বলিপাড়ার ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খানের সৎভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে। বাড়ির অমতে বিয়ে করলেও বেশি দিন সংসার টেকেনি। বড় পর্দায় অভিনয় করলেও ধারাবাহিক জগতের চেনা মুখ। সম্প্রতি অভিনেত্রীর অতীত জীবন নিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
নব্বইয়ের দশক থেকে অভিনয় শুরু করেন ইভা গ্রোভার। তামিল ভাষার ‘কাত্তুমরকরণ’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তার পর বহু হিন্দি ছবির পাশাপাশি ভোজপুরি এবং মরাঠি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু ছোট পর্দায় কাজ করেই পরিচিতি গড়ে তোলেন তিনি। সম্প্রতি একটি পডকাস্ট শোয়ে নিজের অতীত নিয়ে মুখ খোলেন ইভা। আমিরের সৎভাইয়ের সঙ্গে তাঁর বৈবাহিক জীবন কত অসহনীয় হয়ে উঠেছিল সে কথা জানান অভিনেত্রী।
আমিরের সৎভাই হায়দার আলি খানের সঙ্গে মাত্র ১৮ দিনের পরিচয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন দু’জনে। তবে এই বিয়েতে মত ছিল না ইভার মায়ের। তাই হায়দারের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন ইভা। কিন্তু সেই সংসার সুখের হয়নি। বিয়ের চার দিন পর বুঝতে পারেন যে, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। তবুও সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন বলে দাবি করেছেন ইভা।
ইভা ভেবেছিলেন যে, সন্তানের জন্ম দিলে তাঁর সংসারে আবার সুখের দিন ফিরে আসবে। বিয়ের দু’বছর পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ইভা। কিন্তু ইভা এবং হায়দারের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছরের সংসারে ইতি টানেন দু’জনে। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
বিচ্ছেদের পর কন্যাসন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আইনি পথে লড়াই করেন ইভা এবং হায়দার। কিন্তু সেই লড়াইয়ে হেরে যান ইভা। হায়দারের বোনের কাছে থাকতেন ইভার কন্যা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ইভা জানান, মেয়ের সঙ্গে নাকি দেখাই করতে দেওয়া হত না ইভাকে। ইভার সঙ্গে দেখা হলে তাঁর কন্যা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলতেন। ১০ বছর নাকি ইভা তাঁর কন্যার মুখ না দেখে দিন কাটিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ভেঙেচুরে গেলেও পেশাগত জীবনে ধীরে ধীরে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন ইভা। ‘রিস্তে’, ‘কোরা কাগজ’, ‘অফিস অফিস’, ‘কুমকুম—এক প্যারা সে বন্ধন’, ‘করিশ্মা কা করিশ্মা’, ‘শরারত’, ‘বড়ে আচ্ছে লগতে হ্যায়’ এবং ‘টশন-এ-ইশ্ক’-এর মতো বহু হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় ইভাকে।
শুধু ছোট পর্দায় নয়, বড় পর্দায়ও কেরিয়ার গড়ে তোলার চেষ্টা করেন ইভা। ‘কৃষ্ণ’, ‘স্মাগলার’, ‘কৃষ্ণ অর্জুন’, ‘শপথ’, ‘আন্টি নম্বর ওয়ান’, ‘ন্যায়দাতা’, ‘মসীহা’র মতো বহু হিন্দি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। মরাঠি, ভোজপুরি এবং তামিল ছবিতেও অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। কিন্তু তাতে আখেরে কোনও লাভ করতে পারেননি ইভা।
পডকাস্ট শোয়ে ইভা জানান, তিনি যখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁর হাত শক্ত করে ধরেছিলেন বলিউডের ‘ভাইজান’ সলমন খান। ইভাকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন সলমন।
২০১১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রেডি’। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন সলমন এবং তাঁর বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় আসিনকে। এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় ইভাকে।
ইভা জানান, বড় পর্দায় কেরিয়ার গড়ে তুলতে ইভাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সলমন। কিন্তু ইভা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এতটাই অশান্ত ছিলেন যে, কেরিয়ারের দিকে নজর দেওয়ার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না তাঁর।
টেলিভিশনের জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস্’-এর সঞ্চালকের ভূমিকায় অধিকাংশ সময় দেখা গিয়েছে সলমনকে। ইভার দাবি, সেই শোয়েও তাঁকে অংশগ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু ইভা তা ফিরিয়ে দেন।
ইভা বলেন, ‘‘সলমন আমায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমি যদি ‘বিগ বস্’-এ অংশগ্রহণ করি তবে ওই শোয়ে যেন বেশি সময় থাকতে পারি সে দিকে খেয়াল রাখবেন সলমন। আমাকে এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আমি তাঁর প্রস্তাব শুনেও ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’’
বর্তমানে আলোর রোশনাই থেকে নিজেকে দূরেই সরিয়ে রেখেছেন ইভা। ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ইয়ারা সিলি সিলি’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। হিন্দি ছবি হলেও এই ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দুই বাঙালি তারকা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং পাওলি দাম।