জনতার ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছেন। সেই বিধায়কদের মধ্যে কারও কারও সম্পত্তি কোটি কোটি টাকা। কারও আবার সম্পত্তির পরিমাণ অতি সামান্য। কোন বিধায়কের কত সম্পত্তি, সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে একটি সংস্থা। তাতে দেখা গিয়েছে, গোটা দেশের মধ্যে কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তি সব থেকে বেশি। আর বাংলার এক বিধায়কের সম্পত্তি সব থেকে কম।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) নামে একটি সংস্থা দেশের বিধায়কদের সম্পত্তি নিয়ে এই সমীক্ষা করেছে। যদিও সেই সমীক্ষার ফল যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার অনলাইন। বিধায়কেরা নির্বাচনে প্রার্থিপদের মনোনয়ন পেশের সময় যে হলফনামা দিয়েছেন, তাতে উল্লেখ করা সম্পত্তির পরিমাণ দেখে এই তালিকা এডিআরের তৈরি করেছে সংস্থা।
দেশের ২৮টি রাজ্যে এবং দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪০০১ জন বিধায়কের সম্পত্তির উপর সমীক্ষা করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে এডিআর।
গত মে মাসে কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে সরকার গড়েছে কংগ্রেস। উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ডিকে শিবকুমার। সেই শিবকুমারের সম্পত্তির পরিমাণ ১,৪১৩ কোটি টাকা।
দেশের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধনী বিধায়কও কর্নাটকেরই। এডিআরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন কেএইচ পুত্তাস্বামী গৌড়া। তিনি নির্দল বিধায়ক। গৌড়ার সম্পত্তির পরিমাণ ১,২৬৭ কোটি টাকা।
দেশের ধনী বিধায়কদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন প্রিয় কৃষ্ণ। তিনি কংগ্রেস বিধায়ক। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১,১৫৬ কোটি টাকা।
চার নম্বরে রয়েছেন টিডিপির এন চন্দ্রবাবু নায়ডু। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৬৬৮ কোটি টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশের কুপ্পম থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
ধনী বিধায়কদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন জয়ন্তীভাই সোমভাই পটেল। গুজরাতের মানসার বিধায়ক তিনি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৬৬১ কোটি টাকা।
ষষ্ঠ স্থানে কর্নাটকের বিধায়ক সুরেশ বিএস। কংগ্রেস বিধায়কের সম্পত্তির পরিমাণ ৬৪৮ কোটি টাকা।
সপ্তম স্থানে ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডি। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা।
অষ্টম স্থানে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের ঘাটকোপার পূর্বের বিধায়ক পরাগ শাহ। বিজেপি বিধায়কের সম্পত্তির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা।
নবম স্থানে রয়েছেন কংগ্রেসের টিএস বাবা। ছত্তীসগঢ়ের অম্বিকাপুরের বিধায়ক তিনি। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা।
দশম স্থানে মহারাষ্ট্রের আর এক বিজেপি বিধায়ক। তাঁর নাম মঙ্গলপ্রভাত লোধা। এই বিধায়কের সম্পত্তির পরিমাণ ৪৪১ কোটি টাকা।
দেশে বিধায়কদের মধ্যে সব থেকে কম সম্পত্তি রয়েছে বাংলার নির্মলকুমার ধারার। তিনি ইন্দাসের বিজেপি বিধায়ক।
দেশে সব থেকে কম সম্পত্তি রয়েছে, এমন ১০ জন বিধায়কের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে নির্মল ছাড়াও রয়েছেন বাংলার আরও এক বিধায়ক। তাঁর নাম পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। তিনি নবদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার ৪২৩ টাকা।
গোটা দেশে মোট যত জন বিধায়ক রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ১৩.৬৩ কোটি টাকা।
এডিআরের রিপোর্ট বলছে, যে বিধায়কদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা রয়েছে, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ, যাঁদের নামে অপরাধের মামলা নেই, তাঁদের থেকে বেশি। যে বিধায়কদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা রয়েছে, তাঁদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ১৬.৩৬ কোটি টাকা। যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা নেই, সেই বিধায়কদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ১১.৪৫ কোটি টাকা।
দেশের ধনী বিধায়কদের তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে চার জন কংগ্রেসের। তিন জন বিজেপির। শীর্ষে রয়েছেন কংগ্রেসের শিবকুমার। সেই নিয়ে একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছেন দুই দলের নেতারা।
শিবকুমার জানিয়েছেন, তিনি দেশের ধনীতম ব্যক্তি নন, তবে গরিবও নন। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে এই সম্পত্তি অর্জন করেছি। এক জনের নামেই রয়েছে এই সম্পত্তি। আমি ধনীতম নই, গরিবও নই।’’
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক রিজওয়ান আরশাদ বলেন, ‘‘শিবকুমার এক জন ব্যবসায়ী। এতে সমস্যা কোথায়? বিজেপি বিধায়কদের বিষয়টিও দেখুন, বিশেষত খনি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যাঁরা।’’
বিজেপি যদিও পাল্টা কটাক্ষ করেছে কংগ্রেসকেই। কর্নাটকের বিজেপি নেতা সুরেশ কুমার বলেন, ‘‘খনি দুর্নীতিতে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের ন্যায়বিচার হয়েছে। কংগ্রেস আসলে ধনীদেরই ভালবাসে।’’