বাবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব হওয়ার সুবাদে গত কয়েক বছর ধরে তিনি চর্চার আলোকবৃত্তে রয়েছেন। এ বার বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার শীর্ষপদেও বসছেন তিনি। কথা হচ্ছে অমিত শাহের পুত্র জয় শাহকে নিয়ে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জয়।
আইসিসির কনিষ্ঠতম চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৫ বছরের জয়। এখন আইসিসির সদস্যসংখ্যা ১৬। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্বে জয়কে সমর্থন করেছিলেন ১৫ জন সদস্য। শুধু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পিসিবির সমর্থন পাননি বিসিসিআই সচিব।
জয় শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডকে পাশে পেয়েছিলেন। পরে অন্য সদস্য দেশগুলির সমর্থন পেতেও সমস্যা হয়নি তাঁর। সব দেখেশুনে পিসিবি জয়ের বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটেনি। একা হয়ে যাওয়া পিসিবি যেমন জয়কে সমর্থন করেনি, তেমন সরাসরি বিরোধিতাও করেনি। তাদের মৌনতা সম্মতির লক্ষণ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছে। এমনিতেও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, বিসিসিআই এবং পিসিবির সম্পর্ক খারাপ নয়। শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক চাপানউতরের কারণেই বিসিসিআই প্রার্থীকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত। আদতে আড়ালে জয়ের হয়েই প্রচার করেছে পিসিবি। পাশাপাশি, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ-ও মনে করছেন, আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচন নামেই হয়েছে। এ বারের আইসিসির চেয়ারম্যান যে ভারত থেকেই কেউ হবেন, তা অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। নিয়ম মেনে তেমনটাই হয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন এবং ব্যবসার জগতে একটি উল্লেখযোগ্য নামে পরিণত হয়েছেন জয় অমিতভাই শাহ। গুজরাতের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে থেকে কী ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বেসর্বা হয়ে উঠলেন তিনি? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর পরিবার, শিক্ষা এবং কর্মজীবন।
১৯৮৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর গুজরাতে জয়ের জন্ম। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং সোনাল শাহের পুত্র তিনি। জয়ের ছোটবেলা কেটেছে গুজরাতেই। সেখানেই পড়াশোনা করেছেন। আমদাবাদের নিরমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটেক করেন জয়।
ক্রিকেট প্রশাসনে জয়ের কর্মজীবন শুরু হয় ২০০৯ সালে। গুজরাতের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (জিসিএ)-এর সদস্য হন তিনি।
২০১৩ সালে জিসিএর যুগ্ম সচিব হন জয়। আমদাবাদে প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
ক্রিকেট প্রশাসনে জয়ের দখল ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১৫ সালে বিসিসিআইয়ের অর্থ এবং বিপণন (ফিনান্স অ্যান্ড মার্কেটিং) কমিটিতে যোগ দেন।
২০১৯ সালের অক্টোবরে বিসিসিআইয়ের সচিব নির্বাচিত হন জয়। পাঁচ পদাধিকারীর মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন জয়।
২০২২ সালের অক্টোবরে বিসিসিআইয়ের সচিব হিসাবে পুনঃনির্বাচিত হন শাহ-পুত্র।
২০২২ সালে তাঁর আমলেই আইপিএলের মিডিয়া স্বত্ব রেকর্ড ৪৮,৩৯০ কোটি টাকায় বিক্রি হয়। এই চুক্তির পরেই আইপিএল বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে মূল্যবান ক্রীড়া লিগে পরিণত হয়।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় বারের জন্য এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের পদে বসেন জয়। এ বার আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন তিনি। আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।
জয়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ কত, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে অনেকের। মনে করা হয়, প্রায় ১২৪ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে জয়ের।
বিসিসিআইয়ের সচিব হিসাবে যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়া বাবদ নির্দিষ্ট ভাতা পান জয়। আন্তর্জাতিক বৈঠকের জন্য বৈঠকপিছু ৮৪ হাজার টাকা করে পান।
বিসিসিআইয়ে যোগ দেওয়ার আগে টেম্পল এন্টারপ্রাইজ় নামে এক সংস্থার পরিচালক ছিলেন জয়। কুসুম ফিনসার্ভের ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিকও ছিলেন। ক্রিকেট প্রশাসন এবং ব্যবসা উভয় ক্ষেত্রেই জয়ের সাফল্য তাঁকে দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।