ওষুধের ব্যবসা মন্দ চলছিল না। সারা দেশেই তাঁর সংস্থা ওষুধের জোগান দিত। কখনও কখনও ওষুধ যেত বিদেশেও। কিন্তু করোনা অতিমারির একটা বছর বদলে দিল দিলীপের জীবন।
দিলীপ সুরানা দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ী। তিনি জনপ্রিয় একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার চেয়ারম্যান। দেশে ওষুধের ব্যবসায় এই সংস্থার নাম উঠে আসে প্রথম সারিতেই।
দিলীপের সংস্থা মূলত কার্ডিয়াক ডায়াবিটিসের জন্য ওষুধ প্রস্তুত করে থাকে। বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যথার ওষুধও তৈরি করে এই সংস্থা।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বেঙ্গালুরুর এই ওষুধের সংস্থার বার্ষিক আয় ৪ হাজার কোটি টাকা। আয়ের ৬০ শতাংশই আসে দেশীয় বাজার থেকে। অর্থাৎ, দেশেই সংস্থার রমরমা।
আর পাঁচ জন ছাপোষা মধ্যবিত্তের মতোই কেটেছে দিলীপের ছেলেবেলা। তাঁর বাবা জিসি সুরানার হাত ধরে ওষুধের সংস্থার সূচনা। তখন তার এত জনপ্রিয়তা হয়নি। ব্যবসাও দেশব্যাপী প্রসার লাভ করেনি।
বেঙ্গালুরুতে একটি ছোট ভাড়াবাড়িতে থাকতেন সুরানারা। জীবন থেকে প্রায় সব রকম বিলাসের বাহুল্যই বর্জন করেছিলেন দিলীপের বাবা। তাঁর এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ব্যবসার প্রসার। তাই বাড়তি খরচ না করে মন দিয়েছিলেন পরিশ্রমে।
মাত্র পাঁচটি ওষুধ নিয়ে ১৯৭৩ সালে সংস্থার পথ চলা শুরু হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে ব্যবসায় যুক্ত হন দিলীপ। তাঁর হাত ধরেই এই ওষুধের কোম্পানি দেশব্যাপী প্রচার এবং প্রচার লাভ করে।
বছর কুড়ি আগেও ভাড়াবাড়িতে থেকেছেন দিলীপ। এখন তিনি বেঙ্গালুরুর অন্যতম দামি বাংলোটির মালিক। ৬৬ কোটি টাকা দিয়ে সম্প্রতি তিনি ওই বাড়ি কিনেছেন।
বেঙ্গালুরুর প্রাণকেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে দিলীপের বাড়িটি বিলাসিতায় মোড়া। ছেলেবেলায় যে বিলাসিতার স্বাদ তিনি পাননি, ব্যবসার সাফল্যে তা উসুল করে নিয়েছেন।
মোট ১২ হাজার বর্গফুটের জমি কিনেছেন দিলীপ। শহরের অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথমের সারিতেই রয়েছেন তিনি। এই সাফল্যের চাবিকাঠি কিন্তু একটি ছোট্ট ট্যাবলেট।
জ্বর হোক বা মাথাব্যথা, প্যারাসিটামলের উপর সাধারণ রোগীর অগাধ ভরসা। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার আগেই এই ওষুধ খেয়ে নিশ্চিন্ত হন অনেকে।
এই প্যারাসিটামলই দিলীপের সাফল্যের গোপন রহস্য। করোনা অতিমারির সময় এই ট্যাবলেটটিই তাঁকে কোটি কোটি টাকা এনে দিয়েছে। ফুলেফেঁপে উঠেছে ব্যবসা।
পরিসংখ্যান বলছে, করোনা অতিমারি চলাকালীন হু হু করে বিকিয়েছে প্যারাসিটামল। সারা দেশে এই ট্যাবলেটের জোগান দিয়েছে দিলীপের সংস্থা। শুধু ২০২০ সালেই আয় হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
দিলীপ জানিয়েছেন, অতিমারির আগে বছরে এই ট্যাবলেটের সাড়ে ৭ কোটি পাতা তাঁরা বিক্রি করতেন। অতিমারির সময় সকলে জ্বর, সর্দি-কাশির মুখে চোখ বন্ধ করে প্যারাসিটামল খেয়েছেন। ফলে বিক্রি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।
প্যারাসিটামলের এই রমরমা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। দিলীপের সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নাকি চিকিৎসকদের ঘুষ দিয়ে এই ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ সকলকে দিতে বলেছিলেন। তাই একটি ট্যাবলেটের এত বিক্রি।
বিতর্কের মুখে সরকার এই প্যারাসিটামল নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। ট্যাবলেটের দামও বেড়ে গিয়েছিল অনেকখানি। কিন্তু তত দিনে দিলীপের পর্যাপ্ত লক্ষ্মীলাভ হয়ে গিয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দিলীপের সংস্থার লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪৪ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বের ৫০টি দেশে তাঁদের ব্যবসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ১৭টি কারখানায় তাদের ওষুধ তৈরি হয়।