পশ্চিম এশিয়ার প্রান্তে যুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে। প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস হামলা করেছে ইজ়রায়েলের উপর। প্রত্যাঘাত করেছে ইজ়রায়েলও।
যুদ্ধের চার দিনে দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন বলে খবর। আহতের সংখ্যা অগুন্তি। মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ, গোলাগুলি এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে দুই শিবিরের মধ্যে।
ইজ়রায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়ে হামাস অনেক সাধারণ নাগরিককে বন্দি করেছে। যুদ্ধবন্দি হিসাবে তাঁদের হেফাজতে রেখেছে হামাস। যুদ্ধে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন পশ্চিমি দেশ।
হামাসের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, বিনা সতর্কতায় ইজ়রায়েল যত বার হামলা চালাবে, তত বার এক জন করে বন্দি নাগরিককে হত্যা করবে +তারা।
ইজ়রায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়তে চলেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের উপরেও। অর্থনীতি সার্বিক ভাবে ধাক্কা খেতে চলেছে। ভারতও ব্যতিক্রম নয়।
পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধের প্রথম এবং প্রাথমিক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে চলেছে তেলের দামে। যুদ্ধের ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাবে। সেখানেই লুকিয়ে আছে ভারতের সমস্যা।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। অপরিশোধিত তেলের একটা বড় অংশ প্রতি বছর ভারত বাইরের দেশের কাছ থেকে কেনে। তেলের দাম বাড়লে তা ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আমদানি করা তেলের উপরেই ভারত নির্ভর করে থাকে। তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়বে। মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে।
ইজ়রায়েল-হামাসের যুদ্ধ ভারতের তেলের বাজারে স্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ যুদ্ধের কারণে পশ্চিম এশিয়া থেকে তেলের জোগান কমে যাবে। চাহিদার সঙ্গে জোগানের ভারসাম্য ব্যাহত হবে।
তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব পড়তে পারে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাতেও। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার বৃদ্ধি করতে পারে। যা সামগ্রিক ভাবে ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধিকে দমিয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত এবং ইজ়রায়েলের পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্কেও যুদ্ধের আঁচ লাগবে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। ইজ়রায়েল ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সঙ্গী। প্রতি বছর অনেক টাকার পণ্য দুই দেশের মধ্যে লেনদেন হয়।
এশিয়ায় ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক সঙ্গী ইজ়রায়েল। বিশ্বের নিরিখে দশম স্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। জল, ওষুধপত্র, টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে লেনদেন চলে।
ভারত থেকে ইজ়রায়েলে রফতানিকৃত মূল উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধাতু, পাথর, রাসায়নিক পদার্থ, জামাকাপড়। প্রতি বছর এই জিনিসগুলি ভারতের কাছ থেকে কেনে ইজ়রায়েল।
ইজ়রায়েল থেকে ভারতে আমদানি করা প্রধান পণ্য অপরিশোধিত তেল। এ ছাড়াও মুক্তো-সহ একাধিক দামি পাথর, রাসায়নিক এবং খনিজ পদার্থ, কৃষিকাজের উপযোগী বিভিন্ন উপাদান, যন্ত্রপাতি ভারত ইজ়রায়েলের কাছ থেকে কেনে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারত থেকে ইজ়রায়েলে মোট ৭৮৯ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে। ইজ়রায়েল থেকে ভারত আমদানি করেছে ২১৩ কোটি ডলারের পণ্য। সব মিলিয়ে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ হাজার কোটির বেশি।
হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে ইজ়রায়েল থেকে আমদানি এবং রফতানি বাধাপ্রাপ্ত হবে। তাতে সংশ্লিষ্ট শিল্প, কৃষি মার খেতে পারে। সার্বিক ভাবে ইজ়রায়েলে যুদ্ধের কারণে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইজ়রায়েলে ভারতের কিছু বিনিয়োগও রয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, টিসিএস, ইনফোসিস, টেক মাহিন্দ্রা, সান ফার্মা, আদানি, উইপ্রোর মতো সংস্থা ইজ়রায়েলে বিনিয়োগ করেছে।
হামাসের আক্রমণের জবাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ইজ়রায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ভারত এই যুদ্ধে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। হামাসের আক্রমণের বিরোধিতা করে এক্স হ্যান্ডেলে মতামত জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।