চাকরি খুঁজতে নয়, নিজেদের চাকরি বিক্রি করতে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন এক দল কর্মী। পাশাপাশি, বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের অফিস বস্দেরও ‘বিক্রি’র চেষ্টা করছেন তাঁরা!
এই অদ্ভুত কাণ্ড শুরু হয়েছে চিনে। চিনের এক দল কর্মী পুরনো জিনিস বিক্রি হয়, এমন ই-কমার্স সাইটে নিজেদের অফিসের বস্ এবং ম্যানেজারদের বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার সহকর্মীদেরও বিক্রি করতে চাইছেন অনলাইনে।
কিন্তু কেন এমনটা করছেন ওই কর্মীরা? সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অফিসের ‘বিষাক্ত’ পরিবেশ এবং ঊর্ধ্বতনদের ‘অত্যাচারে’ তিতিবিরক্ত হয়ে নিজেদের চাকরি এবং ওই ঊর্ধ্বতনদের অনলাইনে বিক্রি করতে উদ্যত হয়েছেন কর্মীরা।
চিনে এই ঘটনা হইচই ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে, তরুণ পেশাদারদের উপর সৃষ্ট মানসিক চাপ এবং আধুনিক কর্মসংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। আবার এই ঘটনা নিয়ে হাসাহাসিও শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
চিনা ই-কমার্স সাইট আলিবাবার মালিকানাধীন জিয়ানু এমন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যেখানে পুরনো জিনিস বিক্রি হয়।
মূলত ওই প্ল্যাটফর্মেই শুরু হয়েছে অফিসের ঊর্ধ্বতনদের বিক্রির ধুম। কেউ কেউ ‘বিক্রি’ করতে চাইছেন ‘অসহ্য’ সহকর্মীদেরও। প্রতি দিনই উপচে পড়ছে বিজ্ঞাপন।
চিনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর মতে, বিক্রির তালিকায় রয়েছে ‘বিরক্তিকর বস্’, ‘ভয়ঙ্কর বস্’ এবং ‘অসহ্য সহকর্মী’।
এই বিজ্ঞাপনগুলিতে বস্ এবং সহকর্মীদের বিক্রির দাম ধার্য করা হচ্ছে ভারতীয় মুদ্রায় চার লক্ষ থেকে ন’লক্ষের মধ্যে। তবে অনেকে কয়েক হাজার টাকার বিনিময়েও বস্ এবং সহকর্মীদের বিক্রি করতে রাজি হয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিয়ানুতে এক জন নিজের সহকর্মীকে ৯১,৫০০ টাকায় বিক্রির কথা জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। অন্য এক জন ৪৬ হাজার টাকায় সহকর্মীকে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।
তৃতীয় জন আবার নিজের ‘ভয়ঙ্ককর বস্’কে মাত্র ছ’হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতে রাজি হয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞাপনগুলি মজার ছলে করা হলেও অনেকেই কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন। কেউ কেউ অগ্রিম টাকাও পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
অনলাইনে বস্কে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন এমন এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মীকে উদ্ধৃত করে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘আমাকে এক জন টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমি ওই টাকা ফেরত দিয়েছি। এটা আমার বিরক্তি এবং আবেগ প্রকাশের উপায়। আমি আসলে কাউকে বিক্রি করছি না। আমি অন্যদের বিজ্ঞাপন দিতে দেখে নিজেও বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, অফিস এবং ঊর্ধ্বতনদের চাপ এবং কর্মক্ষেত্রে রাজনীতির শিকার হচ্ছেন যে কর্মীরা, তাঁরাই মানসিক চাপ কমাতে এই কাণ্ড ঘটাচ্ছেন।
কেউ কেউ আবার শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে নিছকই মজার ছলে বস্ এবং কর্মচারীদের ‘বিক্রি’র এই পন্থা নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, চিনে তরুণ পেশাদারদের মধ্যে অফিসের কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যেকেই এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের মতো করে লড়াই করছেন। কেউ চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন, কেউ কেউ আবার বস্ ‘বিক্রি’র বিজ্ঞাপন দিয়ে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন।