মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই চলল হত্যালীলা। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা (অজিত পওয়ার গোষ্ঠী) বাবা সিদ্দিকিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। শনিবার নির্মল নগরে পুত্রের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময়ই তার শরীরে পর পর গুলি লাগে। গাড়িতে ওঠার সুযোগ পাননি বাবা।
গুলি লেগে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন সিদ্দিকি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
বান্দ্রার (পূর্ব) নির্মল নগরে কোলগেট মাঠের কাছে তাঁর পুত্র বিধায়ক জিশান সিদ্দিকির অফিসের বাইরে এনসিপি নেতাকে লক্ষ্য করে দু’-তিন জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি দুই-তিন রাউন্ড গুলি চালায় বলে জানা গিয়েছে।
মুম্বই পুলিশের দাবি, মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতার (অজিত পওয়ার গোষ্ঠী) খুনের সঙ্গে গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোইয়ের গোষ্ঠী যুক্ত। রবিবার সেই খুনের দায় স্বীকার করে নিয়েছে বিশ্নোই গ্যাং। দলের এক সদস্য সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে দাবি করেছেন, সলমনে সঙ্গে বাবার সুসম্পর্কই এই হত্যার কারণ।
ওই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, বাবা সিদ্দিকি এক সময় দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সলমন খান বা দাউদকে যাঁরা সাহায্য করেন, তাঁদের সাবধান করা হয়েছে ওই পোস্টে।
তবে কি সলমনের সঙ্গে বন্ধুত্ব-ঘনিষ্ঠতার মাসুল নিজের প্রাণের বিনিময়ে দিতে হল বাবা সিদ্দিকিকে?
যাঁর মৃত্যু নিয়ে এত হইচই, সেই সিদ্দিকি আদতে বিহারের বাসিন্দা। কিশোর বয়সেই রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। সত্তরের দশকে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন থেকে মূলধারার রাজনীতিতে এসেছিলেন সিদ্দিকি। কংগ্রেসের ছাত্র শাখা ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ায় যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় সিদ্দিকির।
এর পর তিনি মুম্বইয়ে চলে আসেন। প্রথমে মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে কর্পোরেটর হিসাবে নির্বাচিত হন।
১৯৯৯ সালে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে দাঁড়ান কংগ্রেসের টিকিটে। জয়ী হন বান্দ্রা এলাকার এই নেতা। এর পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিন বার ভোটে জিতেছেন। তবে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে বান্দ্রা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে হেরে যান সিদ্দিকি।
গত ফেব্রুয়ারিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ত্যাগ করেন সিদ্দিকি। যোগ দেন অজিত পওয়ারের শিবিরে। তবে তার আগে প্রায় পাঁচ দশক কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন সিদ্দিকি।
সিদ্দিকের ছেলে জিশান, মুম্বইয়ের বান্দ্রা (পূর্ব) বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক। দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে অগস্টে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
বাবা সিদ্দিকি কেবল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবেই নয়, বলিউডের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা ও তারকাদের ভিড়ে অবাধ গতির জন্য বেশি খ্যাত ছিলেন। তাঁর ডাকে এককথায় হাজির হত প্রায় গোটা বলিউড।
প্রতি বছর ইফতারে পার্টির আয়োজন করতেন বাবা সিদ্দিকি। চাঁদের হাট বসত সেই পার্টিতে। রাজনীতির দুনিয়ার মানুষ হলেও বলিউডের সঙ্গে তাঁর সখ্য বার বার ধরা পড়েছে।
বাবা সিদ্দিকির সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক সলমনের। বাবা সিদ্দিকির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে শুটিং ছেড়ে তড়িঘড়ি লীলাবতী হাসপাতালে পৌঁছন ভাইজান। তাঁর দেওয়া পার্টিতেই শাহরুখের সঙ্গে বিবাদ মিটমাট হয়েছিল সলমনের। বি-টাউনে প্রায়ই কান্ডারির ভূমিকা পালন করে এসেছেন বাবা সিদ্দিকি।
পুরনো স্মৃতি ঘাঁটলে পাওয়া যাবে, ক্যাটরিনা কইফের জন্মদিনের পার্টিতে তর্কে জড়িয়েছিলেন বলিউডের দুই খান, শাহরুখ ও সলমন। তার পর থেকে দুজনের ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে বলিউড ভাগ হয়ে যায় দুই খান শিবিরে।
এই অবস্থায় দুই খানকে মেলানোর জন্য আসরে নামেন সিদ্দিকি। বাবা সিদ্দিকির উদ্যোগে ফের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সলমন ও শাহরুখের। ২০১৩ সালে তাঁর দেওয়া এক পার্টিতে দুই খানের বন্ধুত্বে জোড়া লাগান বাবা সিদ্দিকি। একসঙ্গে কাজ করাও শুরু করেন দু’জনে।
সিদ্দিকির মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম কর্নেল সিংহ এবং ধর্মরাজ কশ্যপ। এক জন উত্তরপ্রদেশ এবং এক জন হরিয়ানার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে দু’জনই স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁরা বিশ্নোই গ্যাংয়ের সদস্য।
সলমনের সঙ্গে বিশ্নোই গ্যাংয়ের বিবাদ সর্বজনবিদিত ও তা দীর্ঘ দিনের। সিদ্দিকি খুনের সঙ্গে সেই বিবাদের সম্পর্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।