চারদিকে শুধু বালি আর বালি। মাটির খুব একটা দেখা মেলে না। যে দিকে দু’চোখ যায়, ধু ধু মরুভূমি। তবু দুবাইয়ের সরকার কোটি কোটি টাকার বালি আমদানি করে বিদেশ থেকে। কেন?
দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা তৈরির আগে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বালি আমদানি করেছিল আরব আমিরশাহি সরকার। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছিল সেই বালি। দেশে এত বালি থাকতে বিদেশ থেকে কেন? প্রশ্ন উঠেছিল।
রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, ২০১৪ সালে ৪৫ কোটি ৬০ লক্ষ ডলারের বালি আমদানি করেছিল আরব আমিরশাহি সরকার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা। আর এই এত টন টন বালি আমদানি করা হয়েছে নির্মাণ কাজের জন্য।
মরুভূমির দেশে নির্মাণকাজের জন্য বালি আমদানি কেন? আসলে, নির্মাণকাজের জন্য যে মানের বালি দরকার, তা দুবাইয়ে নেই। সেখানকার বালি খুব মিহি। তা দিয়ে নির্মাণ সম্ভব নয়।
মরুভূমির বালি ক্রমাগত হাওয়ার সঙ্গে উড়ে যায়। এক কণা অন্য কণার সঙ্গে ঘর্ষিত হয়। সে কারণে বালি খুব মিহি হয়। প্রতিটি কণার আকার হয় প্রায় গোল। তাই মরুভূমির বালি দিয়ে নির্মাণ হয় না।
নির্মাণের জন্য প্রয়োজন তুলনায় মোটা বালি। তা পাওয়া যায় নদীখাতে। নদীখাতের বালি খুব একটা ঘর্ষণের মধ্যে দিয়ে যায় না। সে কারণে তা হয় মোটা এবং ছুঁচলো।
বালির আকারের উপর নির্ভর করে তার ব্যবহার। মোটা বালির সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে সিমেন্ট মেশালে তা একে অপরের সঙ্গে আটকে থাকে। নির্মাণ শক্ত হয়। মিহি বালি ঝরে পড়ে যায়।
শুধু নির্মাণ নয়, ইট, কাচ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় বালি। পৃথিবীতে জলের পরেই প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে সব থেকে বেশি ব্যবহার হয় বালি।
পরিসংখ্যান বলছে, গোটা পৃথিবীতে বালি খননকে ঘিরে যে ব্যবসা রয়েছে, তার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি ডলার।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১৪ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর খনন করে যত পদার্থ উত্তোলন করা হয়, তার ৮৫ শতাংশই বালি।
আর এই বালি উত্তোলনের ফলে ক্রমেই বাড়ছে বিপদ। নদীগর্ভে কার্পেটের মতো বিছানো থাকে বালি। ভূগর্ভস্থ জলকে ধরে রাখতে সাহায্য করে এটি।
ক্রমাগত নদীগর্ভ থেকে বালি উত্তোলনের ফলে নদীখাত গভীর হতে থাকে। নদীর গতি বেড়ে গিয়ে খাত এবং দুই পারের ক্ষয় আরও বাড়তে থাকে।
লাগাতার বালি উত্তোলনের কারণে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে টান পড়ে। কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। বাস্তুতন্ত্রেও প্রভাব পড়ে।
বেআইনি ভাবে বালি খননের কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে চিনের সব থেকে বড় মিষ্টি জলের হ্রদ পোয়াং। কেনিয়ায় এই কারণেই বহু গরিব মানুষ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত।
ভারতেও এর প্রভাব পড়েছে। কেরলে পম্পা, মণিমালা, আচানকোভিল থেকে লাগাতার বালি তোলার কারণে নদীগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তরও কমেছে।
উত্তরপ্রদেশে ছোট গণ্ডক, গুরা, রাপ্তি, ঘাগরা নদী থেকেও ক্রমাগত বেআইনি ভাবে তোলা হয়েছে বালি। তার জেরে ভূমিক্ষয় বেড়েছে। বিঘার পর বিঘার জমি অনুর্বর হয়ে পড়ে রয়েছে।
উপকূলবর্তী অঞ্চলে বালি খননের কারণে ঘড়িয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এক এক দেশের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিপন্ন হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি। ছবি: সংগৃহীত।