অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সে দেশের বহু নাগরিককে। সম্প্রতি এমন তথ্যই উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়।
ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ভারতের প্রতিবেশী দেশে সংসার চালাতে কেউ কেউ একসঙ্গে দু’টি চাকরি করছেন। কেউ কেউ আবার পরিচিতদের কাছ থেকে ধারের পর ধার করে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সমীক্ষা পাকিস্তানের গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটকে তুলে ধরেছে। শহুরে পরিবারগুলির অভাব-অনটন অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
ওই সমীক্ষা বলছে, পাকিস্তানের প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষকে মাসের খরচ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ শতাংশ।
জুলাই থেকে অগস্টের মধ্যে পাকিস্তানের ১১টি বড় শহর জুড়ে প্রায় ১১০০ মানুষকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। আর তাতেই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র ধরা পড়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে ওই একই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, পকিস্তানের ৬০ শতাংশ পরিবার অভাবের মধ্যে রয়েছে।
ওই সমীক্ষা বলছে, যে ৭৪ শতাংশ পাক নাগরিককে আর্থিক চাপের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তার মধ্যে আবার ৬০ শতাংশ সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলেছেন। বাকি ৪০ শতাংশ পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা ধার করতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়াও এঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষকে পেট চালাতে কাজ করতে হচ্ছে একাধিক জায়গায়।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, শহুরে পাক নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা মোটামুটি সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ কোনও রকম সঞ্চয় করতে পারছেন না। ফলে তাঁদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তার পথে চলেছে। পাশাপাশি, বেড়েই চলেছে দেনার পরিমাণ। সরকারের তরফেও সে ভাবে কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছেন না মানুষ।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক এই দুরবস্থার মধ্যেই গত মাসে সে দেশের শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার আগামী তিন বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের সঙ্গেও তিন বছরের জন্য ৭০০ কোটি ডলারের সহায়তা পাওয়ার চুক্তিতে সই করেছে। তবে তাতেও বিশেষ লাভ হবে না বলেই বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন। কারণ পাকিস্তানের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে হু-হু করে।
উল্লেখ্য, বিগত প্রায় দু’বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক হাল বেহাল। সে কথা এখন আর কারও অজানা নয়। বহু দিন ধরেই সে দেশ আর্থিক সঙ্কটের মুখে রয়েছে। তা থেকে বেরিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি ভারতের প্রতিবেশী।
তার মধ্যেই সেই দেশের সরকার উল্টেছে। ক্ষমতা গিয়েছে তদারকি সরকারের হাতে। নতুন সরকার গড়ার জন্য নির্বাচন হয়েছে। ফলঘোষণা হয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন।
তার পরেও অর্থনৈতিক টানাপড়েনে জর্জরিত পাকিস্তান। ইসলামাবাদের মাথায় যা পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা চেপেছে, তা-ও কমেনি। যার প্রভাব গিয়ে পড়েছে দেশের বাজারে। পাকিস্তানে জিনিসপত্রের মূল্যও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
ইসলামাবাদের একটি চিন্তন শিবিরের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ, পাকিস্তানের অর্থনীতিতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ ফেলেছে সে দেশের ঋণ-পরিস্থিতি। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ)। পাকিস্তানের ঋণের বোঝার কারণে ইতিমধ্যেই সে দেশের শেয়ার বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বিভিন্ন সমীক্ষার হিসাব বলছে, ২০১১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু ঋণ ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি হ্রাস পেয়েছে ৬ শতাংশ। পাকিস্তানে ঋণ এবং আয়বৃদ্ধির হারের মধ্যে বৈষম্যের কারণেও পাকিস্তানের অর্থনীতির হাল খারাপ হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১১ সালে পাকিস্তানে একজন শিশু মাথায় ৭০ হাজার পাকিস্তানি মুদ্রার ঋণ নিয়ে জন্ম নিত। ২০২৩ সালে সেই পরিমাণ ৩ লক্ষের বেশি।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে, পাকিস্তানের বাহ্যিক ঋণ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ছ’গুণ।
পাকিস্তানে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে যৎসামান্য বিদেশি মুদ্রা। এই পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দিয়ে ঠিক মতো আমদানি করা সম্ভব নয় বলেও সূত্রের খবর।
এর মধ্যেই নতুন সমীক্ষা আরও চিন্তা বাড়াল পাকিস্তানের।