বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতু যাতায়াতের ক্ষেত্রে শুধু যে সাধারণ মানুষের অপরিসীম দুর্দশা ঘুচিয়েছে তা নয়, ঢাকা-যশোহর রুটে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে নির্ভরতাও কমিয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘এই মুহূর্তে’-র প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত পাঁচ মাসে ৪০ শতাংশ যাত্রী কমেছে। আর যাত্রীর অভাবে ইতিমধ্যে ঢাকা-যশোহর রুটে এক ধাক্কায় বিমানের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও কমবে বলেই আশঙ্কা করছেন যশোহর বিমানবন্দরের আধিকারিকরা।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রারম্ভিক সাফল্যের পর পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুর হয়ে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ফোরলেনের কাজ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। অধিগ্রহণ-সহ সব কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের জলসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ঢাক টাইমস-কে বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে কোনও রকম গাফিলতি ও অনিয়ম সহ্য করা যাবে না।’’
গত ২৫ জুন সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল পদ্মা সেতু। তার আগে যশোহর-খুলনা থেকে ঢাকা পৌঁছতে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগত। এর ফলে দ্রুত যাতায়াতের ক্ষেত্রে ঢাকা-যশোহর বিমান পরিষেবার উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ।
যে কারণে এই রুটে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি একাধিক বিমান চালু করে। বাড়তি চাহিদার জন্য বিমানের টিকিট পাওয়া যেমন সহজ ছিল না, তেমনই কখনও-কখনও টিকিটের দাম অনেক বেড়ে যেত।
কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পরেই এই ছবির বদল ঘটেছে। তিন থেকে চার ঘণ্টায় বর্তমানে যশোহর-খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকা পৌঁছনো যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ যাত্রীই বিমান ছেড়ে সড়কপথে যাতায়াত করছেন বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি।
যশোহর বিমানবন্দরের ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম মাসুদ সংবাদমাধ্যম ‘এই মুহূর্তে’ কে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে যশোহর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে বিভিন্ন সংস্থার ১৮টি বিমান চলত। তার মধ্যে ঢাকা ও যশোহরের মধ্যে চলত ১৫টি বিমান। বর্তমানে চলছে মাত্র সাতটি বিমান।
একই সঙ্গে ওই প্রতিবেদনে দাবি, যাত্রীর অভাবে যশোহর-চট্টগ্রাম রুটের বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যশোহর-কক্সবাজার রুটে বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে ফের পরিষেবা চালু হয়েছে। যাত্রী সংখ্যা কমায় ভাড়াও কমিয়েছে বিমান সংস্থাগুলি। আগে ঢাকা-যশোহরের ভাড়া চার হাজারের উপরে থাকত। বর্তমানে তা সাড়ে তিন হাজারে নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন হাসিনা।
প্রথম থেকেই পদ্মা সেতু ঘিরে বাড়তি উন্মাদনা দেখা গিয়েছে ও পার বাংলার মানুষের মধ্যে। সেতুতে রেকর্ড হারে টোলও আদায় হয়েছে। জানা গিয়েছে, টোল বাবদ রোজ গড়ে ২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে পদ্মা সেতুতে।
পদ্মা সেতু চালুর পর নাকি মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিতে গতি এসেছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছিল ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০০৭ সালে। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিকাদারের আয়ের উপর কর ও পণ্যের কর বৃদ্ধি, বাংলাদেশি টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময়ে মূল্যবৃদ্ধি, নদীবাঁধ ভাঙন, ফেরিঘাট স্থানান্তর, সেতুর জন্য যন্ত্রপাতি কেনা ও নকশায় কিছু সংশোধনের জন্য ব্যয় বেড়েছে।
কী কী কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো দরকার, তার একটা তালিকা তৈরি করেছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। বাড়তি যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তার বেশির ভাগটাই খরচ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে যা ব্যয়খাতে যোগ করা হচ্ছে। কিছু কাজ আগামী দিনে সম্পন্ন করা হবে। তার খরচ যোগ করে চূড়ান্ত সংশোধন করা হবে প্রকল্প প্রস্তাব।
টোল আদায়ে যথেষ্ট খুশি বাংলাদেশের সরকার। সে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতু খোলার পর ২৬ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রথম ২০ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকা।
বস্তুত, সেতু খোলার প্রথম দিনই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর থেকে রোজই কোটি টাকার উপরে টোল আদায় হচ্ছে।
সবচেয়ে কম টোল আদায় হয়েছিল এ বারের ইদের দিন। গত ১০ জুলাই পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লক্ষ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা।
এখন পদ্মা সেতুতে প্রতি ঘণ্টায় ১,২০০ গাড়ির টোল আদায় করা হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতি ইনস্টল করার পর এই পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছে প্রশাসন।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ২৪ লাইভ নিউজপেপারের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সিমেন্ট। পদ্মা সেতুর পিলারে ‘মাইক্রো ফাইন’ নামে যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তার বস্তাপ্রতি খরচ ১৫ হাজার টাকা। অস্ট্রেলিয়া থেকে এই সিমেন্ট আনা হয়েছিল।