কেউ দূর কোনও দেশের নির্জন কোনও দ্বীপে গিয়ে বিয়ে করেছেন। কারও বিয়েতে আবার মনোরঞ্জন করে যান পপ তারকা। এ দেশে সঞ্চয়ের একটা বড় অংশ খরচ হয় বিয়েতে। অতিমারি পরবর্তী সময়ে যখন দেশে আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখনও কিন্তু বিয়ের বাজেটে কাটছাঁট হয়নি। উল্টে দিন দিন তা বেড়েছে। সে রকমই কিছু বিয়ের, থুড়ি রূপকথার গল্প রইল এখানে।
২০১৬ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন কর্নাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্দন রেড্ডির মেয়ে। সেই বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। ৩০ একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ। বিজয়নগর সাম্রাজ্যে ঢোকার মুখে যেমন হাতির মূর্তি থাকত, মণ্ডপে ঢোকার মুখেও ছিল তেমনই দু’টি হাতির মূর্তি।
বিয়ের আমন্ত্রণপত্র এসেছিল নীল বাক্সে। তাতে ছিল একটি এলসিডি স্ক্রিন। নিমন্ত্রণপত্রেই খরচ হয়েছিল পাঁচ কোটি টাকা। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৫০ হাজার জন। তিন হাজার নিরাপত্তারক্ষী এবং বাউন্সার ছিলেন সেখানে।
শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর একমাত্র মেয়ে বলে কথা! সেই ঈশা অম্বানীর বিয়েতেও কম জাঁক হয়নি। ২০১৮ সালে হয়েছিল বিয়ে। উদয়পুরে আয়োজন করা হয়েছিল বিয়ের আগের অনুষ্ঠান। তাতে গান গেয়েছিলেন আমেরিকার পপ তারকা বেয়ন্সে।
উদয়পুরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিন্টন, সচিন তেণ্ডুলকর, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, নিক জোনাস, শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তলরা। অতিথিদের নিয়ে উদয়পুর বিমানবন্দরে নেমেছিল শ’খানেক চার্টার্ড বিমান।
বিয়ের বাকি অনুষ্ঠানও ছিল চোখধাঁধানো। বিয়ের দিন বরযাত্রীদের খাবার পরিবেশন করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন থেকে আমির খান।
২০১১ সালে কংগ্রেস নেতা কানওয়ার সিংহ তানওয়ারের ছেলে ললিতের বিয়েও ছিল চোখধাঁধানো। পাত্রী ছিলেন সোহনার প্রাক্তন বিধায়ক সুখবীর সিংহ জৌনাপুরিয়ার মেয়ে যোগিতা। হরিয়ানার জৌনাপুর গ্রামে বসেছিল বিয়ের আসর।
১৫ হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন বিয়েতে। সূত্রের খবর, একটি হেলিকপ্টার উপহার পেয়েছিলেন বর-কনে, যার দাম ২১ কোটি টাকা। সপ্তাহ জুড়ে চলেছিল বিয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন লোকশিল্পীরা।
বাগ্দানে যে সব অতিথি উপস্থিত হয়েছিলেন, তাঁদের ৩০ গ্রাম রুপোর একটি বিস্কুট, একটি সাফারি স্যুটের ছিট এবং ২,১০০ টাকা নগদ উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছিল।
২০১১ সালেই ভারতে এসে নিজের দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন নিউ জ়িল্যান্ডের শিল্পপতি এস রবীন্দ্র। হায়দরাবাদে ছেলে এস রোহিত এবং এস রঞ্জিতের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন এই প্রবাসী ভারতীয়।
তুতো বোন শ্রুতি এবং দিব্যাকে বিয়ে করেছিলেন রোহিত এবং রঞ্জিত। প্ল্যাটিনামের মঙ্গলসূত্র পরিয়ে বিয়ে সেরেছিলেন তাঁরা। বিয়ের সব অনুষ্ঠানে মণীশ মলহোত্রের নকশা করা পোশাক পরেছিলেন দুই কনে।
হায়দরাবাদের জিএমআর গার্ডেনে বসেছিল বিয়ের আসর। উপস্থিত হয়েছিলেন ১৫ হাজার জন। বিয়েতে বাঙালি, পঞ্জাবি, রাজস্থানি রীতি পালন করা হয়েছিল। বিয়ের একটি অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘যোধা-আকবর’ সিনেমা, আরব্য রজনী। গোলাপি মার্সিডিজ়ে চাপিয়ে সারা শহর ঘোরানো হয়েছিল দুই কনেকে।
২০১৮ সালের নিক জোনাসকে বিয়ে করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। জোধপুরের উমেদ প্রাসাদে বসেছিল বিয়ের আসর। সেই বিয়েও ছিল রূপকথার গল্পের মতো। খরচ হয়েছিল প্রায় ১০৫ কোটি টাকা।
হিন্দু এবং খ্রিস্টান, দুই রীতি মেনেই হয়েছিল বিয়ে। গায়েহলুদে প্রিয়ঙ্কা পরেছিলেন আবু জানি-সন্দীপ খোসলার নকশা করা পোশাক। মেহেন্দিতেও তাঁদের নকশা করে পোশাকই পরেছিলেন কনে। আর বিয়েতে পরেছিলেন সব্যসাচীর নকশা করা লাল লেহঙ্গা।
ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি আর অনুষ্কা শর্মার বিয়েতেও কিন্তু কম জাঁকজমক ছিল না। ইটালির তাস্কানিতে বসেছিল বিয়ের আসর। সব্যসাচীর নকশা করা প্যাস্টেল রঙের পোশাক পরেছিলেন বর-কনে। বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৯০ কোটি টাকা।
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৪৪ জন অতিথি। ভারতীয় আর ইটালীয় পদে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়েছিল। পরে মুম্বইতে ফিরে হয়েছিল বিয়ের রিসেপশন।