কেউ অভিনয় শুরু করেছেন সাত বছর বয়সে, কেউ আবার আরও কম বয়স থেকে। নব্বইয়ের দশকে বিভিন্ন জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে যে শিশু অভিনেতারা রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তাঁদের অনেকেই বর্তমানে অভিনয়জগৎ থেকে দূরে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ অন্য পেশায় নিজেদের কেরিয়ার গড়ে তুলেছেন।
নব্বইয়ের দশকে তেলের সংস্থা হোক বা জনপ্রিয় পানীয়ের সংস্থা, সকলেই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত পরিবারদের সঙ্গে তাদের উৎপাদিত পণ্যের যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইছিল। বিজ্ঞাপনের প্রচারের মুখ হিসাবে তারা বেছে নিয়েছিল শিশুদের। তাদের ধারণা ছিল শিশুদের মাধ্যমে সংলাপ বলালে তা দর্শকের কাছে আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। এই পন্থা অবলম্বন করে লাভও করেছিল একাধিক সংস্থা। পাশাপাশি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন শিশু অভিনেতারাও।
একটি বাচ্চা ছেলে ঘুম থেকে ওঠার পর তার নাকে খাবারের সুগন্ধ ভেসে আসে। তার পর কখনও মিষ্টিভর্তি বাটি দেখে কখনও বা লুচি দেখে লোভ জাগে তার। শিশু অভিনেতার মিষ্টি অভিনয় দেখে দর্শকের ভারি পছন্দ হয়। বিজ্ঞাপন প্রচারের কম সময়ের মধ্যেই মাতামাতি শুরু হয়ে যায় ওই শিশু অভিনেতাকে নিয়ে। বলিপাড়ার কোনও তারকাসন্তান ছিলেন না তিনি। তাঁর নাম নিশান্ত মেহরা।
মাত্র সাত বছর বয়সে তেলের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নিশান্ত। কিন্তু অভিনয় নিয়ে নিজের কেরিয়ার তৈরি করতে চাননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবেই কেরিয়ার গড়েন তিনি।
মুম্বইয়ের ফুটবল ক্লাবের অধিনায়ক হিসাবেও খেলেছেন নিশান্ত। কিন্তু ফুটবলের মাঠে তাঁর দৌড় মাঝপথেই শেষ হয়ে যায়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাদক সংক্রান্ত মামলায় নিশান্তের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তাঁর উপর দু’বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
দু’বছর পর নিশান্তের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরে যাওয়ার পর আবার খেলতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু আগের মতো আর খেলার মাঠে দাপট দেখাতে পারেননি। বর্তমানে মুম্বইয়ের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাচ্চাদের ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ দেন নিশান্ত।
নব্বইয়ের দশকে নামী জুতো তৈরির সংস্থার বিজ্ঞাপনে কাজ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তেজান দেওয়ানজি। শৈশব থেকেই চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য ২০০৮ সালে আমেরিকায় পড়াশোনা করতে যান তেজান।
আমেরিকায় স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করার পর সেখানেই থাকতে শুরু করেন তেজান। বর্তমানে আমেরিকায় নিজের কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আরও একটি তেল প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপন। শিশু অভিনেতা হিসাবে পরজ়ান দস্তুরের অভিনয় সকলের মন কাড়ে। তার পর টেলিভিশনের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন পরজ়ান।
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘কহো না প্যার হ্যায়’, ‘মহব্বতে’, ‘কভি খুশি কভি গম’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় পরজ়ানকে। ২০০৯ সালে পীযূষ ঝা পরিচালিত ‘সিকন্দর’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি সংলাপ লিখনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন পরজ়ান। একটি প্রযোজনা সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ২০২১ সালে বিয়ে করে বর্তমানে স্ত্রীর সঙ্গে মুম্বইয়ে থাকেন পরজ়ান।
২০০৯ সালে আর বালকির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পা’ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের নজর কেড়েছিলেন তরুণী সচদেও। কিন্তু অভিনয়জগতে তিনি কেরিয়ার শুরু করেছিলেন আরও আগে।
নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় পানীয়ের বিজ্ঞাপনে বলি অভিনেত্রী করিশ্মা কপূরের সঙ্গে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তরুণী। তার পর থেকে একাধিক নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তরুণীকে।
দক্ষিণী ফিল্মজগতে তামিল এবং মালয়ালম ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তরুণী। কিন্তু অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে পারেননি তিনি। কম বয়সেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
২০১২ সালে জন্মদিন পালন করতে মায়ের সঙ্গে নেপালে যাচ্ছিলেন তরুণী। যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও মায়ের ইচ্ছাপূরণ করতে নেপাল যেতে রাজি হন তিনি।
নেপাল যাওয়ার আগে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তরুণী। যাওয়ার আগে তিনি বার বার বলছিলেন, ‘‘যদি বিমানে যাওয়ার পথে কোনও দুর্ঘটনা হয় তা হলে আর কোনও দিন আমাদের দেখা হবে না।’’ তরুণীর কথা শুনে হাসাহাসি করেছিলেন তাঁর বন্ধুরা। কিন্তু তরুণীর আশঙ্কাই সত্যি হয়। ২০১২ সালের ১৪ মে বিমান দুর্ঘটনায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
তরুণীর আগে একই পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে আশির দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অঙ্কিতা জাভেরি। ২০০২ সাল থেকে তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় অঙ্কিতাকে।
কিন্তু বিয়ের পর অভিনয়জগৎ থেকে সরে আসেন দক্ষিণী অভিনেত্রী। ২০১৬ সালে বিশাল জগপৎ নামে এক শিল্পপতিকে বিয়ে করেন তিনি। বর্তমানে আমেরিকার নিউ জার্সিতে সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন অঙ্কিতা।