২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পক্স উপলক্ষে হলিউডের জেমস বন্ড খ্যাত অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেগের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে। আদতেই বর্ণময় জীবন ছিল তাঁর। ৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে নিভে গেল দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে জ্বলা সেই দ্যুতি। ৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। জন্ম থেকে মৃত্যু— জীবনের এই যাত্রাপথে কেমন ছিল রানির কাহিনি, তারই একঝলক রইল এখানে।
১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন ষষ্ঠ জর্জ ও এলিজাবেথ বাওয়েস-লিওনের কন্যা দ্বিতীয় এলিজাবেথ। জর্জ ও এলিজাবেথের প্রথম সন্তান ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে রানির জ্যাঠামশাই অষ্টম এডওয়ার্ডের সিংহাসন ত্যাগের পর রাজা হন রানির বাবা ষষ্ঠ জর্জ।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবাকে হারালেন রানি। শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তার আগে অবশ্য ছোটবেলায় বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই শিক্ষালাভ করেছেন তিনি। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে ফিলিপ মাউন্টব্যাটনের সঙ্গে বিয়ে হয় দ্বিতীয় এলিজাবেথের। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় রানির সন্তান প্রিন্স চার্লসের। দু’বছর পর ১৯৫০ সালের ১৫ অগস্ট জন্ম হয় রানির এক মাত্র কন্যা প্রিন্সেস অ্যানের।
১৯৫৩ সালের জুন মাসে রানির অভিষেক পর্ব সমাপ্ত হয়।
১৯৫৩ সালের নভেম্বরে ছ’মাসের জন্য কমলওয়েলথভুক্ত দেশের সফরে বেরিয়েছিলেন রানি । সে সময় তাঁর দুই সন্তানকে দেশে রেখেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। সন্তানদের অবহেলা করেছেন, এই অভিযোগে সমালোচিত হতে হয়েছিল তাঁকে।
রানি হিসাবে ১৯৫৭ সালে প্রথম আমেরিকা সফর করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই সফরে তাঁর দেখা হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে।
১৯৬১ সালে প্রথম বার ভারত সফর রানির। দ্বিতীয় এলিজাবেথই ছিলেন ব্রিটেনের প্রথম রানি, যিনি স্বাধীন ভারতে আসেন।
ভারত সফরে রানিকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়। দেখা হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে। রামলীলা ময়দানে জনসভা হয়। তাজমহল ঘুরে দেখেন রানি।
১৯৬৫ সালে বাকিংহাম প্রাসাদে ‘বিটলম্যানিয়া’! রক ব্যান্ড ‘বিটলস’-এর সদস্যদের ‘ওবিই’ সম্মান দিলেন রানি।
১৯৬৯ সালে মহাকাশযান ‘অ্যাপোলো ১১’-এ করে প্রথম চাঁদে পাড়ি দিল মানুষ। অভিযান থেকে ফিরে রানির আমন্ত্রণে ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই তিন মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স গেলেন বাকিংহামে।
১৯৮৩ সালে আবারও ভারত সফরে আসেন রানি। সে বার দেখা হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে। সাক্ষাৎ হয় মাদার টেরিজার সঙ্গেও।
১৯৮৬ সালে চিন সফরে যান রানি। সেই প্রথম ব্রিটেনের কোনও শাসক চিনে গেলেন।
১৯৯৬ সালে বাকিংহাম প্যালেসে যান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেলনস ম্যান্ডেলা।
১৯৯৭ সালে আবারও ভারত সফরে আসেন রানি। ভারতের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সফর করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
ওই বছরই ব্রিটেনে ঘটে সেই দুর্ঘটনা। যেখানে মৃত্যু হয় প্রিন্সেস অব ওয়ালস ডায়নার। যাঁর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ব্রিটেনকে। প্রথম বার প্রজাদের ‘মন না বোঝার’ দায়ে বিদ্ধ রানি। সে সময়ে বাকিংহাম ছেড়ে বেশ কিছু দিন বালমোরালে কাটান তিনি।
২০১২ সালে রানির শাসনকালের হীরক জয়ন্তী অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করা হল।
২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্স উপলক্ষে জেমস বন্ড সিরিজের অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেগের সঙ্গে একটি ভিডিয়োয় ‘ক্যামিও রোলে’ দেখা গিয়েছিল রানিকে। প্যারাসুটে দেখে মনে হয়েছিল রানির মতো কেউ নামছেন। দূর থেকে দেখে বোঝাও যাচ্ছিল না, রানি না অন্য কেউ। প্যারাসুট যখন থামে, তখন দেখানো হয় রানিকে। অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন এই ভেবে যে, এই বয়সে রানি প্যারাসুটে করে নামলেন! আসল ঘটনা ছিল অন্য। প্যারাসুটে রানির বেশে ছিলেন এক ব্যক্তি। তার পর যখন প্যারাসুটটি নামে, তখন রানিকে দেখানো হয়। তবে এই ছবি লন্ডন অলিম্পিক্সের এক ‘বৈগ্রহিক’ ছবি হিসাবে বিবেচিত।
২০২১ সালে ৭৩ বছরের সঙ্গী স্বামী ফিলিপকে হারালেন রানি।
২০২২ সালে সিংহাসনে রানির ৭০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করা হল।
তার কিছু দিনের মধ্যেই ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে জীবনাবসান হল রানির। যা এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাল।