ল্যামিনেশন পেপারেও ঘাটতি ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানে। পেপারের ঘাটতির কারণে ছাপা যাচ্ছে না নতুন পাসপোর্ট। যার জেরে বিপাকে পড়েছেন বহু পাক নাগরিক।
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেও নতুন পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না তাঁরা।
পাক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্টস (ডিজিআইঅ্যান্ডপি)’ জানিয়েছে, পাসপোর্টে ব্যবহৃত ল্যামিনেশন পেপার ফ্রান্স থেকে আসে। কিন্তু সেই পেপারের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় নতুন পাসপোর্ট তৈরি করা যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের পাসপোর্ট সঙ্কটের কারণে অসুবিধার মুখে পড়েছেন হাজার হাজার পাক নাগরিক। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া পাকিস্তানি পড়ুয়ারা এখনও দেশ ছাড়তে পারেননি।
যে সব নাগরিক দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, তাঁদেরও বিদেশ-ভ্রমণে ছেদ পড়েছে। বিপাকে পড়া পাক নাগরিকরা এই পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তান সরকারের ‘অকর্মণ্যতা’কেই দায়ী করেছেন।
নতুন চাকরি পেয়ে পরিবারকে নিয়ে দুবাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল গুল নামের এক পাকিস্তানি যুবকের। তাঁর বাড়ি পঞ্জাব প্রদেশে।
সংবাদমাধ্যমে গুল বলেন, “আমি কর্মসূত্রে দুবাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছিল। ভাগ্য ফিরতে চলেছে ভেবে আমি এবং আমার পরিবার খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু ডিজিআইঅ্যান্ডপি-র অব্যবস্থাপনার কারণে মনে হচ্ছে আর দুবাই যেতে পারব না। এই দেশেই আমাকে দরিদ্র হিসাবে বাকি জীবন কাটাতে হবে।’’
পেশোয়ারের এক পড়ুয়া হীরা জানান, তাঁর ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁর ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। অক্টোবর মাসেই সে দেশের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল হীরার।
কিন্তু পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় পাকিস্তান ছাড়তে পারেননি তিনি। সেই প্রসঙ্গে হীরা বলেন, ‘‘শুধুমাত্র পাসপোর্ট হাতে পেলাম না বলে আমার বিদেশে পড়তে যাওয়া হল না। সরকারি বিভাগের অকর্মণ্যতার মূল্য আমাকে চোকাতে হল।’’
অন্য দিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেশোয়ারের পাসপোর্ট অফিসের এক জন ঊর্ধ্বতন কর্তা ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’কে জানিয়েছেন যে, তাঁরা আগে দিনে তিন থেকে চার হাজার পাসপোর্ট পাক নাগরিকদের হাতে তুলে দিতেন। সেখানে বর্তমানে মাত্র ১২-১৩টি পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।
ডিজিআইঅ্যান্ডপি পাক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মন্ত্রকের এক মুখপাত্র কাদির ইয়ার টিওয়ানা বলেন, ‘‘ল্যামিনেশন পেপার আমদানি না হওয়ায় যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তার সঙ্গে মোকাবিলা করছে সরকার। খুব শীঘ্রই আবার পাসপোর্ট পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।’’ কেন এই পরিস্থিতি হল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানে এমন সঙ্কট এই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, পাসপোর্ট ছাপানোর টাকা এবং ল্যামিনেশন পেপারের অভাবের কারণে পাসপোর্ট দেওয়া বন্ধ রেখেছিল ডিজিআইঅ্যান্ডপি।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা এখন আর কারও অজানা নয়। দেশটি দীর্ঘ সময় ধরে অর্থনৈতিক টানাপড়েনে জর্জরিত। ইসলামাবাদের মাথায় চেপেছে ঋণের পাহাড়প্রমাণ বোঝা।
প্রসঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছিল কয়েক মাস আগেই। তার পর পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র হয়েছে।
গত কয়েক মাসে পাকিস্তানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল জিনিসপত্রের মূল্য। তবে সেই পরিস্থিতি থেকে খানিকটা বেরিয়ে এসেছে পাকিস্তান। তার মধ্যেই পাক সরকারের টালমাটাল অবস্থাও দেখেছে সারা দেশ। বর্তমানে সে দেশের দায়িত্বে রয়েছে অস্থায়ী তদারকি সরকার।
পাকিস্তানে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিদেশি মুদ্রার খরচে লাগাম টানতে পাকিস্তান তাই আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে বলেও শোনা গিয়েছিল। এর প্রভাব পড়েছে সে দেশের বাজারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি টাকার অভাবে ফ্রান্স থেকে ল্যামিনেশন পেপার আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান? তার জন্যই কি এই নতুন সঙ্কট? তবে পাক সরকারের তরফে এই নিয়ে কিছু খোলসা করা হয়নি।