এসএসসি দুর্নীতিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে অভিনেত্রী-মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র আধিকারিকদের তল্লাশিতে উঠে এসেছে পার্থ-অর্পিতার নামে একাধিক ফ্ল্যাটের অস্তিত্ব।
কোনও ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে কোটি কোটি টাকা, জরুরি নথি, কোথাও বিলাসিতার জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘পেন্টহাউস’। আবার নিজের পোষ্য সারমেয়দের জন্য আলাদা ফ্ল্যাট ছিল বলেও ইডির দাবি।
পাঁচটি ফ্ল্যাট অর্পিতার নামে এবং পার্থের সঙ্গে যৌথ ভাবে আরও চারটি ফ্ল্যাট— অন্তত ন’টি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন ইডির আইনজীবী।
এই ফ্ল্যাটগুলি শুধু কলকাতা শহরের বুকেই নয়, অন্যান্য জায়াগাতেও ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে জানায় ইডি। পার্থ-অর্পিতার নামে থাকা টালিগঞ্জের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে শান্তিনিকেতনের ‘অপা’ সবই এখন বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে।
শান্তিনিকেতনের প্রান্তিকে অধুনা-বিখ্যাত ‘অপা’ বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক জন পর্যটককে আবার ছবি তুলতেও দেখা গিয়েছিল। ইডির গোয়েন্দারা এই বাড়ির ভিতর প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছিলেন।
‘অপা’ থেকে একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে ইডির দাবি। বাড়িটি পার্থ-অর্পিতার যৌথ ভাবে কেনা। তবে পরে একা অর্পিতার নামেই রেজিস্ট্রেশন হয় বাড়িটির।
তবে, এর পাশাপাশি শান্তিনিকেতনেই আরও দু’টি বাড়ির দিকে নজর ইডির। সোনাঝুরি এলাকার দুটি বাড়ি— ‘লাবণ্য’ এবং ‘তিতলি’তে পার্থ, অর্পিতাদের যাতায়াত ছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এই বাড়ি দু’টিও বেনামে কেনা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইডির গোয়েন্দা বিভাগ।
টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি আবাসনে একটি নয়, চার চারটি ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে বলে ইডির দাবি। তবে এই ফ্ল্যাটগুলি কেনা হয়েছিল বিভিন্ন নামে। তার মধ্যে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন অর্পিতা।
অন্য দু’টিতে পার্থের পোষ্য সারমেয়রা। চতুর্থ ফ্ল্যাটটি পেন্ট হাউস হিসাবে ব্যবহার করতেন পার্থ।
আবাসন সূত্রের খবর, ১৯ এবং ২০ তলায় ওই তিনটি ফ্ল্যাটের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থাও রয়েছে। যে ফ্ল্যাটে অর্পিতা থাকতেন। সেটি টাওয়ার ২-এর ১-এ। সেখান থেকেই টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়।
কিন্তু ওই টাওয়ারেরই ১৯ তলায় রয়েছে দু’টি ফ্ল্যাট। ১৮-ডি এবং ১৮-ই ফ্ল্যাট দু’টিকে এক করে এখন সেখানে রাখা রয়েছে পার্থের শখের সারমেয়দের।
ওই ফ্ল্যাট থেকেই আবার উপরের তলায় ১৯-আই ফ্ল্যাটে যাওয়া যায়। সেটি বিলাসবহুল পেন্ট হাউস হিসাবে ব্যবহার করতেন পার্থ বলে ইডির দাবি।
বেলঘরিয়ার অভিজাত আবাসন ক্লাব টাউন হাইটসের ন’তলায় ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে।এই ফ্ল্যাটে টানা ১৯ ঘণ্টা তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় নগদ ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। টাকার পাহাড়ের পাশাপাশি ইডি আধিকারিকরা এই ফ্ল্যাট থেকে চার কোটি ৩১ লক্ষ টাকার সোনাও উদ্ধার করেছেন।
একই আবাসনে আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার, দাবি ইডির। ওই ফ্ল্যাটটি অতিথিশালা করার পরিকল্পনা ছিল বলে ইডি জানতে পেরেছে।
এ ছাড়াও চিনার পার্ক এলাকায় অর্পিতার নামে আরও একটি ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে বলে ইডির দাবি। চিনার পার্কে ৪০৪ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে জরুরি কিছু নথিও পান ইডি আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে খবর, পঞ্চসায়রের নয়াবাদে একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে ইডি। এই ফ্ল্যাটটিও ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার নামে রয়েছে বলেই জানিয়েছে ইডি।
এ ছাড়া, কেন্দুয়া ও মাদুরদহ এলাকায় একটি করে ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়ে অর্পিতা-যোগ অনুসন্ধানে সেখানে তল্লাশি চালিয়েছেন ইডির আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অর্পিতা ও ‘ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট’ বিনোদন সংস্থার নামে ভাঙড়ের তাড়দহে ১০ বিঘা জমি কেনা রয়েছে। কসবার রাজডাঙা এলাকাতে ‘ইচ্ছে’ বিনোদন সংস্থার একটি অফিস রয়েছে।