তুরস্কে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা ধরা পড়ল উপগ্রহচিত্রে। যেখানে বহুতলের সারি ছিল, কম্পনের ধাক্কায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার পর এখন সেখানে শুধুই ধ্বংসস্তূপ। চারদিকে শুধু কংক্রিটের স্তূপ। শহর, মফস্সল, পাড়া, অলিগলির মানচিত্র এই ধ্বংসলীলায় একেবারে বদলে গিয়েছে। আগে যেখানে শপিং মল ছিল, এখন সেখানে ইট, কাঠ-পাথরের স্তূপ।
সোমবার ৭.৮ তীব্রতায় তুরস্কে ধ্বংসলীলা চালায় ভূমিকম্প। শহরের পর শহর ধরে সেই ধ্বংসলীলা চলেছে। পশ্চিমে আদানা থেকে পূর্বে দিয়ারবাকির, উত্তরে মালাটিয়া থেকে দক্ষিণে হাটয় পর্যন্ত শুধু ধ্বংসের ছবি।
কম্পনের মাত্রা এতটাই জোরালো ছিল যে, তার প্রভাব পড়েছে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া, লেবানন, ইজ়রায়েল, গ্রিস এবং সাইপ্রাসে। এখনও পর্যন্ত তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তুরস্কের কাহরামানমারাস, গাজিয়ানটেপ, দিয়াবাকির শহরে। মধ্য তুরস্কের শহর কাহরামানমারাসে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। এই শহরেই ১ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭ হাজারেরও বেশি শহরবাসী।
তুরস্কের মোট ১০টি প্রদেশে কম্পনে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টে ১৭ মিনিটে কাহরামানমারাস প্রদেশের পাজারিক জেলা ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল।
কাহরামানমারাস ছাড়াও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি হয়েছে গাজিয়ানটেপ প্রদেশ এবং দিয়াবাকিরে। দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের গাজিয়ানটেপে ২০ লক্ষ মানুষের বাস। তাঁদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সিরিয়ার শরণার্থী।
গাজিয়ানটেপের যে শহরগুলিতে ভূমিকম্প তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তার উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। শহরের আগের রূপ এবং কম্পনের পরে যে রূপ ধরা পড়েছে, তাতে বুঝে ওঠাই দায় যে, এখানে আগে বড় বড় বাড়ি, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল এবং বহুতল ছিল।
গাজিয়ানটেপের একটি শহর নুদাগি। কম্পনের পরে এই শহরের চেহারা কী ভাবে বদলে গিয়েছে ভয়ঙ্কর ছবি প্রকাশ্যে এনেছে ম্যাক্সার টেকনোলজিস। এই শহরটি ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি থাকায় ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি বহুগুণে বেড়েছে।
তুরস্কের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, ছোট-বড় মিলিয়ে নুরদাগি শহরের প্রায় ১২ হাজার বাড়ি কম্পনের জেরে মাটিতে মিশে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বহুতলগুলির। বহুতলের জায়গায় এখন শুধু কংক্রিটের ঢিবি চোখে পড়ছে।
গাজিয়ানটেপ প্রদেশের আর একটি শহর ইলাহিয়ে। নুরদাগির পার্শ্ববর্তী এই শহরেও ভূমিকম্পের তাণ্ডবের ছাপ স্পষ্ট। এলাকার পর এলাকা মাটিতে মিশে গিয়েছে। সিটি সেন্টারের কয়েকশো বহুতল ভেঙে পড়েছে।
নুরদাগির সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তা, যেখানে দিন রাত যানবাহনের যাতায়াত চলত, এখন সেই রাস্তাই হয়ে উঠেছে আস্ত একটি হাসপাতাল। কম্পনে আহত মানুষদের বাঁচাতে অনবরত অ্যাম্বুল্যান্স ছোটাছুটি করছে এই রাস্তা দিয়ে। রাস্তার দু’পাশে থাকা বাড়িগুলির অস্তিত্ব মিলিয়ে গিয়েছে কম্পনের জেরে।
প্রচণ্ড ঠান্ডা, তুষারপাত, আশ্রয়ের অভাব, খাবার না পেয়ে দিশাহারা মানুষ। কম্পনের পর থেকে তাই আতঙ্কে গাজিয়ানটেপ ছেড়ে দলে দলে পালিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।