আট থেকে আশি, ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেনমেন্ট (ডব্লিউডব্লিউই)-এর কুস্তি অনেকেই পছন্দ করেন। ছোটবেলায় টিভিতে ডব্লিউডব্লিউই দেখার সময় অনেকে মনে করে, এক দিন তারও এ রকম সুঠাম শরীর হবে।
বয়স একটু বাড়লে প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই সত্যিই মারামারি হয়? না কি, খালি হাওয়ায় হাত নাড়িয়ে এবং ক্যামেরার নিপুণতায় মিথ্যে মারামারিকে সত্যি বলে চালানো হয়?
তবে সত্যি-মিথ্যে যা-ই হোক, টিভিতে ডব্লিউডব্লিউই চললে হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও চোখ চলে যায় টিভির পর্দায়।
তবে জানেন কি টিভি কাঁপানো এই ডব্লিউডব্লিউই তারকাদের মধ্যে কিছু এমন তারকাও রয়েছেন, যাঁরা টিভির পর্দায় বীরদর্পে মারামারি করার পাশাপাশি বিভিন্ন মারণরোগের সঙ্গেও লড়াই করেছেন?
আট জন এমন ডব্লিউডব্লিউই তারকা আছেন, যাঁরা কঠিন রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, এই মারণরোগ কাটিয়ে সুস্থও হয়ে উঠেছেন এই তারকারা।
এই তারকাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন রোমান রেইন্স। পেশাদার কুস্তিগির হওয়ার আগে রোমান ফুটবল খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ২২ বছর বয়সে লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হন রোমান।
এর পরই জীবন একেবারে পাল্টে যায় রোমানের। ডব্লিউডব্লিউই জগতে ‘দ্য বিগ ডগ’ হিসাবে পরিচিত রোমান একটি সাক্ষাত্কারে জানান, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য মৃত্যুভয় তাঁকে চেপে ধরেছিল। তবে খুব তাড়াতাড়ি মনের জোর ফিরিয়ে আনেন রোমান। শুরু হয় চিকিৎসা।
লিউকেমিয়া থেকে সেরে ওঠার পর তিনি ডব্লিউডব্লিউই-তে যোগ দেন। ২০১৮ সালে রোমান ঘোষণা করেন, তিনি আবার লিউকোমিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এর পর রোমান ডব্লিউডব্লিউই থেকে চার মাসের বিরতি নিয়ে আবার ফেরেন। জানান, তিনি লিউকেমিয়া মুক্ত। রোমান বর্তমানে ডব্লিউডব্লিউই-র এক জন শীর্ষ তারকা।
ডব্লিউডব্লিউই দুনিয়ায় অন্যতম চর্চিত নাম ট্রিপল এইচ। ট্রিপল এইচ-কে শেষ বার ডব্লিউডব্লিউই রিঙে দেখা হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। বিপরীতে ছিলেন র্যান্ডি অরটন।
২০২১ সালের শেষের দিকে ট্রিপল এইচ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়েও বেঁচে ফেরেন তিনি।
এর পরই তিনি ডব্লিউডব্লিউই থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। হৃদ্স্পন্দন ঠিক রাখার জন্য তাঁর বুকে একটি যন্ত্রও লাগানো রয়েছে।
ডব্লিউডব্লিউই ইতিহাসে অন্যতম কিংবদন্তি ব্রেট হার্ট। তিনি ‘দ্য হিটম্যান’ নামেও পরিচিত। ২০১৩ সালে হার্ট জানতে পারেন যে, তাঁর শুক্রাশয়ে ক্যানসার হয়েছে। তবে তিনি এর অনেক দিন আগেই ডব্লিউডব্লিউই থেকে অবসর নিয়েছেন।
২০১৬ সালে ব্রেটের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার করে তাঁর শুক্রাশয়ের পরিবর্তে একটি কৃত্রিম শুক্রাশয় প্রতিস্থাপন করা হয়। ক্যানসার হারিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করেন ব্রেট। এর পর তাঁর ত্বকের ক্যানসারও ধরা পড়ে। তবে ২০২০ সালে ব্রেট ইনস্টাগ্রামে জানান, তিনি সেই মারণ রোগ থেকেও সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
পল উইট ওরফে ‘দ্য বিগ শো’ ছোটবেলায় অ্যাক্রোমেগালিতে ভুগেছেন। প্রাক্তন এই ডব্লিউডব্লিউই তারকার পিটুইটারি গ্রন্থিতে একটি টিউমার ছিল। এই টিউমার অত্যধিক ‘গ্রোথ’ হরমোন তৈরি করে, যা মানুষের শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বড় করে দেয়।
চিকিত্সা না করানো হলে অ্যাক্রোমেগালি প্রাণঘাতী হতে পারে বলেও মনে করা হয়।। আর সেই কারণে, পলকে ১৯ বছর বয়সে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডব্লিউডব্লিউই-র সঙ্গে পলের চুক্তি শেষ হয়। এর পরই তিনি ডব্লিউডব্লিউই ছেড়ে চলে যান। ৫০ বছর বয়সি পলকে এখনও মাঝে মাঝে ডব্লিউডব্লিউই রিঙে দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ সময়ই ধারাভাষ্যকার হিসাবে।
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন কিছু মহিলা ডব্লিউডব্লিউই তারকাও। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মিশেল ম্যাককুল। অবসর গ্রহণের পাঁচ বছর পর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ম্যাককুল জানান যে, তিনি ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ার কারণে ম্যাককুল অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করেন। বেশ কিছু দিন পর তিনি মারণ রোগ পরাজিত করে সুস্থও হয়ে ওঠেন।
২০২২ সালেও তিনি ডব্লিউডব্লিউই-এর একটি ম্যাচে মিকি জেমসের বিপরীতে নামেন। তবে ২০ মিনিট ধুন্ধুমারের পর তিনি মিকির কাছে পরাজিত হন।
অ্যালেক্সা ব্লিস হল ডব্লিউডব্লিউই-র অন্যতম সেরা মহিলা কুস্তিগির। তাঁকে বেশিরভাগ সময়ই ডব্লিউডব্লিউই-র মঞ্চ কাঁপাতে দেখা গিয়েছে। এখন সুস্থ। কিন্তু ১৫ বছর আগে প্রাক্তন এই কুস্তিগির মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন।
১৫ বছর বয়সে তরুণী অ্যালেক্সা হতাশার কবলে পড়েন। এর ফলে খাওয়া কমে গিয়েছিল অ্যালেক্সার। ওজনও উদ্বেগজনক ভাবে কমে যায়। হৃদ্স্পন্দনও কমে প্রতি মিনিটে ২৮-এ নেমে যায়। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন অ্যালেক্সা। তাঁর বাঁচার আশা ক্ষীণ বলেও চিকিৎসকেরা জানান।
পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন অ্যালেক্সা। হতাশা থেকেও বেরিয়ে আসেন তিনি। মন দেন শরীরচর্চায়।
ডব্লিউডব্লিউই দেখেন আর ব্রক লেসনারকে চেনেন না, এমন মানুষ কমই আছে। ২০০০ সালে তিনি পেশাদার কুস্তিগির হিসেবে যাত্রা শুরু করেন।
২০০৯ সালে লেসনার ডাইভার্টিকুলাইটিসে আক্রান্ত হন। পাচনতন্ত্রে সমস্যার কারণে এই রোগ হয়। কখনও কখনও এই রোগ মারণ রোগে পরিণত হয়।
অস্ত্রোপচার না করে শুধু মাত্র ওষুধ খেয়েই লেসনার সুস্থ হয়ে ওঠেন। যদিও প্রায় ১১ দিন তাঁকে মরণবাঁচন পরিস্থিতিতে যুঝতে হয়েছিল। সুস্থ হয়ে উঠে তিনি আবার কুস্তি শুরু করেন।
এই তালিকায় রয়েছে ভারতীয় ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়ন, ‘দ্য গ্রেট খালি’র নামও। বিগ শো-র মতো খালিও অ্যাক্রোমেগালিতে আক্রান্ত হন। ২০১২ সালে ৩৯ বছর বয়সে তিনি পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে এই টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করেন। তবে অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর জীবন সংশয় হয়েছিল।
সৌভাগ্যবশত খালির অস্ত্রোপচার সফল হয়। অস্ত্রোপচার করে খালির শরীর থেকে টিউমার বাদ দেন চিকিৎসকেরা।