আমেরিকায় আগামী নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। রিপাবলিকান পদপ্রার্থী হিসাবে সেই নির্বাচনে লড়তে চলেছেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিপরীতে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী আমেরিকার বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
প্রচার পর্বেই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্পই। কোনও ‘মিরাকল’ না হলে নাকি ট্রাম্পই আবার বসতে চলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আসনে।
তবে এ সবের মধ্যেই ট্রাম্পের এক মন্তব্যের জেরে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। শনিবার উইসকনসিনে আয়োজিত এক জনসমাবেশে ডলারের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য রক্ষার জন্য একটি নতুন এবং সাহসী কৌশল ঘোষণা করেছেন তিনি।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সব দেশ ডলার ব্যবহার কম করবে বা ডলারের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব বৃদ্ধি করবে, তিনি ক্ষমতায় আসার পর সে দেশগুলির পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপাবে আমেরিকা।
সরাসরি হুমকির সুরে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘যারা ডলার ব্যবহার কমাবে তারা আর আমাদের সঙ্গে ব্যবসাও করতে পারবে না। কারণ আমরা ওই দেশগুলির পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপাব।’’
জানা গিয়েছে, অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরেই নাকি ট্রাম্প ঘোষণাটি করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া-চিনের মতো দেশ অনেক দিন আগেই ব্যবসার ক্ষেত্রে ডলার নির্ভরতা কমিয়ে ফেলেছে। ভারতের মতো বেশ কয়েকটি দেশও নাকি ডলার নির্ভরতা কমাতে চাইছে। আর সে কারণে ভারতের গলাতেও ট্রাম্পের শুল্ক-খাঁড়া ঝুলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আমেরিকা থেকে যত পণ্য ভারত আমদানি করে, তার থেকে বেশি রফতানি করে।
অর্থাৎ, পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতের মতো দেশের উপর আমেরিকা যদি ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপায় তা হলে চাপে পড়তে পারে নয়াদিল্লি। অর্থনৈতিক ভাবেও চাপে পড়তে পারে ভারত।
ধরে নেওয়া যাক, আমেরিকায় রফতানি করা ভারতের একটি পণ্য এক ডলারে বিক্রি হয়। এখন যদি ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়িত হয়, তা হলে তার দাম হয়ে যাবে দু’ডলার। সে ক্ষেত্রে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় জিনিসপত্র বিক্রির সম্ভাবনাও কমে যাবে। ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়বে ভারত।
তবে এ সবই সম্ভাবনা। অদূর ভবিষ্যতে এমন নীতি বাস্তবায়িত হওয়ার বা ভারতের উপর চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা কম।
কিন্তু এই আবহে প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন ঘোষণা করলেন ট্রাম্প? ট্রাম্পের দাবি, যদি ভবিষ্যতে ডলারের দাম কমে এবং ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রার স্বীকৃতি হারায়, তা হলে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়ে যাবে আমেরিকা।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘ডলার যদি বৈশ্বিক মুদ্রার তকমা হারায়, তা হলে তা আমেরিকার কাছে যুদ্ধ হেরে যাওয়ার সমান হবে। এর ফলে আমরা তৃতীয় বিশ্বের দেশে পরিণত হব। রাশিয়া এবং চিনের এই পরিকল্পনা সফল হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে আমেরিকার অর্থনীতি।’’
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ট্রাম্প আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ডলারের আধিপত্য কায়েম রাখতে রাশিয়ার উপর আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চাপানো নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে দেবেন।
বিশেষজ্ঞেরা এ-ও মনে করছেন, তেমনটা যদি হয়, তা হলে রাশিয়ায় ডলারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। চিনের সঙ্গে রাশিয়ার জোটেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ এমনটাও দাবি করছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফাঁকা হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প। দেশের অর্থনীতি নিয়ে ভাবছেন— এমনটা দেখিয়ে আখেরে নিজের ভোটবাক্স গুছিয়ে নিতে চাইছেন রিপাবলিকান প্রার্থী।
পাশাপাশি অনেকে এ-ও মনে করছেন, যে দেশগুলির উদ্দেশে ট্রাম্পের এই বার্তা, তাদের উপর এই বার্তার প্রভাব খুব একটা পড়ছে না।