North Korea Elections

ব্যালটে একটাই নাম, ভোট পড়ে প্রায় ১০০ শতাংশ! কী ভাবে নির্বাচন হয় কিমের দেশে?

উত্তর কোরিয়ায় কেউ কখনও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে, প্রচলিত ব্যবস্থার বিপরীতে চলতে চাইলে কঠোর পদক্ষেপ করে প্রশাসন। ক্ষমতার জোরে দমিয়ে দেওয়া হয় জনগণের কণ্ঠ। কিন্তু সেখানেও ভোট হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪ ০৭:৫৪
Share:
০১ ২২

চিনের পূর্ব প্রান্তে জাপান সাগরের কোল ঘেঁষে ছোট্ট দেশ উত্তর কোরিয়া। রাজনৈতিক ভাবে যা প্রায় সারা বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন। কারণ, এই দেশে রয়েছে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। যা বিশ্বে বিরল।

০২ ২২

উত্তর কোরিয়ার প্রশাসক তথা সর্বময় কর্তা কিম জং উন। বংশপরম্পরায় তাঁর পরিবার দেশ শাসন করছে। তাঁর ‘রাজত্বে’ তাঁর বিরুদ্ধে সরব হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। দেশের মানুষ কিমের কথাতেই ওঠেন এবং বসেন।

Advertisement
০৩ ২২

কিমের দেশে কেউ কখনও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে, প্রচলিত ব্যবস্থার বিপরীতে চলতে চাইলে কঠোর পদক্ষেপ করে প্রশাসন। ক্ষমতার জোরে দমিয়ে দেওয়া হয় জনগণের কণ্ঠ। সংবাদমাধ্যমও সরকার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।

০৪ ২২

এ হেন স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাতেও কিন্তু রয়েছে নির্বাচন। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছর অন্তর উত্তর কোরিয়াতেও ভোট হয়। দেশের আইনসভা সুপ্রিম পিপল্‌স অ্যাসেম্বলি (এসপিএ)-এর নিয়ন্ত্রক সেই ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত হন।

০৫ ২২

শুধু তা-ই নয়, উত্তর কোরিয়ার এই এসপিএ নির্বাচনে ভোটার সাধারণ নাগরিকেরাই। দেশের মানুষই প্রতি বার নির্বাচনের দিন লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের নিজের ভোট দেন। এসপিএ নির্বাচনের পদ্ধতিতেই হয় কিছু স্থানীয় স্তরের নির্বাচনও।

০৬ ২২

ভোট দিয়ে শাসক নির্বাচন করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় গণতন্ত্র নেই। তাই সেখানে নির্বাচন হলেও তার পদ্ধতি আর পাঁচটা দেশের চেয়ে আলাদা। সেখানকার মানুষ ভোট দেন, কিন্তু আদৌ কোনও অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না।

০৭ ২২

উত্তর কোরিয়ার জাতীয় আইনসভা এসপিএ-র নির্বাচন হয় প্রতি চার বছর অন্তর। স্থানীয় স্তরের নির্বাচনগুলি হয় পাঁচ বছর পর পর। প্রতি ক্ষেত্রেই ভোট হয় ব্যালট পেপারে।

০৮ ২২

কিমের দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হল ভোটের হার। প্রতি বার প্রত্যেক নির্বাচনে ভোটারদের প্রায় ১০০ শতাংশ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দেশের প্রায় সকলে ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন এবং ভোট দেন।

০৯ ২২

নির্বাচনে ভোটারদের ১০০ শতাংশ উপস্থিতি অবশ্য পুরোটাই স্বতঃস্ফূর্ত নয়। কারণ, উত্তর কোরিয়ার সকলকে বাধ্যতামূলক ভাবে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দেশ রয়েছে সরকারের। কেউ ভোট না দিতে চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়ে থাকে। তাই ভোট না দেওয়ার ঝুঁকি নেন না কেউ।

১০ ২২

২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার এসপিএ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৯৯.৯৭ শতাংশ। দু’-এক জন ভোটার ভোট দিতে পারেননি। প্রতি বছরই শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে কেউ না কেউ ভোটকেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকেন। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় অনেক সময়ে সেই পরিসংখ্যানও ঢাকা পড়ে যায়। উত্তর কোরিয়ায় ভোট নিয়ে প্রচলিত কথা— এখানে ভোটের দিন কেউ মরেন না, কারও অসুখ করে না।

১১ ২২

১৭ বছর এবং তার বেশি বয়সি সকল নাগরিক ভোট দিতে বাধ্য থাকেন উত্তর কোরিয়ায়। প্রশাসন থেকে তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়, সকাল সকাল বুথে পৌঁছে যাওয়ার। সকলেই সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইন দিলে সারা দিনে ভোটের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। সেটাই সরকারের উদ্দেশ্য।

১২ ২২

উত্তর কোরিয়ার ভোটে কোনও গোপনীয়তা নেই। একটি করে ব্যালট পেপার প্রতি ভোটারকে দেওয়া হয়। সেখানে এক জন প্রার্থীরই নাম থাকে। তাঁকেই সকলকে ভোট দিতে হয়। তিনিই নির্বাচিত হন।

১৩ ২২

খাতায়কলমে নিয়ম অনুযায়ী, ভোটারেরা চাইলে ব্যালটে থাকা ওই একটি নামের পাশে কাটা চিহ্ন দিয়ে প্রার্থীর প্রতি নিজের অসম্মতি জানাতে পারেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয় না। ব্যালটে কেউ কলম ছোঁয়ান না। প্রত্যেকেই প্রকাশ্যে ব্যালটটি গ্রহণ করেন এবং নির্দিষ্ট ভোটবাক্সে ফেলে দেন।

১৪ ২২

কেউ এই ভোটপ্রক্রিয়ার অন্যথা করলে বা গোপনে ভোট দিতে চাইলে আলাদা করে তাঁকে চিহ্নিত করে রাখেন প্রশাসনিক কর্মীরা। পরে তাঁকে শাস্তিও পেতে হয়।

১৫ ২২

উত্তর কোরিয়ায় কিন্তু একাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারপার্সন কিম স্বয়ং। সেটাই দেশের বৃহত্তম পার্টি। তবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং চন্ডোয়িস্ট চঙ্গু পার্টিও রয়েছে।

১৬ ২২

খাতায়কলমে তিনটি আলাদা দল হলেও বাস্তবে এই তিন দল আসলে একই। একসঙ্গে এদের জোটের নাম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর রিইউনিফিকেশন অফ কোরিয়া। ভোটের সময়ে ৮৭.৫ শতাংশ কেন্দ্রে ওয়ার্কার্স পার্টি, ৭.৪ শতাংশ কেন্দ্রে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং ৩.২ শতাংশ কেন্দ্রে চন্ডোয়িস্ট চঙ্গু পার্টি প্রার্থী দেয়।

১৭ ২২

উত্তর কোরিয়ায় নির্বাচন একটি উৎসবের মতো। ভোট দিয়ে বেরিয়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে বাধ্যতামূলক ভাবে ভোটারদের উৎসব পালন করতে হয়। সরকারের জয়ধ্বনি দিয়ে নাচতে হয় ভোটারদের।

১৮ ২২

উত্তর কোরিয়ার যে কোনও অনুষ্ঠান কিংবা সরকারি কর্মসূচিতেই এই জয়ধ্বনি বাধ্যতামূলক। সরকারের প্রশংসা করে তার সাফল্যের খুশিতে আনন্দ প্রকাশ করতে হয় দেশের মানুষকে। এটাই সেখানকার নিয়ম।

১৯ ২২

নির্বাচন প্রক্রিয়াকে জনগণনার মাধ্যম হিসাবেই দেখে উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন। ভোটের হার দেখে কারা ভোট দিলেন না চিহ্নিত করা হয়। কেন তাঁরা ভোট দিলেন না, সেই কারণ খুঁজে বার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। উত্তর কোরিয়া থেকে চিনে বা দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। যদিও তা বেশ বিরল।

২০ ২২

স্থানীয় স্তরে বিভিন্ন এলাকায় মেয়র বা গভর্নর নির্বাচনের জন্য স্থানীয় নির্বাচন হয় উত্তর কোরিয়ায়। ১৯৯৯ সাল থেকে তা শুরু হয়েছে। একই পদ্ধতিতে জনগণের ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন। যদিও তাঁদের নির্বাচিত না বলে ‘নিযুক্ত’ বলার পক্ষপাতী অনেকে।

২১ ২২

উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা, কিমের বিভিন্ন নীতির মতোই নানা সময়ে নানা ভাবে সমালোচিত হয়েছে সে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াও। এই ভোটকে ‘দেখানো’ ভোট বলে থাকেন নিন্দকেরা। তাঁদের মতে, এই ধরনের নির্বাচনের আদৌ কোনও অর্থ নেই। নির্বাচন না হলেও সরকারের কোনও সমস্যা হত না।

২২ ২২

তবু প্রতি চার বছর অন্তর জাতীয় আইনসভার নির্বাচন এবং পাঁচ বছর অন্তর স্থানীয় স্তরের নির্বাচনের সাক্ষী থাকে উত্তর কোরিয়া। কিমের কথাই সেখানে ‘বেদবাক্য’। বছরের পর বছর ধরে সেই রেওয়াজ চলছে।

সকল ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement