ফাইক জেফরি বলকিয়াহ। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নন, ২৪ বছর বয়সি এই তরুণই নাকি বিশ্বের ধনীতম ফুটবলার।
মেসি, রোনাল্ডো, নেমার বা এমবাপের মতো বিশ্ব ফুটবলে ফাইক অতি পরিচিত নাম নয়। তবে তিনিই এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবলার।
ফাইকের জন্ম ১৯৯৮ সালের ৯ মে। ব্রুনেই রাজপরিবারের সদস্য ফাইক বর্তমানে তাইল্যান্ডের লিগ-১ ক্লাব ‘চোনবুরি’র মিডফিল্ডার।
ব্রুনেইয়ের রাজপরিবারের সদস্য হলেও ফাইকের জন্ম আমেরিকায়। ‘চোনবুরি’র হয়ে খেলা ছাড়াও তিনি ব্রুনেই জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক।
ব্রুনেই এমন একটি দেশ যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল ভান্ডার রয়েছে। সুতরাং, এটি আশ্চর্যের নয় যে, ব্রুনেই রাজপরিবারের একজন সদস্যের কাছে অন্যান্য ধনী ফুটবলারের চেয়ে বেশি সম্পত্তি থাকবে।
ফাইকের বাবা জেফরি বলকিয়াহ ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহর ছোট ভাই। জেফরি তাঁর জমকালো জীবনযাপনের জন্য পরিচিত। তাঁর সংগ্রহে নাকি ২৩০০-রও বেশি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে।
ফাইকের নিজস্ব সম্পত্তির পরিমাণও নেহাত কম নয়। ২০১৮ সালের একটি স্পেনীয় পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাইকের মোট সম্পত্তির মূল্য ২০০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি টাকা)।
অন্য দিকে, মেসির মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা) এবং রোনাল্ডোর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা)। অর্থাৎ, মেসি-রোনাল্ডোর থেকে কয়েক গুণ বেশি সম্পত্তি রয়েছে ফাইকের।
তবে ফাইকের এত পরিমাণ সম্পত্তি তিনি মোটেও ফুটবল খেলে আয় করেননি। তাঁর বেশির ভাগ সম্পত্তিই রাজপরিবার সূত্রে পাওয়া।
সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ হলেন বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম শাসক। তালিকার শীর্ষে রয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৬৭ সালে তিনি ক্ষমতায় আসেন। অনুমান করা হয় হাসানালের সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার।
ফাইকের এক খুড়তুতো ভাই তথা সুলতান হাসানালের দ্বিতীয় পুত্রসন্তান প্রিন্স আব্দুল আজিম ২০২০ সালে মারা যান। আজিম একজন হলিউড প্রযোজক ছিলেন।
ব্রুনেইয়ের এক জন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ফাইকের বাবা জেফরি। উদ্ভট জীবনযাপন এবং খামখেয়ালিপনার জন্য তিনি বিশেষ ভাবে পরিচিত। মাইকেল জ্যাকসনকে একটি ব্যক্তিগত পার্টিতে নাচাগানা করার জন্য কোটি কোটি টাকা দিয়েছিলেন জেফরি।
জেফরির বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনে ব্রুনেই সরকার। শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে সরকারকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেন জেফরি।
রাজপরিবারের সদস্য ফাইক আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর শৈশব কেটেছে ব্রিটেনে। সেখানেই ফুটবলের প্রেমে পড়েন তিনি।
বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়া এএফসি নিউবারি থেকে ক্লাব ফুটবলে অভিষেক ঘটে ফাইকের। বার্কশায়ার দলের হয়ে খেলার সময় তিনি সকলের নজর কেড়েছিলেন।
এর পর ভাগ্যপরীক্ষার জন্য এফসি রিডিং এবং আর্সেনাল ক্লাবের দ্বারস্থ হন ফাইক। ২০১৩ সালে আর্সেনালের অনূর্ধ্ব ১৮ দলের হয়ে তিনি সিঙ্গাপুরে লায়ন সিটি কাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একটি গোলও করেন তিনি।
২০১৪ সালে চেলসির অনূর্ধ্ব ১৮ দলের হয়ে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোনও চুক্তি করেনি চেলসি।
চেলসির মূল দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ দেখে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্টোক সিটিতে একটি ট্রায়ালে অংশ নেন ফাইক। এর পর তিনি লেস্টার সিটির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফাইক সিএস মার্টিমো দলে যোগ দেন। ২০২১-এ যোগ দেন চোনবুরিতে।
মাত্র ২২ বছর বয়সেই ফাইক ব্রুনেই জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক হন। তিনিই দলের একমাত্র খেলোয়াড়, যাঁর শীর্ষ স্তরের ইউরোপীয় ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সম্পত্তির নিরিখে বিশ্বের সব ফুটবলারের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন ফাইক। তবে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি নিজের যোগ্যতায় সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে চান।
ফাইক সমাজমাধ্যমে খুব একটা সক্রিয় নন। মূলত ফুটবল নিয়েই তিনি মেতে থাকেন। বেশির ভাগ সময়ই প্রশিক্ষণ শিবিরের ছবি তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। মাঝেমধ্যে পোষা বাঘের সঙ্গে খুনসুটি করার ছবিও সমাজমাধ্যমে দেন ফাইক।