দাপটের সঙ্গে তাঁরা নিজেদের দেশ শাসন করেছেন। এঁদের কেউ রাশভারী শাসক। কেউ বা একনায়ক। কারও আবার দোর্দণ্ডপ্রতাপ আচরণে রীতিমতো থরহরি কম্প হত। সেই শাসকদের ‘নেশা’র কথা কখনও শুনেছেন? কোনও একটা জিনিসের প্রতি তাঁদের ‘বিশেষ ভালবাসা’র কথা জানলে হতবাক হবেন।
কেউ আইসক্রিম খেতে ভালবাসতেন। কেউ আবার নিজেকে এতটা ভালবাসতেন যে, নিজেই নিজের মূর্তি তৈরি করেছেন। কেউ আবার কোনও এক নারীর প্রেমে ‘পাগল’ ছিলেন। কারও আবার ‘সুইস চিজ’ বড্ড প্রিয়। বিশ্বের সেই সব তাবড় তাবড় শাসকের এই অন্য দিকটিই তুলে ধরা হল এখানে।
প্রথমেই বলা যাক কিউবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর কথা। দুগ্ধজাত খাবার এবং আইসক্রিম বড্ড প্রিয় ছিল তাঁর। চকোলেট মিল্কশেকে গলা ভেজানো তাঁর নেশা ছিল।
শোনা যায়, কাস্ত্রোকে খুন করতে নাকি চকোলেট মিল্কশেকে বিষ মেশানোর ছক কষেছিল সিআইএ। কিউবার আবহাওয়া গরুর উপযোগী নয়। দুগ্ধজাত খাবার পছন্দ করতেন বলে কানাডা থেকে গরু আমদানি করতেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, কিউবায় গরু প্রজননের চেষ্টাও করেছিলেন কাস্ত্রো। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
আফ্রিকার সুন্দরী মহিলাদের দেখলেই ‘পাগল’ হয়ে যেতেন লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মর গদ্দাফি। এক নারীর প্রেমে ‘পাগল’ ছিলেন তিনি। সেই মহিলা ছিলেন আমেরিকার কূটনীতিক কন্ডোলিজ়া রাইস।
কন্ডোলিজ়াকে ‘ডার্লিং ব্ল্যাক আফ্রিকান উওম্যান’ বলে সম্বোধন করতেন গদ্দাফি। তবে তাঁর উপর গদ্দাফির এ হেন ‘ভালবাসা’কে ‘অদ্ভুত’ এবং ‘অশোভনীয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন রাইস।
শোনা যায় বিবস্ত্র পুরুষদের মুণ্ডহীন দেহের ছবির প্রতি ঝোঁক ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্তালিনের। শোনা যায়, সোভিয়েত চলচ্চিত্রও পছন্দ করতেন তিনি।
জার্মানির প্রাক্তন একনায়ক অ্যাডল্ফ হিটলারের কঠোর শাসনের কথা সর্বজনবিদিত। ব্যক্তিজীবনে একাধিক জিনিসের প্রতি তাঁর আসক্তি ছিল। যেমন তিনি ডিজ়নির ছবি দেখতে ভালবাসতেন। জার্মানির লেখক কার্ল মে’র উপন্যাস তাঁর প্রিয় ছিল।
এ বার বলা যাক রোমানিয়ার একনায়ক নিকোলা সিউসেস্কুর নেশার কথা। তবে এটা ঠিক তাঁর নেশা ছিল না। তাঁর পোশাকে বিষ মিশিয়ে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারেন শত্রুরা— সবসময় এই আশঙ্কায় ভুগতেন তিনি। তাই সেই সময় এক বার যে স্যুট তিনি পরতেন, তা নষ্ট করে ফেলা হত। শোনা যায়, তাঁর স্যুটগুলি তালাবন্ধ করে একটি জায়গায় রাখা হত।
স্কটল্যান্ডকে নিয়ে বিশেষ ভালবাসা ছিল উগান্ডার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইদি আমিনের। তাঁর কয়েক জন স্কটিশ কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকেই স্কটল্যান্ড সম্পর্কে নানা কথা জেনেছিলেন। স্কটিশ নৃত্য এবং হুইস্কি ভালবাসতেন তিনি।
লিপিবিদ্যার (ক্যালিগ্রাফি) প্রতি ঝোঁক ছিল চিনের প্রাক্তন শাসক মাও জে দংয়ের। সেই সময় টাইপরাইটাররের বদলে কালি দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নথি লিখতেন তিনি। বলা হয়, মাওয়ের হাতের লেখা নাকি খুবই সুন্দর।
সংখ্যাতত্ত্বের প্রতি আকর্ষণ ছিল ফিলিপিন্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের। সাত নম্বরটি তাঁর প্রিয় ছিল। যে কোনও কাজে সাত নম্বরটিকে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিতেন তিনি।
নিজেকে খুব ভালবাসতেন তুর্কমেনিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট সাপারমুরাত নিয়াজভ। তাই সোনার পাত দিয়ে নিজের ৫০ ফুট উঁচু মূর্তি বানিয়েছিলেন তিনি। নিজের নামে শহর, থিম পার্ক, থিয়েটারের নামকরণ করছিলেন নিয়াজভ।
আমেরিকার ‘জাঙ্ক ফুড’ খেতে ভালবাসতেন ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেন। বিশেষত, আমেরিকার একটি চিপ্স তাঁর পছন্দ ছিল।
হলিউডের ছবি কে না ভালবাসেন বলুন! কিন্তু যে দেশের সঙ্গে ‘শীতল’ সম্পর্ক, সেই দেশের ছবিই কি না পছন্দ করতেন উত্তর কোরিয়ার একদা শাসক দ্বিতীয় কিম জং উন। শোনা যায়, ৩০ হাজারের মতো ছবি সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
এ বার বলা যাক উত্তর কোরিয়ার বর্তমান শাসক কিম জং উনকে নিয়ে। তাঁকে ঘিরে কৌতূহলের অন্ত নেই আন্তর্জাতিক আঙিনায়। চিজ় খেতে বড্ড ভালবাসেন কিম। বিশেষ করে সেটা যদি হয় ‘সুইস চিজ়’। অনেকে বলেন, কিমের ওজন বৃদ্ধির একটা অন্যতম কারণ হল এই চিজ়প্রেম।