বিশ্বকাপের মহারণ জিতে মঙ্গলবার ভোর রাতে ঘরে ফিরেছেন মেসি-মার্তিনেজ-আলভারেজরা। বুয়েনস আইরেসে পা দিতেই তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় ঢল নামে হাজারো মানুষের। যেন তাঁদের অপেক্ষাতেই নাওয়া-খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সারা দেশ।
মেসিরা দেশে ফিরছেন শুনেই তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য বুয়েনস আইরেসের ইজেইজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় করেন বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে আসা হাজারও মানুষ। মেসিরা কাপ হাতে বিমানবন্দরের বাইরে আসতেই হইহই পড়ে যায় উন্মত্ত জনতার মধ্যে।
স্থানীয় এক সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ২ লক্ষ মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে বিমান অবতরণের দিকে নজর রেখেছিলেন। কিছুতেই এই বিশেষ ঐতিহাসিক মুহূর্তকে নজরছাড়া করতে রাজি ছিলেন না তাঁরা।
মেসিরা বেরিয়ে এসে দেখেন বিমানবন্দরের ঠিক বাইরে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিল ‘বিজয়রথ’। সেখানে লেখা ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’। সেই বাসে চেপেই বিমানবন্দরের বাইরে বার হন মেসিরা।
এক মাসের ‘যুদ্ধ’ শেষে দেশে ফিরেছেন নায়করা। বাঁশি-ভেঁপু বাজিয়ে শুরু হয় আনন্দ উদ্যাপন। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে বেজে ওঠে মিশ্র সুর।
বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা হুড খোলা বাসের ছাদে চেপে শহরের আরও ভিতরের দিকে এগিয়ে যেতেই উৎসব-মুখর হয়ে ওঠে সারা বুয়েনস আইরেস। নীল-সাদা পতাকায় ঢেকে যায় শহরের আকাশ।
গায়ে-মুখে আর্জেন্টিনার পতাকা আঁকা মানুষের স্রোত হাঁটতে থাকে মেসিদের বাসের পাশে পাশে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেশনায়কদের লক্ষ্য করে ছুড়ে দেওয়া হয় ফুল-মালা।
জায়গায় জায়গায় মাইকে চালানো হয় সে দেশের জাতীয় সঙ্গীত। নাচে-গানে-উন্মাদনায় ভরে যায় বুয়েনস আইরেসের রাস্তা। আকাশ ভরে গিয়েছিল রংবেরঙের আলো এবং নীল-সাদা আবিরে।
মেসিদের গাড়ি শহরের মাঝামাঝি থাকা বিখ্যাত ওবেলিস্ক মিনারের কাছাকাছি পৌঁছতে আপ্লুত হন মেসিরা। তাঁদের চোখের সামনে ভাসছিলেন তাঁরাই। সারা মিনারের গায়ে আলোর কেরামতিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিশ্বকাপজয়ীদের ছবি।
ওবেলিস্ক মিনারের কাছাকাছি এসে রাস্তায় মানুষের ভিড় আরও বাড়ে। উৎফুল্ল মানুষের ভিড়ে বেশ কিছু ক্ষণ একই জায়গায় থেমে গিয়েছিল মেসিদের বাস। তাঁদের বাস এবং ওবেলিস্ককে ঘিরে গোল করে নাচতে দেখা যায় অনুরাগীদের। আনন্দে জ্বলজ্বল করছিল দলকে অর্ভ্যথনা জানানো সাধারণ মানুষের চোখ।
সেই ভিড় থেকেই রব ওঠে, মেসি-মেসি, মার্তিনেজ-মার্তিনেজ, আর্জেন্টিনা-আর্জেন্টিনা। মানুষের কাণ্ডকারখানা দেখে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে মেসিদের মুখেও। এর মধ্যে কয়েক জন সমর্থক এগিয়ে এসে মেসিদের বাসে উঠে গিয়েছিলেন। তবে তাঁদের নিরাশ করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়নি।
আর্জেন্টিনার মানুষদের আনন্দ উদ্যাপনের সেই ছবি ইতিমধ্যেই দেশ বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। সেই সব ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাটে তিলধারণের জায়গা পর্যন্ত নেই।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে আনন্দে মাতেন মেসি-আলভারেজরাও। গানের তালে তালে শরীর দোলাতে দেখা যায় তাঁদেরও।
লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশ আর্জেন্টিনার অন্যতম পরিচয় ফুটবল। আর্জেন্টিনা শেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৮৬ সালে। তারও আগে ১৯৭৮ সালে।
১৯৮৬ সালের পর বিশ্বকাপ আবার ঘরে ফেরানোর জন্য দীর্ঘ ৩৬ বছর অপেক্ষা করেছে আর্জেন্টিনার মানুষ। বহু অপেক্ষার পর তাঁদের দেশ সফল। আর্জেন্টিনার জনগণের সবুরে মেওয়া ফলেছে। আর সেই জন্যই আর্জেন্টিনার ঘরে ঘরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস-কোলাহল। তারই কিছুটা নেমে এসেছিল মঙ্গলবার ভোরের রাস্তায়।