কাতার বিশ্বকাপ শেষ। লিয়োনেল মেসি বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে দেশে ফিরে গিয়েছেন। ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ খরা কেটে নতুন সূর্য উঠেছে আর্জেন্টিনায়।
মেসি সেমিফাইনালে উঠেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, কাতারে কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ তিনি খেলছেন। দেশের জার্সি পরে বিশ্বকাপের মঞ্চে আর তাঁকে দেখা যাবে না। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে অবশ্য আরও কিছু দিন খেলবেন এলএম১০।
শুধু মেসি নন, বিশ্বকাপের সঙ্গে সঙ্গে কার্যত বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে আরও কয়েক জন তারকার। আর বেশি দিন তাঁদের বল পায়ে নিয়ে মাঠময় ছুটে বেড়াতে দেখা যাবে না। কেউ অবসরের কথা ইতিমধ্যে ঘোষণা করে ফেলেছেন। কেউ আবার মুখ না খুললেও আগামী বিশ্বকাপের আগেই অবসর নিয়ে ফেলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৬ সালে, পরবর্তী ফুটবল বিশ্বকাপ হতে চলেছে একসঙ্গে তিনটি দেশে। আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকোয়।
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর ঘোষণা করে ফেলেছেন ফ্রান্সের করিম বেঞ্জেমা। কাতার বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরের দিনই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের হয়ে তিনি আর ফুটবল খেলবেন না। শুধু ক্লাব ফুটবলে তিনি থাকবেন।
বেঞ্জেমা চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। কাতার থেকে দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। অভিযোগ উঠেছিল, সদ্য বালঁ দ্যর পুরস্কার জেতা ফুটবলারকে চোট সারিয়ে সুস্থ হওয়ার পরেও বিশ্বকাপে খেলতে ডাকেননি ফরাসি কোচ দেশঁ। অনেকে বলছেন, কোচের উপর অভিমানের কারণেই তিনি অবসর ঘোষণা করলেন।
উরুগুয়ের তারকা ফুটবলার লুই সুয়ারেজ় বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন। তাঁর দেশ ট্রফির দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার পরেই ইনস্টাগ্রামে সুয়ারেজ় জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিশ্ব ফুটবলের এই চূড়ান্ত মঞ্চে আর কখনও খেলবেন না।
আগামী বিশ্বকাপে দেখা যাবে না বেলজিয়ামের ইডেন হ্যাজ়ার্ডকেও। কাতারের আগের দুই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্টরা এ বার গ্রুপ পর্যায় থেকেই বিদায় নিয়েছিল। তার পরই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে হ্যাজ়ার্ড অবসর ঘোষণা করেছেন। ২০০৮ সালে বেলজিয়ামের জাতীয় দলে খেলতে শুরু করেছিলেন তিনি। দেশের জার্সিতে ৩৩টি গোল করেছেন।
ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচও সম্ভবত জীবনের শেষ বিশ্বকাপটি খেলে ফেলেছেন কাতারে। ২০১৮ সালে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। গত বার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলা দল এ বছর শেষ করেছে তৃতীয় স্থানে।
বিশ্বকাপে দৌড় শেষের পর মদ্রিচ জানিয়েছেন, দেশের জার্সিতে আরও কিছু দিন খেলা চালিয়ে যেতে চান। তবে আগামী বিশ্বকাপে ৩৭ বছরের এই ক্রোয়েশীয় তারকাকে না দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
রবার্ট লেয়নডস্কি পোল্যান্ডের জার্সিতে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলটি করেন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। ৩৪ বছর বয়সি পোলিশ তারকা এই নিয়ে ২টি বিশ্বকাপ খেললেন।
অবসরের কথা এখনও কিছুই জানাননি বার্সেলোনা তারকা লেয়নডস্কি। তবে পরের বিশ্বকাপে তাঁর বয়স হয়ে যাবে ৩৮। ফলে আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকোয় তাঁকে দেখার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন অনেকে।
বিশ্বজয়ী জার্মান দলের তারকা ফুটবলার থমাস মুলার অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেছেন। কাতারে কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে ৪-২ গোলে জিতেও ছিটকে যেতে হয়েছে জার্মানিকে। ম্যাচের পর মুলার বলেন, ‘‘এটাই যদি শেষ ম্যাচ হয়, তা হলে বলব আমি খুশি। একসঙ্গে খুব ভাল সময় কাটালাম আমরা। প্রতিটা ম্যাচে আমি হৃদয় দিয়ে খেলেছি। ভালবেসে খেলেছি।”
কাতার বিশ্বকাপে নজর ছিল প্রাক্তন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা গ্যারেথ বেলের দিকে। কিন্তু ৩৩ বছর বয়সে প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলতে নেমে একেবারেই দাগ কাটতে পারেননি তিনি। পরের বিশ্বকাপে ওয়েলস খেলবে কি না তা নিশ্চিত নয়। ওয়েলস খেললেও হয়তো আর খেলতে দেখা যাবে না বেলকে। যদিও অবসরের প্রশ্নে বেল নিজে জানিয়েছেন, ‘‘যত দিন পারব, খেলা চালিয়ে যাব।’’
শেষ বিশ্বকাপের তালিকায় রয়েছেন সুয়ারেজ়ের আর এক সতীর্থ এডিনসন ক্যাভানি। উরুগুয়ের জার্সিতে একাধিক নজির গড়েছেন ৩৫ বছর বয়সি এই ফুটবলার। তবে বিশ্বকাপে তাঁকে আর দেখার সম্ভাবনা কম। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে বিতর্কেও জড়িয়েছেন ক্যাভানি। ঘানার বিরুদ্ধে ২-০ জয়ের পরেও তাঁদের ছিটকে যেতে হয়। ম্যাচের পর চূড়ান্ত হতাশায় ভারের মনিটরে ঘুষি মারতে দেখা গিয়েছিল ক্যাভানিকে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এখনও অবসর নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে ৩৭ বছর বয়সি তারকা আগামী বিশ্বকাপে আর খেলবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর কাছে পর্তুগাল হেরে যাওয়ার পর চোখের জল ফেলতে ফেলতে মাঠ ছাড়েন সিআর৭।
এ বার বিশ্বকাপে রোনাল্ডোকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচের শেষের দিকে তাঁকে তুলে নেওয়ায় তাঁর অঙ্গভঙ্গি নিয়ে জলঘোলা হয়। নক আউটের দুটো ম্যাচেই তাঁকে প্রথম দলে রাখেননি কোচ। এই নিয়ে ৫টি বিশ্বকাপ খেলে ফেললেন রোনাল্ডো। ট্রফি অধরাই থেকে গিয়েছে। ক্লাব ফুটবলেও তাঁকে এই মুহূর্তে কার্যত অনাথ বলা যায়।
কাতারে বিশ্বকাপ যাত্রা কি শেষ হয়ে গেল নেমারেরও? ৩০ বছর বয়সি এই ব্রাজিলীয় তারকা বরাবর চোটপ্রবণ। এ বারের বিশ্বকাপেও চোটের কারণে একাধিক ম্যাচে খেলতে পারেননি। বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিল বিদায় নেওয়ার পর হতাশায় ডুবে যান নেমার।
তখনই তিনি অবসরের ইঙ্গিত দেন। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দৌড় শেষ হওয়ার পর আবেগতাড়িত নেমার জানান, দেশের হয়ে তিনি আর না-ও খেলতে পারেন। তবে নেমারের বয়স কম। অনেকের মতে, ব্রাজিলের হার মেনে নিতে না পেরে আবেগের বশে অবসরের কথা বলেছিলেন তিনি। চোট না পেলে আগামী বিশ্বকাপে তাঁকে খেলতে দেখা যাবে বলেই ধারণা অনুরাগীদের।