সত্তরের দশক। সেই সময় প্রথম বার দেশে ইংরেজিতে খবর সম্প্রচার শুরু হল। পরনে শাড়ি, মাথায় ছোট চুল— এমন বেশে ক্যামেরার সামনে ইংরাজিতে সংবাদ পাঠ করেছিলেন দেশের বেশ কয়েক জন মহিলা সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন গীতাঞ্জলি আইয়ার।
গত ৭ জুন দিল্লিতে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গীতাঞ্জলি। বয়স হয়েছিল ৭১। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া সাংবাদিক মহলে।
পরিবার সূত্রে খবর, হাঁটতে বেরিয়েছিলেন গীতাঞ্জলি। বাড়িতে ফেরার পরই অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান। পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
গীতাঞ্জলির এক পুত্র এবং কন্যাসন্তান রয়েছেন। পুত্রের নাম শেখর। কন্যা পল্লবীও এক জন পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক।
দূরদর্শনে যাঁরা প্রথম ইংরেজিতে সংবাদ পাঠ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গীতাঞ্জলি। অল্প দিনের মধ্যেই সেই সময় সংবাদ পাঠিকা হিসাবে ঘরে ঘরে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে দূরদর্শনে যোগ দিয়েছিলেন গীতাঞ্জলি। সেই শুরু। তার পর তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দূরদর্শনে দাপিয়ে কাজ করেছেন তিনি।
গীতাঞ্জলির সঙ্গে কলকাতার যোগ রয়েছে। মহানগরের লরেটো কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। তার পরেই যোগ দেন দূরদর্শনে।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানাচ্ছে, সেই সময় রেডিয়োতে সুরজিৎ সেন, পামেলা সিংহদের সংবাদ পাঠ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন গীতাঞ্জলি। তাঁদের দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে পরে সংবাদ পাঠিকা হিসাবে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি।
সত্তরের দশকে দেশ জুড়ে সংবাদ পাঠিকা হিসাবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন গীতাঞ্জলি। সেই সময় তাঁর অনুরাগীর সংখ্যাও ছিল অনেক। এমনকি, অনেকেই টিভিতে তাঁকে দেখার জন্যই খবর দেখতেন।
দূরদর্শনে কাজ করার সময় গীতাঞ্জলির জনপ্রিয়তা যে কোনও তারকার থেকে কম ছিল না। ‘স্ক্রল’ জানাচ্ছে, এক বার দেহরাদূনে অটোয় চড়েছিলেন গীতাঞ্জলি। কিন্তু অটোচালক তাঁর কাছ থেকে ভাড়া নিতে চাননি।
সেই সময় এত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। ক্যামেরার সামনে সংবাদ পাঠ করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছিল সংবাদ পাঠিকাদের।
এক সাক্ষাৎকারে গীতাঞ্জলি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাছে টেলিপ্রম্পটার ছিল না। ক্যামেরার পাশে এক জন সংবাদ লেখা কাগজ নিয়ে আমাদের জন্য দাঁড়াতেন। সেই কাগজে লেখা খবর দেখে পড়তে হত ক্যামেরার সামনে। একসঙ্গে ওই ‘স্ক্রিপ্ট’ দেখা আর ক্যামেরার দিকে তাকানো খুব কঠিন ব্যাপার ছিল।’’
জনপ্রিয় সংবাদ পাঠিকা হিসাবে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন গীতাঞ্জলি। ৪ বার সেরা সংবাদ পাঠিকার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রিয়দর্শিনী পুরস্কারে সম্মানিত হন গীতাঞ্জলি।
অভিনয়ও করেছেন। দূরদর্শনে ‘খানদান’ নামে একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
২০০২ সালের অগস্ট মাসে দূরদর্শন ছাড়েন গীতাঞ্জলি। তার পর যোগ দেন কর্পোরেট কমিউনিকেশন, মার্কেটিং পেশায়। কাজ করেছেন সিআইআই, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডে।