায় একের পর এক তালা ভেঙে ভিতরে যায় তারা।
একের পর এক ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালায়। চিলেকোঠার ঘরও বাদ দেয় না ইডি। এমনকি, ভাঙা হয় বিভিন্ন আলমারির তালাও।
তবে ইডি সূত্রে খবর তল্লাশিতে বেশ বোঝা যাচ্ছিল গত ১৯ দিনে এই বাড়ির ভিতর ঝাড়াই-পোঁছাই হয়েছে। তবে তার পরও শাহজাহানের বাড়ি থেকে একেবারে খালি হাতে ফেরেনি ইডি।
ইডি জানিয়েছে, শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১৯টি অরেজিস্ট্রিকৃত দলিল পেয়েছে তারা। এ ছাড়া কলকাতার দু’টি নামী সোনার দোকান থেকে কেনা বেশ কিছু গহনার বিলও পাওয়া গিয়েছে শাহজাহানের বাড়ি থেকে।
এ ছাড়া মিলেছে বেশ কিছু সূত্র। যেমন শাহজাহান শেখের বাড়িতে বহু ব্যাক্তির বিমানের টিকিট, ভিসা, বিমার সার্টিফিকেট সংক্রান্ত নথির কাগজ পাওয়া গিয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন নির্বাচন কেন্দ্রের প্রার্থীদের ‘ফর্ম ১২’ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত নথিপত্রও হাতে পেয়েছে ইডি। আবার চার ব্যক্তির ল্যামিনেট করা আসল ‘ফর্ম-২৩’ও পাওয়া গিয়েছে শাহজাহানের বাড়িতে।
এই চার জনের নাম হল শিবপ্রসাদ হাজরা, বিকাশ মণ্ডল, প্রতিমা সর্দার এবং সবিতা রায়।
আর কী পাওয়া গিয়েছে? শাহজাহানের বাড়িতে পাওয়া গিয়েছে ‘শাহজাহানের বাজার’ বা শেখ শাহজাহান মার্কেটের বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্টের বই।
শাহজাহানের নিজের নামে তিনটি জীবনবিমার কাগজপত্রও পেয়েছে ইডি। পাওয়া গিয়েছে তিন জনের সঙ্গে শাহজাহানের বিশেষ চুক্তিপত্র বা নোটারিয়াল সার্টিফিকেট।
এঁরা হলেন পিন্টু বোস, আল্পনা ভদ্র এবং বাবুনা রায়। ১০টি ল্যামিনেটেড কাগজে বাংলায় লেখা পরচাও পাওয়া গিয়েছে শাহজাহানের বাড়ি থেকে। আর মিলেছে ২০১৮ সালে শাহজাহানের দেওয়া আয়কর রিটার্নের ফাইল।
৫ জানুয়ারি থেকেই শাহজাহানের কোনও সন্ধান নেই। ইডির সন্দেহ, তিনি বাংলাদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন। বুধবার ভিতরে চিরুনিতল্লাশি চালানো হয়। তার পর দুপুরে ইডি আধিকারিকেরা ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। তবে যাওয়ার আগে বাড়ির দরজায় সেঁটে দেওয়া হয়েছে নোটিস।
তাতে লেখা আছে, রেশন মামলায় শাহজাহানের হাজিরা জরুরি। তাই ২০০২ সালের আর্থিক তছরুপ বিরোধী আইনের ধারা অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে শাহজাহানকে কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে।
সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে বেশ কিছু নথিও। শাহজাহানকে ইডি দফতরে যাওয়ার সময়ে সঙ্গে রাখতে হবে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং নিজের পাসপোর্ট আকারের ছবি। আপাতত শাহজাহানের বাড়িটি সিল করে দিয়ে গেলেন ইডি আধিকারিকেরা।