পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের টলমল ইনিংসের মাঝেই নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ফারহা খান।
ফারহার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
কে এই ফারহা খান? পাক সংবাদমাধ্যমে ইমরানের খবরের মাঝেও যিনি অনায়াসে শিরোনাম কেড়ে নিয়েছেন।
টুইটার-ফেসবুকের পাতা ছয়লাপ দামি হাতব্যাগ-সহ ফারহার একটি ছবি। আপাতত নেটমাধ্যমে ভাইরাল ফারহা।
পাকিস্তানের বহু বিরোধী নেতা-নেত্রীই ফারহার ওই ছবিটি চালাচালি করেছেন। তাঁদের মধ্যে রোমিনা খুরশিদ আলমও রয়েছেন।
৫ এপ্রিল সেই ছবি টুইট করেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর ওই নেত্রী তথা পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য। ছবির তলায় রোমিনা লিখেছেন, ‘বুশরার ফ্রন্টউওম্যান ফারহা খান, যিনি পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গের ব্যাগটির দাম ৯০,০০০ আমেরিকান ডলার। হ্যাঁ! সেটা ৯০ হাজার আমেরিকান ডলারের!’
ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিমানের আসনে বেশ আয়েশ করে বসে রয়েছেন ফারহা। উজ্জ্বল হলুদ পোশাকের সঙ্গে একই রঙের মানানসই চপ্পল। সঙ্গে রয়েছে একটি বেগুনি রঙের হাতব্যাগ। বিরোধীদের দাবি, সেটির দাম, ৯০,০০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬৮ লক্ষ টাকার বেশি)।
ফারহার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী তথা পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর নেতা মিফতাহ ইসমাইলও। সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর দাবি, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত ফারহা।
পাক সংবাদমাধ্যমে ইমরানের খবরের মাঝেও ফারহার বিরুদ্ধে অভিযোগ ঝড় তুলেছে। এমন এক সময় যখন নিজের গদি বাঁচাতেই ব্যস্ত ইমরান।
গত রবিবার, ৩ এপ্রিল পাক পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিল বিরোধী জোট। তবে ভোটাভুটির আগেই তা খারিজ করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এর পর ইমরানের সুপারিশ মেনে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। যদিও একে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেয় পাক সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে শনিবার আবারও অনাস্থার মুখোমুখি হতে হবে ইমরানকে।
পাক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি বাঁচানো ইমরানের পক্ষে কঠিন বলে মনে করছেন রাজনীতির পণ্ডিতেরা। কারণ, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৩৪২টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭২ জন সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন। তবে রবিবারই অনাস্থা প্রস্তাবের সমর্থনে ছিলেন ১৯৭ জন সদস্য। ফলে বাউন্সি পিচে প্রথম দিকে ধরে ফেললেও উইকেট শেষমেশ বাঁচানো যাবে না বলেই মত অনেকের।
ইমরানের এই বিপত্তিতে মাথাচাড়া দিয়েছে ফারহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব পেশ করার দিনেই নাকি ফারহা দেশ ছেড়ে দুবাই পালিয়েছেন বলে দাবি। এমনকি, তাঁর স্বামী এসসান জামিল গুজ্জর নাকি আগেই আমেরিকার পথে রওনা দিয়েছেন।
পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) সহ-সভাপতি মারিয়ম নওয়াজের দাবি, ইমরান এবং তাঁর তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবির নির্দেশেই দুর্নীতিতে মগ্ন ছিলেন ফারহা।
ফারহার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আধিকারিকদের পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে বদলি বা নিয়োগের বিনিময়ে প্রায় ৩.২ কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। ওই প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রীর উসমান বুজদারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যই নাকি এ ভাবে কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরেছেন ফারহা।
ফারহা শাহজাদি নামে পরিচিত ইমরানের স্ত্রীর এই বান্ধবীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্জাব প্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর চৌধরি সারওয়ার এবং আলিম খান। সম্প্রতি সারওয়ারকে গভর্নর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, ইমরানের পুরনো বন্ধু বলে পরিচিত আলিম।
ইমরানের আমলে নাকি ফারহার সম্পদও চার গুণ বেড়েছে। পাক সংবাদমাধ্যমে দাবি, ২০১৭ সালে ফারহার সম্পদ ছিল পাকিস্তানি টাকায় ২৩১ মিলিয়ন (ভারতীয় মুদ্রায় ৯ কোটি টাকার বেশি)। তবে গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৯৭১ মিলিয়ন (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা)। গত পাঁচ বছরে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ নাকি পাঁচ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে ৭৮ শতাংশ ।
লাহৌর এবং ইসলামাবাদে বিলাসবহুল ভিলা-সহ বিপুল সম্পত্তিও করেছেন বলে ফারহার বিরুদ্ধে রিপোর্টে দাবি। ওই শহরে বিশাল বড় বাড়িও করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমের দাবি।
ফারহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে মুখ না খুললেও একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি ইমরানের দাবি ছিল, ‘‘দেশবাসীকে জানিয়ে রাখা ভাল যে আমার জীবনের আশঙ্কা রয়েছে। (বিরোধীরা) ওরা আমার চরিত্রহননের পরিকল্পনা করছেন। শুধুমাত্র আমার নয়, আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও একই চেষ্টা চলছে।’’