কঠিন বিষয় সহজ করে বুঝিয়ে দেন তিনি। আর তা করেই ভারতে ধনী ইউটিউবারদের তালিকায় নাম উঠেছে তাঁর। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে হতবাক হতে বাধ্য। তিনি দিলরাজ সিংহ রাওয়াত।
দিলরাজ সমাজমাধ্যমে ‘মিস্টার ইন্ডিয়ান হ্যাকার’ বলে পরিচিত। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় তিন কোটি ২৭ লক্ষ। অন্য ইউটিউবারদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে।
বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় নিয়ে ভিডিয়ো তৈরি করেন দিলরাজ। কঠিন বিষয় সহজ করে বুঝিয়ে দেন। সে কারণেই তাঁর ভিডিয়োর এত জনপ্রিয়তা।
২০১২ সালে ইউটিউবে নিজের চ্যানেল খোলেন দিলরাজ। সেই থেকে পথচলা শুরু।
প্রথম দিকে নিজের বেড়ানোর ভিডিয়ো করে পোস্ট করতেন দিলরাজ। সেই ভিডিয়ো ধীরে ধীরে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বেশ কিছু পরীক্ষামূলক বিষয় নিয়েও ভিডিয়ো করতেন তিনি।
ক্রমে ভিডিয়োর বিষয় পরিবর্তন করেন দিলরাজ। এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি নিয়ে ভিডিয়ো করেন। কিছু কিছু জটিল জিনিস ঘরে তৈরির পাঠও দেন তিনি। সহজ ভাষায় সবটা বুঝিয়ে দেন। আর তাতেই তাঁর জনপ্রিয়তা।
যেমন কী ভাবে লাউড স্পিকার তৈরি করবেন, কী ভাবে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্ক তৈরি করবেন, হাতে করে শিখিয়ে দেন দিলরাজ। সে কারণে ভিডিয়োগুলির ভিউ এত বেশি।
রোজের সমস্যা কী ভাবে সমাধান করা যায়, কী ভাবে বিজ্ঞানের ব্যবহার দিয়ে জীবনযাপন আরও উন্নত করা যায়, তা দর্শকদের শেখানোই দিলরাজের উদ্দেশ্য।
দিলরাজের এক-একটি ভিডিয়ো প্রায় ৫০০ কোটি বার দেখা হয়। রিপোর্ট বলছে, এই ইউটিউবে ভিডিয়ো তৈরি করে দিলরাজ আয় করেছেন প্রায় ২০ লক্ষ আমেরিকার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
শুধু ইউটিউব থেকে রোজগার নয়, নিজের ভিডিয়োর জন্য প্রায়ই বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডের সঙ্গে হাত মেলান দিলরাজ। নিজের ভিডিয়োতে সে সব পণ্যের বিজ্ঞাপন করেন। আর তা করেই বাড়তি রোজগারও করেন এই তরুণ ইউটিউবার।
মাঝেমধ্যে অন্য ইউটিউবারদের সঙ্গেও ভিডিয়ো তৈরি করে পোস্ট করেন দিলরাজ। তার ফলে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে নিজের অনুগামীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও করেন তিনি সমাজমাধ্যমে। কখনও আবার অনুগামীদের সঙ্গে দেখা করেন। তার পর সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেন।
দিলরাজের জন্ম রাজস্থানে অজমেরের ছোট এক গ্রামে। ১৯৯৬ সালে। পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। বাবা ছিলেন কৃষক। তাই ছোট থেকেই অনেক কাজ নিজের হাতে করতেন দিলরাজ। দৈনিক সমস্যার সমাধানও নিজেকেই করতে হত। সেই থেকেই শেখা। পরবর্তী কালে তা দিয়েই তৈরি করেন ভিডিয়ো।
ছোট থেকে বিজ্ঞান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে দিলরাজের আগ্রহ ছিল খুব বেশি। সব কিছু নিয়ে অনেক প্রশ্ন করতেন। নিজে নিজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। সেই স্বভাবও তাঁকে ‘মিস্টার ইন্ডিয়ান হ্যাকার’ হতে সাহায্য করেছে।
স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন দিলরাজ। কিন্তু তার পর আর পড়াশোনা করেননি। একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার উপর তাঁর আস্থা ছিল না। তিনি শিখতে চাইতেন। ডিগ্রি অর্জন তাঁর লক্ষ্য ছিল না।
২০১২ সালে নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলেন। এক দিন হঠাৎই ক্রিয়েট চ্যানেল বাটনে ক্লিক করেন। আর তার ফলে চ্যানেল তৈরি হয়। এর পর ধীরে ধীরে ভিডিয়ো তৈরি করে পোস্টও করতে থাকেন তিনি। কিন্তু তা প্রায় কেউই দেখতেন না।
দিলরাজ ভাবতে শুরু করেন, কী করলে দেখবেন দর্শক। এর পর স্কুলের গবেষণাগারে যে সব গবেষণা করতেন, সে সবই দেখাতে শুরু করেন দিলরাজ। ক্রমে হাজার ভিউ হয় তাঁর ভিডিয়োয়। চাবি ছাড়া কী ভাবে তালা খুলতে হয়, সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন তিনি, যা দারুণ জনপ্রিয় হয়।
২০১৬ সালে সেই চ্যানেল থেকে প্রথম বার রোজগার করেছিলেন ১০ হাজার টাকা। বাবা-মায়ের হাতে সেই টাকা তুলে দেন। তাঁদের বোঝান, ইউটিউবের চ্যানেলে ভিডিয়ো পোস্ট করেও টাকা রোজগার হতে পারে।
এর পর ক্রমেই বাড়তে থাকে রোজগার। তবে সমস্যাও তৈরি হয়। দর্শকদের তাঁর থেকে প্রত্যাশা কর্মেই বাড়তে থাকে। আর নিত্যনতুন চিন্তাভাবনা তৈরি করে নতুন ভিডিয়ো তৈরি করা সহজ কাজ নয়। দিলরাজের সব ভিডিয়োতে যেহেতু পরীক্ষা-নিরীক্ষা জড়িয়ে থাকে, তাই খরচও হয় অনেক বেশি।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ভিডিয়ো তৈরির জন্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করেন তিনি। আর আয়? অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা। এমনটাই বলছে রিপোর্ট।
দিলরাজের অন্যতম শখ গাড়ি। হুন্ডাই ভারনা, ওপেল কোরসা, মাহিন্দ্রা বোলেরো, সুইফট ডিজায়ার-সহ একাধিক গাড়ি রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট, সুজ়ুকি হায়াবুলা-সহ একাধিক বাইকও রয়েছে। বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে জীবনে থিতু হয়েছেন তিনি। তবে দৌড় এখনই থামাতে চান না। ভবিষ্যতে নিজের চ্যানেলে আরও পরীক্ষামূলক ভিডিয়ো পোস্টই লক্ষ্য দিলরাজের।