মেট গালার লাল গালিচা হোক বা শনিবার রাতের কোনও পার্টি, ধনকুবের ইলন মাস্ককে প্রায়ই দেখা যায় তাঁর মায়ের সঙ্গে। ইলনের মতো তাঁর মাকে নিয়েও কৌতূহল রয়েছে। তবে অনেকেই জানেন না ইলনের উত্থানের নেপথ্যে তাঁর মা মায়ে মাস্কের ভূমিকা কতটা!
শুধু তাঁর ছেলের পরিচয়ে পরিচিত নন মায়ে। নিজের যোগ্যতায় কী ভাবে শূন্য থেকে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছেন, তা-ও রূপকথার মতো। পুষ্টিবিদ থেকে মডেল— সব ক্ষেত্রেই স্বনামধন্যা তিনি।
চোখেমুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। মাথার চুলে পাক ধরেছে। এই বয়সেও নিজের সৌন্দর্য ধরে রেখেছেন মায়ে। ইলনের পাশে তিনি যখন হেঁটে যান, তখন দেখে মনে হয় মায়ে তো এখনও ‘ইয়ং’। যদিও তাঁর বয়স সত্তরের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই।
১৯৪৮ সালের ১৯ এপ্রিল কানাডায় জন্মগ্রহণ করেন মায়ে। তাঁর বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তান। ছোট থেকেই বাবা-মায়ের আদরের ছিলেন তিনি। কানাডায় জন্ম হলেও বছর দুই পর পরিবারের সঙ্গে চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। সেখানেই পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা।
১৫ বছর বয়সে মডেলিংয়ে হাতেখড়ি মায়ের। দক্ষিণ আফ্রিকার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ‘মিস সাউথ আফ্রিকা’য় অংশও নিয়েছিলেন তিনি। খেতাব না জিতলেও ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন মায়ে।
মডেলিংয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও সমান মেধাবী ছিলেন ইলনের মা। ডায়েটিক্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তার পর টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুষ্টিবিজ্ঞানে আবারও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ইলনের বাবা ইরল মাস্কের সঙ্গে স্কুলজীবনেই পরিচয় মায়ের। সেই আলাপ ধীরে ধীরে প্রেমে গড়ায়। তার পর বিয়ে। ইরল ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৭০ সালে চার হাত এক হয় তাঁদের।
তবে ইরল এবং মায়ের বৈবাহিক জীবন সুখের ছিল না। মাত্র ন’বছর একসঙ্গে ঘর করেছিলেন দু’জন। তার পরই বিচ্ছেদ। তিন সন্তানকে নিয়ে ১৯৭৯ সালে ইরলের সংসার ছাড়েন মায়ে।
ইলন ছাড়াও মায়ের আরও একটি পুত্র এবং কন্যা রয়েছে। ছেলের নাম কিম্বল মাস্ক এবং মেয়ের নাম টোসকা মাস্ক। দু’জনেই নিজেদের জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত।
কিম্বলও এক জন উদ্যোগপতি। তিনটি খাদ্য সংস্থার মালিক তিনি। এ ছাড়াও ‘বিগ গ্রিন’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থাও রয়েছে কিম্বলের। আর টোসকা বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত। চলচ্চিত্র এবং টিভি শো পরিচালনা এবং প্রযোজনা করেন তিনি।
পুষ্টিবিদ হিসাবে পরিচিত মায়ে। এ ছাড়া তিনি এক জন সফল মডেলও। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মডেল হিসাবে কাজ করেছেন ময়ে।
বিভিন্ন প্রথম সারির সংস্থার বিজ্ঞাপনে দেখা যেত মায়েকে। বিখ্যাত ‘টাইম’ পত্রিকার স্বাস্থ্য সংস্করণের প্রচ্ছদেও শোভা পেয়েছে মায়ের মুখ। এ ছাড়াও কিছু ধারাবাহিক এবং গানের ভিডিয়োতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০২২ সালে মায়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন। সৌজন্যে তাঁর একটি বিকিনি পরিহিত ছবি। ৭৪ বছর বয়েসে সাঁতারের পোশাকে মায়ের সৌন্দর্য অনেকের ঘুম ছুটিয়েছিল।
ইলনের জীবনে তাঁর মায়ের প্রভাব ব্যাপক। ছোট থেকেই নানা বিষয়ে ছেলেকে উৎসাহিত করতেন মায়ে। এক সাক্ষাৎকারে মায়ে জানিয়েছিলেন, মাত্র তিন বছর বয়েসেই ইলনের প্রতিভা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি।
সারা বিশ্বের অনেক নারীর অনুপ্রেরণা মায়ে। অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন তিনি। তাঁর আত্মজীবনী অনেক মানুষকে উৎসাহিত করেছে।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন মায়ে। তিন সন্তানকে একাই বড় করেছেন তিনি। ছেলেমেয়েদের সমস্ত চাহিদা মিটিয়েছেন। শিখিয়েছেন জীবনের লড়াই।