জেলের বন্দির সঙ্গে কিনা গোপন প্রেম! কারারক্ষী হিসাবে একটি জেলে কাজে যোগ দিয়েছিলেন এক তরুণী। সেখানেই এক বন্দির প্রেমে আচ্ছন্ন হন তরুণী কারারক্ষী। হ্যাঁ, এমন কাণ্ডই ঘটেছে। তবে এই প্রেমের পরিণতি হয়েছে মারাত্মক।
৮ সপ্তাহ ধরে কঠোর প্রশিক্ষণ পর্বের পর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইংল্যান্ডের শ্যাফটসবারিতে এইচএমপি গায়েজ় মার্শ কারাগারে কারারক্ষী হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন ২৫ বছরের তরুণী রাচেল মার্টিন।
ওই কারাগারেই বন্দি রয়েছেন ৪০ বছরের রেমন্ড আব্রাহাম। মার্টিন যখন কারারক্ষী হিসাবে কাজে যোগ দেন, সেই সময় ১০ বছরের কারাবাসের সাজা ভোগ করছিলেন আব্রাহাম।
একটি এটিএম লুট করেছিলেন আব্রাহাম। ১ কোটি ২০ লক্ষ ৬১ হাজার ৬৪৩ টাকা লুট করেছিলেন তিনি। সেই অপরাধেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে কারাবাসের সাজার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সূত্রেই ওই কারাগারে বন্দি ছিলেন আব্রাহাম।
কারারক্ষী হিসাবে কাজ করতে গিয়েই মার্টিনের সঙ্গে আলাপ হয় আব্রাহামের। ২৫ বছরের তরুণীকে প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে ফেলেন আব্রাহাম। বন্দির প্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন মার্টিনও।
২০২০ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত মার্টিন এবং আব্রাহামের সম্পর্ক ছিল। তবে তাঁদের সেই সম্পর্কটা একটু অন্য রকমই ছিল। প্রেম, ভালবাসার থেকে টাকার বিনিময়ে আব্রাহামের আবদার মেটাতেন মার্টিন।
কারারক্ষীর সঙ্গে বন্দির এ হেন সম্পর্ক নিয়ে ইতিউতি চর্চা শুরু হয়েছিল কারাগারে। এমনকি, তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। এর পরই ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তল্লাশির মুখে পড়েছিলেন মার্টিন।
তল্লাশির সময় মার্টিনের জ্যাকেটের পকেট থেকে পাওয়া যায় রিমোট কন্ট্রোল ভাইব্রেটর। এর পর মার্টিনকে ঘিরে সন্দেহ আরও বাড়ে। তল্লাশি চালানো হয় জেলে আব্রাহামের কুঠুরিতেও।
সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় মোবাইল ফোন, এসডি কার্ড। সেখানে মার্টিনের অন্তর্বাস পরিহিত একাধিক ছবি পাওয়া যায়। আব্রাহামের বালিশের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয় মহিলাদের অন্তর্বাস।
এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছিলেন মার্টিন। পরে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনি। কিন্তু তার পরও তাঁদের সম্পর্ক ছিল।
২০২১ সালের ১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয় মার্টিনকে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, আব্রাহামের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন মার্টিন। আব্রাহামের কথাতেই তাঁকে নিজের অন্তর্বাস পরা ছবি পাঠিয়েছিলেন মার্টিন। শুধু তা-ই নয়, অন্তর্বাসও দিয়েছিলেন আব্রাহামকে।
ছবি এবং অন্তর্বাস পাঠানোর জন্য মার্টিনকে টাকাও দিতেন আব্রাহাম। তদন্তকারীরা জানতে পারেন যে, এ জন্য আব্রাহামের কাছ থেকে মোট ১২ লক্ষ ৬ হাজার ১৬৪ টাকা পেয়েছিলেন মার্টিন।
গ্রেফতারের পর মার্টিনের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। উদ্ধার করা হয়েছিল নগদ ৩ লক্ষ ১ হাজার ৫৪১ টাকা। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু মূল্যবান সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছিল।
উদ্ধার করা হয়েছিল ২টি মোবাইল ফোন। সেই ফোনে একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঘেঁটে তদন্তকারীরা দেখেন যে, মার্টিনের সঙ্গে প্রচুর কথা হত আব্রাহামের। জেলের মধ্যে বন্দির কাছে ফোন রয়েছে, কারারক্ষী হিসাবে সেই তথ্য আড়াল করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে মার্টিনের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় বিচারপর্ব শুরু হয় আদালতে। যিনি এক সময় কারারক্ষী ছিলেন, তিনিই জেলবন্দি হলেন। মার্টিনকে ১৬ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।